ভাষণ দিলেন আসাদ, পরিস্থিতি বদলাল না সিরিয়ায়
২০ জুন ২০১১আসাদের ভাষণের কথা সিরিয়ার প্রশাসন জানিয়েছিল রবিবার রাতেই৷ যদিও বোঝা গিয়েছিল যে তিনি তাঁর কড়া দাওয়াইয়ের পথ থেকে সরবেন না৷ পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীদের খুশি করার মত কোন কথা তিনি বলতে পারেন নি বলে এটাও বেশ স্পষ্ট ছবি যে, বিক্ষোভ কমেনি সিরিয়ায়৷ বরং দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর হুমকিকে উপেক্ষা করে আরও বেশি সংখ্যায় মানুষ পথে নামছে সোমবার৷
কী বললেন আসাদ?
প্রায় চল্লিশ মিনিটের জাতীয়তাবাদের কথায় ভরা সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আসাদের মোদ্দা কথাটা সংক্ষেপে বলতে গেলে যা শোনাবে তা হল, আন্দোলনকারীদের জন্য নতুন কোন কথা তিনি বলতে পারেন নি৷ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের কথা শুনতে তাঁর প্রশাসন রাজি আছে বলে জানিয়েছেন আসাদ৷ কিন্তু সেইসঙ্গেই তিনি বলেছেন, একটি ছোট গোষ্ঠী এই আন্দোলনের প্ররোচনা যোগাচ্ছে৷ বলেছেন, দেশের ভবিষ্যৎ কোনদিকে যাবে, তা নিয়ে তিনি জাতীয় স্তরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান৷ সেই ভবিষ্যতের প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন যে অর্থনৈতিক নয়, আসল সমস্যা রাজনৈতিক সংস্কারের অভাব৷ যার প্রয়োজন রয়েছে৷ আর দেশের অভ্যন্তরের পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে তুরস্কে যে সমস্ত মানুষ পালিয়ে গেছে, তাদেরকে ফিরে আসতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি৷ কিন্তু দেশের ভিতরের অস্থির পরিস্থিতির স্বাভাবিকত্বে ফেরার তো কোন লক্ষণ নেই৷ যাদের ফিরে আসতে প্রেসিডেন্ট বলছেন, তারাই বা কোন ভরসায় ফিরবে, তার কোন নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারেন নি৷
ভাষণের জবাবে আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট আসাদের গণতন্ত্র বিমুখ মানসিকতার বিরুদ্ধে যারা দেশজুড়ে লড়ছেন, বা গত তিন মাসের আন্দোলনে যে ১৩০০ মানুষ প্রশাসনিক পীড়নে প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের বক্তব্য আগে যা ছিল এখনও তাই৷ কোনরকম আলোচনার পথে যেতে রাজি নয় এই আন্দোলন৷ তাদের দাবি, আসাদ এবং তাঁর স্বৈরাচারী সরকারকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তারা নতুন করে সিরিয়াকে গড়ে তুলতে চান৷ যেমনটা সাম্প্রতিক অতীতে হয়েছে মিশরের ক্ষেত্রেও৷
সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে আলোচনায় বসেছে ইউরোপ
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা আজ সোমবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসেছেন, সিরিয়া নিয়ে আলোচনা করতে৷ সিরিয়ার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে এই দেশটির ওপরে চাপ সৃষ্টি করে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়ানো যায় কিনা, সে বিষয়েই কথা হচ্ছে সেই বৈঠকে৷ কিন্তু সিরিয়ায় যেভাবে প্রেসিডেন্ট আসাদ নিজের দেশের মানুষের ওপর সেনা ব্যবহার করছেন, তার নিন্দা তো সর্বত্রই শোনা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে৷
আসাদের পক্ষে সমর্থনও একেবারে কম নয়
নিন্দাবাদ শোনা যাচ্ছে অনেকদিন থেকেই৷ কিন্তু প্রেসিডেন্ট আসাদ যে শুধুই হাওয়ার ওপর দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছেন, তাও নয়৷ সিরিয়ার অভ্যন্তরে তাঁর দিকেও যথেষ্ট সমর্থন লক্ষ্য করা গেছে একাধিক সময়ে৷ তাছাড়া, আজকের ভাষণে তিনি একটি নতুন কথা বলেছেন, তা হল, বিরোধীদের মধ্যে সক্রিয় একটি বিশেষ গোষ্ঠীর কথা৷ যারা প্ররোচনা যোগাচ্ছে৷ তাছাড়া এই প্রথম আসাদের ভাষণে এই আন্দোলনে নিহতদেরকে ‘শহীদ' বলে সম্বোধন করতে শোনা গেছে৷ যদিও আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, এই ‘শহীদ' বলতে তিনি তাঁর সমর্থক সেনাবাহিনীর নিহত সদস্যদের বোঝাতে চেয়েছেন৷ যদিও এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে আন্দোলনের মাত্রা কমবে না এই ভাষণের পরেও৷ বরং তা আরও বাড়বে এবং বাড়ছেও৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা : সঞ্জীব বর্মন