ভয়াবহ আশঙ্কার মাঝেই লকডাউন শিথিল
১২ জুলাই ২০২১বাংলাদেশে করোনার পরিস্থিতি আরো শঙ্কাজনক৷ গত বছরের শুরুতে করোনা ছিল শহর, প্রধানত ঢাকা কেন্দ্রিক৷ কিন্তু এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ সংক্রমণের ৭০ ভাগই এখন গ্রামে৷ গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল থাকায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করছে৷ চিকিৎসার জন্য গ্রামের করোনা রোগীরা শহরে আসতে চাইলেও লকডাউন এবং নজরদারির কারণে আসতে পারছেন না৷ অন্যদিকে অনেক করোনা রোগী অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে৷ তারা টেস্ট করাচ্ছেন না, হাসপাতালেও যচ্ছেন না৷
দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে ১০০ সরকারি হাসপাতালের ৪৮টি হাসপাতালে আইসিইউ আছে, ৫২টিতে নেই৷ আইসিইউ সুবিধা নেই এমন হাসপাতালের ৩৫টিই আবার ঢাকার বাইরে জেলা সদরে৷ আর ৬৪ জেলার মধ্যে মাত্র ৩৫ জেলায় কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আছে৷ দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যাপ্ত মজুত থাকার পরও বাকি জেলা এবং দেশের উপজেলায় অক্সিজেন সংকট তৈরি হয়েছে৷ সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক না থাকায় মজুত অক্সিজেন সময়মতো কাজে আসছে না৷ সাতক্ষীরা, বগুড়া ও পাবনায় ১৮ জন করোনা রোগী অক্সিজেন সরবারাহ না থাকার কারণে মারা গেছেন৷
বাংলাদেশে রবিবার ছিল করোনায় মৃত্যু ও সংক্রমণের এক ভয়াবহ দিন৷ সর্বোচ্চ ২৩০ জনের মৃত্যু হয় সেদিন৷ আর ১১ হাজার ৮৭৪ জনের সংক্রমণও ছিলো রেকর্ড৷ সংক্রমণের হারও এখন সর্বোচ্চ ৷ সোমবার মৃত্যু কিছুটা কমলেও সংক্রনের আবারো নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ আগের সপ্তাহের তুলনায় চলতি সপ্তাহে মৃত্যু বেড়েছে ৪৮.৬৬ শতাংশ৷ সংক্রমণ বেড়েছে ৩৭.৫৪ শতাংশ৷
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় ২২০ জনের মুত্যৃ হয়েছে৷ সংক্রমণেরও নতুন রেকর্ড হয়েছে৷ ২৪ ঘন্টায় শনাক্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬৮ জন৷ সংক্রমণের হার ৩১.২৪ শতাংশ৷ এটা সর্বোচ্চ৷
আইইডিসিআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘‘এই লকডাউনে সংক্রমণ এবং মৃত্যু কমে আসার কথা ছিল৷ কিন্তু কমেনি৷ এর একটি কারণ হতে পারে গ্রামের মানুষ লকডাউন মানছেন না৷ মাস্ক পরছেন না৷ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না৷ আর সেই কারণেই গ্রামে সংক্রমণ বাড়ছে৷ সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাও চাপের মুখে পড়েছে৷’’
তার মতে, ‘‘সংক্রমণ শতকরা পাঁচ ভাগের নীচে নামলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলা যায়৷ আমরা তো ১০ ভাগেও নামাতে পারছি না৷ এই সংক্রমণের ধারা অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে৷’’
এই অবস্থার মধ্যেই ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন শিথিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ কঠোর লকডাউন শেষ হবে ১৪ জুলাই৷ শিথিল লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন, লঞ্চ চলবে৷ শপিংমল, দোকানপাটও একই নিয়মে খুলবে৷ আর ১৭ জুলাই থেকে সারাদেশে বসবে গরুর হাট৷
বিএসএমইউর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘সংক্রমণ ও মৃত্যুর এই ঊর্ধ্বগতির মধ্যে লকডাউন শিথিল করার কেনো সুযোগ নেই৷ শিথিলের ঘোষণায় দুই দিন আগেই সব কিছু শিথিল হয়ে যাবে৷ আর যা-ই হোক স্বাস্থ্যবিধি শিথিল করার কোনো সুযোগ নেই৷ সেটা করা হলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে৷’’
তার মতে, ‘‘লকডাউন আসলে সত্যিকারের লকডাউন না হওয়ায় এখানে সংক্রমণ ও মুত্যু না কমে উল্টো বাড়ছে৷ কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসাসেবা দেয়াও কঠিন হয়ে পড়বে৷ অক্সিজেনের সংকটও দেখা দেবে৷’’
এ বিষয়ে একদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, এভাবে সংক্রমণ বাড়লে আগামী সাত দিনের মধ্যে আর করোনা বেড পাওয়া যাবে না৷ পাওয়া যাবে না আইসিইউ এবং হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা৷ ঢাকার ১৬টি সরকারি কোভিড হাসপাতালের মধ্যে ৯টিতেই এখন আইসিইউ বেড খালি নেই৷