1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মন্ত্রী এমপিদের চাপে উপজেলা নির্বাচন

১৭ মার্চ ২০১৯

সোমবার দ্বিতীয় ধাপে ১১৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন৷ প্রথম ধাপের নির্বাচনের মত এই ধাপেও মন্ত্রী এমপিদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ আছে৷ নির্বাচন কমিশন ডেপুটি স্পিকারসহ দু'জনকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3FCn5
Bangladesch Wahlen
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে, ইসি'র নোটিশের বাইরেও আরো অনেক মন্ত্রী এমপি আছেন যারা নির্বাচনে অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন৷ এই নির্বাচন বলতে গেলে একতরফা৷ বিএনপি ও বামজোটসহ আরো অনেক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করছে৷ প্রার্থী বলতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ৷ কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি'র স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন৷ তারপরও কেন মন্ত্রী এমপিদের এই চাপ?

নির্বাচন কমিশন ঘোষিত নীতি অনুযায়ী এই নির্বাচনে মন্ত্রী এমপিরা প্রচার চালাতে পারবেন না৷ তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজও করতে পারবেন না৷ কিন্তু তারপরও তাদের নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না৷ তারা পেছন থেকে প্রভাব বিস্তারতো করছেনই, প্রকাশ্যেও তাদের কেউ কেউ তৎপর আছেন৷

এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে যাদের

প্রথম ধাপে ৭৮টি উপজেলায় নির্বাচন হয়৷ প্রভাব বিস্তারের কারণে তিনটি জেলায় নির্বাচন স্থগিত করতে বাধ্য হয় ইসি৷ আর ঐ পর্যায়ে মোট ৯ জন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারা শেষ পর্যন্ত এলাকা ছাড়লেও ইসি'র বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে এলাকা ছাড়েননি৷ তাদের এলাকার বাইরে পাঠাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷

প্রথম ধাপে যে নয়জন সংসদ সদস্যকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল তারা হলেন: সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্তা, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এমএ মতিন, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মো. আবু জাহির, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেন, নাটোর-৪ আসনের আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোণা-৫ আসনের ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী৷

ঐ সময়ে ইসি'র নির্দেশ অমান্য করে এলাকায় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এপিএস) মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ইসি৷ এ ঘটনায় লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন৷

এবারের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনের দু'দিন আগে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও গাইবান্ধা-৫ আসনের (ফুলছড়ি ও সাঘাটা) সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়াকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ও কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলকে ররিবার বিকাল ৫টার মধ্যে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ ডেপুটি স্পিকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এলাকা ছাড়েননি৷ রবিবার সকালে তিনি এলাকা ছাড়েন বলে জানা গেছে৷

‘নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে চাইছেন’: কলিমুল্লাহ

অভিযোগের নমুনা

ডেপুটি স্পিকারকে নির্বাচন কমিশনের লেখা চিঠিকে বলা হয়েছে, ‘‘আপনার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদের নির্বাচনি এলাকা গাইবান্ধা-৫ এর আওতাধীন সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রকাশ্যে একজন প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণসহ নির্বাচনি বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণের অভিযোগ পাওয়া যায়৷''

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘‘যেহেতু আপনি বিধিবহির্ভূতভাবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন, তাই আপনাকে গাইবান্ধা-৫ এর আওতাধীন নির্বাচনি এলাকা ১৬ মার্চ সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে ত্যাগ করতে নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছেন৷ আপনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে নির্বাচন বন্ধ হলে ওই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন তথা সরকারের যে আর্থিক ব্যয় হবে পরবর্তীতে তার দায়-দায়িত্ব নিরূপণ করা হবে৷''

কেন এই প্রভাব বিস্তার

স্থানীয় পর্যায়সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানাগেছে এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি নেই তাই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশনা আছে৷ আর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে উদার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে৷

কিন্তু মন্ত্রী এমপিদের একটি বড় অংশ চাইছেন যার যার এলকায় তাদের নিজের লোক যেন চেয়ারম্যন পদে পাশ করেন৷ তারা স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে যার যার আধিপত্য বজায় রাখতে চাইছেন৷ আবার অনেক এমপি মন্ত্রী আছেন যাদের প্রার্থীরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন৷ কোথাও কোথাও বিদ্রোহী প্রার্থীরা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন৷ এসব কারণে মন্ত্রী এমপিদের একাংশ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন৷ আর সবাই প্রকাশ্যে না হলেও পেছনে থেকে প্রভাব বিস্তার করছেন প্রায় সব এলাকায়৷

এর কারণ সম্পর্কে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সংসদ সদস্যরা যার যার এলাকায় তাঁর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে চাইছেন৷ কারুর সংসদীয় এলাকায় এক বা একাধিক উপজেলা আছে৷ আর তার স্থানীয় পর্যায়ের নিয়ন্ত্রক হবেন উপজেলা চেয়ারম্যানরা৷ সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী এলকায় এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকলেও নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপজেলা পরিষদের নির্বাচিতরাও তাদের নিজস্ব লোক হওয়া দরকার৷ এ কারণেই তারা উপজেলা নির্বাচনে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন এবং করছেন৷''

‘উপদলীয় কোন্দলের প্রকাশ ঘটছে’: শান্তনু

তিনি বলেন, ‘‘আর যারা এই প্রভাব বিস্তার করছেন তারা ভাবছেন এগুলো কেউ দেখবেন না বা তাদের কেউ কিছু বলবেন না৷ কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিএনপি নির্বাচনে না থকালেও আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা উপদল রয়েছে৷ এই উপদলীয় কোন্দলের প্রকাশ ঘটছে উপজেলা নির্বাচনে৷ মন্ত্রী বা এমপিরা কোনো না কোনো উপদলকে তাদের নিজেদের মনে করেন৷ তাই তারা চাইছেন তাদের উপদলে যারা আছেন তারা যেন নির্বাচিত হন৷ আর সে কারণেই প্রভাব বিস্তারের এই চেষ্টা৷''

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন

১৮ মার্চ সোমবার দ্বিতীয় ধাপের ১৭টি জেলার ১২৯টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হলেও এর মধ্যে গোপালগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার ভোট দ্বিতীয় দফার পরিবর্তে তৃতীয় দফায় নেয়া হয়েছে৷ আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ১৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া সফর থাকায় জেলার সব কয়টি উপজেলার ভোটের তারিখ পরিবর্তন হয়েছে৷

এদিকে দ্বিতীয়ধাপে থাকা দিনাজপুর সদর উপজেলার ভোটও ৪র্থ ধাপে (৩১ মার্চ) স্থানান্তর করা হয়েছে৷ আদালতের আদেশে দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষিত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ভোট স্থগিত হয়েছে৷ আর ৬টি উপজেলার সবগুলো পদে একক প্রার্থী থাকায় ইতোমধ্যে এসব উপজেলার ফল ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে ইসি৷ ফলে দ্বিতীয় ধাপে ঠাকুরগাঁও, বগুড়া, পাবনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার ১১৬টি উপজেলায় সোমবার ভোট হচ্ছে৷

দ্বিতীয়ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৪৮ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান ২৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১২ জন৷

প্রসঙ্গত পাঁচ দফায় পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম দফার ভোট ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট যথাক্রমে ২৪ ও ৩১ মার্চ৷ এছাড়া পঞ্চম ধাপের নির্বাচন জুন মাসে অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে৷