1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বৈষম্যহীন, শোষনহীন সমাজ ব্যবস্থা চেয়েছিলাম'

৩ নভেম্বর ২০১১

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আনোয়ারুল আজিম৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে খালি হাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাস দখলের জন্য ছুটেছিলেন তিনি৷ পরবর্তীতে অস্ত্র সংগ্রহ এবং প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষে শত্রুনিধন শুরু করেন এই বীর যোদ্ধা৷

https://p.dw.com/p/134M4
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অক্ষত রাখতে তুলে ধরা হচ্ছে বীর যোদ্ধাদের কাহিনীছবি: AP

রাজনীতিবিদ থেকে মুক্তিযোদ্ধা

একাত্তরে নাজিরহাট কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি ছিলেন আনোয়ারুল আজিম৷ বাংলাদেশের তখনকার পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন তিনি৷ যুদ্ধ শুরুর বহু আগেই নিজের এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য সেনা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন আজিম৷ তিনি জানতেন স্বাধীনতার জন্য লড়াই অনিবার্য৷ তাই, প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল সত্তর সাল থেকেই৷

২৫শে মার্চ গভীর রাতে পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে৷ আনোয়ারুল আজিমসহ কয়েক হাজার মানুষ সে রাতে চট্টগ্রাম সেনানিবাস অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন৷ কোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জাম ছাড়াই সেনানিবাস দখলের চিন্তা করেছিলেন তাঁরা৷ সেটা অবশ্য সম্ভব হয়নি৷

ভারতে প্রশিক্ষণ

পাক হানাদাররা চট্টগ্রাম দখল করে নিলে পিছু হটতে বাধ্য হন আজিমরা৷ তখন অল্প কিছুদিনের জন্য ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন তিনি৷ সেসময় গেরিলা যোদ্ধা সংগ্রহের কাজ করেন আজিম৷ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় অনেকের জন্য সেনা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেন তিনি৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আজিম বলেন, ‘‘ভারতের হরিনাতে আমরা প্রথমে অবস্থান গ্রহণ করি৷ এরপর আমাদের ছেলেদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাই''৷

চোরাগোপ্তা হামলা

মে-জুন মাসে দেশে ফেরেন আজিম৷ শুরু করেন লড়াই৷ একাত্তরের অনেক স্মৃতি তাঁর ভাণ্ডারে আজও জমে আছে৷ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানিরা যুদ্ধের মাঝেই বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে বলে দাবি করতে চেয়েছিল৷ এজন্য আমরা আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে হাটহাজারি, ফটিকছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় একসঙ্গে আক্রমণ করি৷ নাজিরহাট কলেজে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্প ছিল৷ দূর থেকে সেদিকে গুলিবর্ষণ করেছি৷ বিআরটিসির বাসে হামলা চালিয়েছি৷ সেসময় নাজিরহাট রেললাইনও বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম আমরা৷''

পরবর্তীতে অবশ্য আবারো ভারতে যেতে হয়েছিল আজিমকে৷ সেবার ‘লীডারশিপ' ট্রেনিং গ্রহণ করেন তিনি৷ এরপর দেশে ফেরেন হাজারখানেক মুক্তি সেনাকে সঙ্গে নিয়ে৷

সম্মুখ যুদ্ধ

একাত্তরে একাধিকবার শত্রুসেনার মুখোমুখি হয়েছেন আজিম৷ সফলতার সঙ্গে রুখে দিয়েছেন পাকবাহিনীকে, তাদের মিত্রশক্তিকে৷ ফটিকছড়ি, হাটাহাজারি এলাকা শত্রুর হাত থেকে রক্ষায় অত্যন্ত সচেষ্ট ছিলেন আনোয়ারুল আজিম৷ রামগড় এলাকার এক যুদ্ধের কথা এখনো বিশেষভাবে মনে আছে তাঁর৷ তিনি বলেন, ‘‘সীমান্ত থেকে যাতে পাঞ্জাবির পালাতে না পারে, সেজন্য শান্তিরহাট এলাকায় আমরা অ্যামবুশ করি৷ সেখানে বহু হতাহত হয়৷ আমরা বেশ কয়েকজন পাঞ্জাবীকে গ্রেপ্তার করতেও সক্ষম হই৷''

হতাশ আজিম

বর্তমানে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর বেশ খানিকটা হতাশা প্রকাশ করলেন আনোয়ারুল আজিম৷ তিনি বলেন, ‘‘যেই আশা বা আকাঙ্খা নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম, সেটা এখনো পূরণ হয়নি৷ তিনি বলেন, আশাটা ছিল বৈষম্যহীন, শোষনহীন একটা সমাজ ব্যবস্থা, যেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য থাকবে না৷ যেখানে আমরা নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারবো৷ সবমিলিয়ে একটা সুখীসমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাবো৷''

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