ভারতে নির্মাণ বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের উদ্যোগ
১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩নয়ডা শহরের একশো মিটার উঁচু সুপারটেক টাওয়ার দশ সেকেন্ডের মধ্যেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ গার্ডিয়ান সংবাদপত্রের অনলাইন সংস্করণে সেই ঘটনার ভিডিও স্থান পেয়েছে৷ ৮৫০টি ফ্ল্যাটের সেই ভবন ধ্বংস করতে ৩,৭০০ কিলো বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল৷ ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ মেনে নিয়ে ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়৷
ভবনটি ধ্বংসের ফলে প্রায় ৮০ হাজার টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছিল৷ রি-সাস্টেনেবিলিটি নামের কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডিমোলিশন ওয়েস্ট রিসাইক্লিং প্লান্ট সেগুলি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে৷ ভারতের বৃহত্তর রাজধানী অঞ্চলে এমন কিছু কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে৷ যেমন একটি কেন্দ্র দিনে প্রায় ৮০০ টন বর্জ্য রিসাইকেল করে৷ প্রকল্পের প্রধান মুকেশ ধীমান বলেন, ‘‘নয়ডা পৌর কর্তৃপক্ষ আমাদের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ফলে সৃষ্টি হওয়া ২৮ হাজার টন বর্জ্য প্রক্রিয়াজাত করার দায়িত্ব দিয়েছে৷ সেই প্রক্রিয়ার শেষে যে ব্যবহারযোগ্য উপাদান অবশিষ্ট থাকবে, আমরা খোলা বাজারে সেগুলি টাইলসের আকারে বিক্রি করবো৷''
ভারতের নির্মাণ খাতে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টন বর্জ্য সৃষ্টি হয়৷ শহর এলাকার কঠিন বর্জ্যের এক তৃতীয়াংশের সামান্য কম অংশের জন্য নির্মাণ শিল্প দায়ী৷ নির্মাণ ও ধ্বংসের বর্জ্য প্রায়ই বেআইনিভাবে যেখানে-সেখানে ফেলে দেওয়া হয়৷
স্বেচ্ছাসেবীদের এক দল দিল্লির মেহেরৌলি এলাকায় পায়ে হেঁটে এমন বর্জ্যের সন্ধান করছেন৷ মালওয়া প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীরা ধ্বংসস্তূপের ছবি তুলে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে সেগুলি ঠিকমতো দূর করার অনুরোধ করেন৷
শহরে এমন বর্জ্যের জন্য ২০০টি কালেকশন পয়েন্ট ও পাঁচটি রিসাইক্লিং সেন্টার রয়েছে৷ মালওয়া টিমের তৈরি ডিজিটাল মানচিত্রে নীল ও সবুজ বিন্দু দিয়ে সেই সব জায়গা চিহ্নিত করা হয়৷মালবা প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা
শমিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘সেইসঙ্গে লাল রং বেআইনি ডাম্পিং সাইট চিহ্নিত করে৷ স্থানীয় মানুষ আমাদের তথ্য পাঠান, ছবি তোলেন৷ আমরা মানুষকে নিজেদের পাড়ায় বেআইনি বর্জ্য দেখলে জানাতে বলি৷ আমরা ম্যাপে সেগুলি চিহ্নিত করে কর্তৃপক্ষের নজর আকর্ষণ করে সে সব সাফ করার উদ্যোগ নিতে বলি৷''
গোটা শহর জুড়ে ১০০টি কালেকশন পয়েন্ট থাকলেও বেশিরভাগ নির্মাণ কোম্পানি বেআইনি ভাবে বর্জ্য ফেলার পথ বেছে নেয়৷ অসংগঠিত ময়লা কুড়ানিদের কাজে লাগিয়ে রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর অন্তরালে সেই কাজ করা হয়৷ এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজের জন্য তাদের নামমাত্র পারিশ্রমিক দেওয়া হয়৷ শমিতা চৌধুরী বলেন, ‘‘ব্যবসামনস্ক কিছু মানুষ রয়েছেন৷ তাঁরা টাকা বাঁচাতে চান, আরও টাকা আয় করতে চান৷ অর্থনৈতিক মানদণ্ডে তাঁদের কাছে বেআইনিভাবে বর্জ্য ফেলার কোনো অর্থ হয় না৷ তাঁরা বরং এমন কাউকে বর্জ্য বিক্রি করতে চান, যার হয়তো গোনো গর্ত ভরাট করতে সেটার প্রয়োজন রয়েছে৷ এমন কোনো জায়গা না পেলে মরিয়া হয়ে যেখানে-সেখানে ফেলে দেন৷ কারণ আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করতে ট্রাক দিনে নির্দিষ্ট কয়েকবার যাতায়াত করতে পারে৷''
বাড়ি ভাঙা, বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহণের মতো ধাপগুলির মধ্যে সমন্বয় করতে নির্মাণ ক্ষেত্রে এখনো বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের কোনো সংগঠিত প্রণালী নেই৷ অথচ প্রকৃত চক্রাকার অর্থনীতির জন্য এমনটা অপরিহার্য৷ এখনো দীর্ঘ পথ চলা বাকি৷ ফলে মালওয়া প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীদের আরও অনেককাল সক্রিয় থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে৷
ক্রয়েৎসবুক/ম্যার্গেনটালার/এসবি