1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাসমাবেশ নিয়ে কৌশলী বিএনপি, মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

২২ অক্টোবর ২০২৩

২৮ অক্টোবর ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি৷ একই দিনে পাল্টা সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও৷ তাই বেশ তৎপর অবস্থানে আছে পুলিশ প্রশাসন৷

https://p.dw.com/p/4XsJG
Bangladesch Dhaka Proteste Oppositionspartei BNP und andere Parteien
সরকার পতনের অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশটি করতে চায় বিএনপি৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

বিএনপির কেন্দ্রীয় এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশের ধরপাকড় এড়িয়ে সারাদেশ থেকে নেতা-কর্মীদের ২৫ অক্টোবরের মধ্যেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে৷ যাদের ঢাকায় অবস্থানের সুযোগ নেই তাদের ঢাকার আশপাশের এলাকায় এসে অবস্থান নিতে বলা হয়েছে৷

তারা সমাবেশের আগের দিন অথবা সমাবেশের দিন সুযোগ মতো ঢাকার সমাবেশে যোগ দেবেন৷ নেতারা বলছেন, ওই সমাবেশের মধ্য দিয়েই সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলন শুরু হবে৷ তাই তারা সর্বশক্তি দিয়েই ঢাকায় বড় আকারের জনসমাগম নিশ্চিত করতে চায় বিএনপি৷

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুল জানান, ‘‘এখন আর আলাদা করে নির্দেশনা দিতে হয় না৷ সব সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই যার যার মতো সমাবেশে হাজির হবেন৷''

সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই যার যার মতো সমাবেশে হাজির হবেন

গত ১৮ তারিখের সমাবেশে ঢাকার বাইরে থেকে নেতা-কর্মীদের আসতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘কিন্তু তারপরও তারা ঢাকা এসেছেন৷ সমাবেশে যোগ দিয়েছেন৷ আর এবার তো মহাসমাবেশ৷ তাই সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা ঢাকা আসবেন৷ অনেকে এরইমধ্যে আসতে শুরু করেছেন৷''

জানা গেছে, পুলিশি গ্রেপ্তারের মুখে বিএনপি মনে করছে সমাবেশের দুই-একদিন আগে থেকেই  ঢাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে৷ কৌশলে বাস ও লঞ্চ চলাচলে বাধা দেয়া হতে পারে৷ পথে পথে নেতা-কর্মীদের আটক করা হতে পারে৷ তাই তাদের ২৫ তারিখের মধ্যেই এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে৷ আর তাদের যেকোনো কৌশলে গ্রেপ্তার এড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷

এমনকি, ঢাকায় আসার পর হোটেলে না থেকে আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিতদের বাসায় থাকারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ মেসে উঠতেও নিষেধ করা হয়েছে৷ আর কোনো বাস বা মাইক্রোবাস ভাড়া করে সবাই একসঙ্গে না এসে যাত্রীবাহী বাস, লঞ্চ বা ট্রেনে সাধারণ যাত্রীর মতো আসতে বলা হয়েছে৷

বাড়তি কৌশল হিসেবে নেতা-কর্মীদের স্মার্ট ফোনের পরিবর্তে বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে৷ আর স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও ফোনের মধ্যে এমন কিছু রাখতে না করা হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় তিনি বিএনপির কর্মী৷

বিএনপির কৌশল হলো, পুলিশি বাধা ও তল্লাশি ফাঁকি দিয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতা-কর্মী যাতে সারাদেশ থেকে ঢাকায় আসতে পারেন৷ রাস্তাঘাট বা আসার পথে কোনো শোডাউন করে বিপদ ডেকে না আনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷

বিএনপি এরইমধ্যে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টনে সমাবেশ করার লিখিত অনুমতি চেয়েছে পুলিশের কাছে৷ এর আগে গত ডিসেম্বরে তারা নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি পায়নি৷ সেই বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করছেন তারা৷

সমাবেশের আগের দিন, অর্থাৎ ২৭ অক্টোবর বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান নিতে পারেন৷ বিএনপি মনে করে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এবার পুলিশ সমাবেশ স্থল বা তার আশপাশে প্রকাশ্যে কোনো মারমুখী ভূমিকায় যেতে পারবে না৷ তবে পুলিশ আগেই ঢাকাসহ সারাদেশে একটা নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে৷ আর সেখানেই নেতা-কর্মীদের কৌশলি হতে বলা হয়েছে৷

কৌশলের অংশ হিসেবে, কোনো নেতা-কর্মী যেন এলাকায় গ্রেপ্তার বা আটকের মুখে না পড়েন, সেজন্যে আগেই এলাকা ছেড়ে দিয়ে অন্য কোথাও অবস্থান নিয়ে ঢাকা চলে আসার কথা বলা হয়েছে৷

বিএনপির একজন নেতা বলেন, ‘‘আসলে আমাদের একক কোনো কৌশল নেই৷ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা বারবার কৌশল পরিবর্তন করব৷ আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি লোক নিয়ে মহাসমাবেশ করা৷ আমরা যেখানে বাধার মুখে পড়ব, সেখানে পরিস্থিতি বুঝে কাজ করব৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এজন্য কেন্দ্রের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন সবাই৷ কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন তাও ঠিক করে দেয়া হয়েছে৷''

