ভারতীয় রেলের বেজায় দুর্দিন!
৩১ জুলাই ২০১৭ট্রেনে পরিবেশিত খাবার মানুষের খাওয়ার অযোগ্য! অপরিশ্রুত জল দিয়ে দিব্বি চলছে রান্না৷ চলন্ত ট্রেনে রান্না করা খাবার ঢেকে রাখার কোনো ব্যবস্থাই নেই৷ খোলা আবর্জনার পাশে রাখা হয় খাবার৷ আবর্জনা পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার হয় না৷ রান্নাঘর জুড়ে পোকামাকড়, আরশোলা ও ইঁদুরের অবাধ ছোটাছুটি৷ সবমিলিয়ে চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর একটা পরিবেশ৷ রেলের খাদ্য পরিবেশন ব্যবস্থা নিয়ে এমন ভুরি ভুরি অভিযোগ কোনো বিরোধী দল বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নয়৷ রীতিমতো তদন্ত করার পর এইসব মারাত্মক তথ্য তুলে ধরেছে ‘কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল' বা ক্যাগ৷
প্রায়শই দিল্লি কলকাতা যাতায়াত করেন সুস্মিতা সর্বাধিকারী৷ ক্যাগ রিপোর্টের খবর শুনে তিনি বললেন, ‘‘রেলের কথা বলতে গেলে একটা চূড়ান্ত অব্যবস্থার কথা বলতে হয়৷ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, রান্না করা খাবার রাখা হয় শৌচাগারের পাশে৷ আমাকে একবার যে চিকেন দেওয়া হয়েছিল সেটা মানুষের খাবার অযোগ্য৷ এখন শুনছি, শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় কম্বল দেওয়া হবে না৷ বিনিময়ে তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি করা হবে৷ দেশের সবচেয়ে বড় পঞ্চায়েত পার্লামেন্টে ক্যাগ যে রিপোর্ট পেশ করেছে তারপর রেলমন্ত্রী রেলের গতি বাড়ানোর আগে রেলের সাধারণ পরিষেবা গুলো ঠিক করার ওপর জোর দিন৷''
সংসদে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করেছে ক্যাগ৷ ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণে উঠেও এসেছে যে, রেলে দূষিত খাবার ও পুনর্ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার করা হয়৷ যাত্রীদের থেকে যথেষ্ট দাম নেওয়া হলেও ব্যবহারের সময়সীমা পার হয়ে যাওয়া জিনিসও ব্যবহার করা হচ্ছে৷ শুধুমাত্র রান্নায় ব্যবহৃত সামগ্রীই নয়, বোতলজাত দ্রব্যে অনিয়মের বিষয়ও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, বিভিন্ন স্টেশনে যে জলের বোতল বিক্রি করা হয়, তাও স্বীকৃত কোম্পানির নয়৷ অথচ তাই কিনতে বাধ্য হন যাত্রীরা৷
টেলিকম আধিকারিক দেবব্রত ব্যানার্জি বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে ভারতীয় রেলওয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন৷ প্যান্ট্রিকারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের ছবি এর আগেও উঠে এসেছে৷ এখন ক্যাগ রিপোর্টে আরও একবার বাস্তব ছবিটা ধরা পড়েছে৷ ট্রেনে খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের৷ কিন্তু ব্যবস্থা কি নেওয়া হয়? আসলে রেলকর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতা, ন্যায়বোধ এবং সততার অভাব এর প্রধান কারণ৷ শুধু খাবার নয়, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েও ভুরি ভুরি অভিযোগ রয়েছে৷''
এই রিপোর্ট তৈরির আগে রেল ও ক্যাগের আধিকারিকরা দেশের মোট ৭৪টি স্টেশন ও ৮০টি ট্রেনে যৌথ নজরদারি চালিয়েছে৷
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, রেলে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করার সময় কোনো বিলও দেওয়া হয় না৷ নির্দিষ্ট কোনো দাম লেখা মেনু কার্ডও যাত্রীদের দেওয়া হয় না৷ ফলে খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া জলের বোতল বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে৷ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা না থাকায় রেলের খাবার খেয়ে যাত্রীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে৷ রেলমন্ত্রক সূত্রে খবর, ক্যাগ-এর রিপোর্ট আসার পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে রেল৷
অন্যদিকে, ক্যাটারিং পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা মাথাব্যাথা নেই রেল কর্তৃপক্ষের৷ তারা ব্যস্ত রেলের গতি বাড়াতে৷ দিল্লি-মুম্বই এবং দিল্লি-কলকাতা রুটে গতিমান এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার করতে ভারতীয় রেল মন্ত্রক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যাপল-এর সঙ্গে জোট বাঁধছে৷ এই খবর জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু৷ তিনি বলেন, ‘‘গতিমান এক্সপ্রেসের গতি বাড়াতে মন্ত্রকের ১৮,০০০ কোটি টাকার প্রস্তাব নীতি আয়োগ অনুমোদন করেছে৷ এই অনুমোদনের ফলে গতিমান এক্সপ্রেসের গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারে বাড়িয়ে নেওয়া যাবে৷''
প্রায়শই দিল্লি-কলকাতা যাতায়ত করেন শ্রীমা ব্যানার্জি৷ তিনি যাত্রীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘দুরন্ত, রাজধানী ট্রেনগুলোর ভাড়া বেশি৷ অথচ এই ট্রেনগুলোর খাবার অত্যন্ত নিম্নমানের৷ খাবারে আরশোলা, টিকটিকি পাওয়া যাচ্ছে৷ রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু টুইটারে সাড়া দেন৷ কিন্তু এই ধরনের অভিযোগে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানা যায়নি৷ অন্যদিকে, ট্রেন দেরি করলে যে খাবার দেওয়া হয়, তার মান এতটাই নিম্নমানের যে বলে বোঝানো যাবে না৷ এতে কি যাত্রীদের গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘিত হয় না?''
রেল নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কি? মন্তব্য লিখুন নিচের ঘরে৷