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছি৷ কেন্দ্র থেকে উপজেলা পর্যন্ত সবাই সতর্ক আছেন৷ সব পর্যায় থেকে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে আসবেন৷ দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সবাই আসবেন৷

এবার সমাবেশে মানুষের ঢল ঠেকানো সম্ভব হবে না

‘‘পুলিশ যেহেতু এরইমধ্যে উপজেলা থেকে সবখানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, তাই সবাইকে যতদূর সম্ভব গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকতে বলা হয়েছে৷আর সমাবেশের আগেই ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে৷ যার পক্ষে যত আগে আসা সম্ভব তত আগে আসতে বলা হয়েছে৷''

সরকার যেমন পদক্ষেপ গ্রহণ করুক না কেন, তাদের পক্ষে এবার সমাবেশে মানুষের ঢল ঠেকানো সম্ভব হবে না বিশ্বাস করেন মোশাররফ৷ তিনি বলেন, ‘‘মানুষ আসবেই৷ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে আশা করি৷''

সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সেটা ঢাকা অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও, অবস্থান কর্মসূচি বা হরতাল হতে পারে৷ তবে মূল বিষয় হলে সমাবেশের পর থেকে কর্মসূচি আর থামবে না৷ অব্যাহত কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের পতনই আমাদের লক্ষ্য৷''

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রোববার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, ‘‘সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় এসে বসে পড়তে বলা হয়নি৷ আমরা বলেছি, ২৮ তারিখে কর্মসূচির পরে যে যার জায়গায় চলে যাবে এবং পরবর্তী কর্মসূচির জন্য তারা অপেক্ষা করবেন৷ আমরা ২৮ তারিখে এমন কোনো কর্মসূচি দেব না যে ঢাকায় বসতে হবে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করছি৷ আপনারা লক্ষ্য করেছেন, জোর গলায় বলতে পারি এখন পর্যন্ত কোথাও আমরা অশান্তির সৃষ্টি করিনি৷ যা কিছু করছে সরকার ও তার পেটোয়া বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী৷''

তিনি পুলিশকে বিএনপির আন্দোলনে বাধা না দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘২৮ তারিখ সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ হবে৷ আমরা আশা করব, সারাদেশ থেকে শান্তিপ্রিয় মানুষ আসবে৷ তাদের দাবি সোচ্চার কণ্ঠে জানিয়ে যাবে৷ সেজন্য সবার সহযোগিতা কামনা করছি৷''

এদিকে, সরকার মনে করছে বিএনপি ২৮ অক্টোবরের সমাবেশর পর পরই ঢাকা অবরোধের কর্মসূচি শুরু করতে পারে৷ তাদের নেতা-কর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিতে পারে৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেও সেই আশঙ্কার কথা বলেছেন৷ সেজন্য নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকতে বলেছেন৷

২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ ডেকেছে৷ ওইদিন তারাও ব্যাপক লোকের সমাবেশ ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ তবে সমাবেশে লোক আনা তাদের মূল বিষয় নয়, তারা চাইছেন ওই দিন ঢাকার সড়ক- অলিগলি ও পাড়া মহল্লা পুরোপুরি তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে৷ শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে নেতা-কর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থেকে শান্তি সমাবেশ ও মিছিল করতে বলা হয়েছে৷

ঢাকার কলাবাগান এলাকার আওয়ামী লীগের  এজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা বলেন, ‘‘২৮ তারিখকে সামনে রেখে আমরা এরইমধ্যে কাজ করছি৷আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে৷ আমরা ওই দিন রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নেব৷ আর বিএনপির লোকজনের গতিবিধিও আমরা নজরে রাখছি৷''

এদিকে, নগরীতে পুলিশ ধারাবহিকভাবে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে৷ তাদের নজর এখন হোটেল ও মেসগুলোর দিকে৷ তারা স্থানীয় পর্যায় থেকে তথ্য নিয়েও কাজ করছে৷ পুলিশের টার্গেট হলো সমাবেশের আগে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে যান ও জন চলাচল সীমিত করে ফেলা৷ আর পরিবহণ ও লঞ্চ মালিকেরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেবেন কী না তা এখনো জানা যায়নি৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এস কামাল হোসেন বলেন, ‘‘আমরা আশঙ্কা করব কেন? বিএনপি নেতারাই বলেছেন, তারা ২৮ তারিখ সমাবেশের পর অবস্থান নেবে৷ সমাবেশ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার৷ কিন্তু অবরোধ, অবস্থানের নামে যদি রাস্তা ঘাট দখল করে, সাধারণের চলাচল বিঘ্নিত করা হয়, তাতো  করতে দেয়া হবে না৷ সাধারণ মানুষ তাদের পিটিয়ে উঠিয়ে দেবে৷''

তার কথা, ‘‘আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্র সবাই এক হয়েছে৷ তারা ঢাকায় লাখো লোকের সমাবেশ করতেই পারে৷''

তিনি বলেন, ‘‘ওইদিন আমরা ঘোষণা দিয়েই মাঠে আছি৷ আমরা শান্তি সমাবেশ ডেকেছি৷ কেউ কোনো অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে৷''