মাছ কার? সাগর যার!
৪ নভেম্বর ২০১৬স্যার্খিও মাইয়োর্গা চিলোয়ে-র উপকূলে বাস করেন, ও মাছ ধরেন৷ এখান থেকে চতুর্দিকে স্যামন মাছের ভেড়ি দেখা যায়৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক, সব ধরনের সংস্থাই তাতে সংশ্লিষ্ট, তাদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে ক্রমাগত৷ স্যার্খিও বলেন, ‘‘আমাদের মাছ ধরার এলাকা ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে৷ আগে আমরা এখানে মাছ ধরতাম, গালো মাছ কিংবা সি-বাস৷ এখন আর আমরা এখানে মাছ ধরতে পারি না, কারণ এই সুবিশাল, ভাসন্ত প্ল্যাটফর্মগুলো এখানে রয়েছে৷ ওখানে একটা, ওখানে আরো একটা৷ অনেকগুলো৷''
স্যার্খিও আরো জানালেন, ‘‘কয়েকজন ডুবুরি জলে নেমে দেখেছে৷ ৪৫ থেকে ৫০ মিটার গভীরে তারা দেখেছে যে, সব কিছু মরে গেছে, সব মরা৷ সাগরের কোনো জীব আর বেঁচে নেই৷''
তারপর স্যার্খিও-র নৌকো ওদের বয়াগুলোর কাছে পৌঁছাল৷ ওরা এখানে কাঁকড়া ধরবে, স্পাইনি ক্র্যাবস, তবে শুধু পুরুষ কাঁকড়া; মেয়ে কাঁকড়াগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হবে, যাতে তারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷ অবশ্য আজ বিশেষ কাঁকড়া উঠছে না৷ দিনের শেষে দেখা গেল, ওরা চল্লিশ হাজার কাঁকড়া ধরেছে, যার দাম উঠবে প্রায় ৫০ ইউরো৷
ফিশারি আইন ও জেলেদের আশা-নিরাশা
চিলোয়ের বাসিন্দাদের ৮০ শতাংশ জেলে৷ তাদের অধিকাংশ আবার ফিশারি আইনের বিরুদ্ধে৷ এর আগের রক্ষণশীল সরকারের অর্থনীতি মন্ত্রী লঙ্গেরার নামে এই আইন৷ চিলির ধীবররা সমুদ্রাঞ্চলকে বেসরকারি মালিকানার হাতে ছেড়ে দেওয়ার বিপক্ষে, কেননা স্যামন চাষের ভেড়ি আর জাহাজে করে মাছধরার ফলে সাধারণ জেলেদের রুটি মারা যাচ্ছে৷ মুনাফা করছে সামান্য কয়েকটি প্রভাবশালী বাণিজ্যসংস্থা৷ তাদের শিকারের একাংশ স্থানীয় বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন জেলেরা৷ কিন্তু আসল লাভ করে বাণিজ্যসংস্থাগুলি, ইউরোপ ও এশিয়ার বাজারে মাছ রপ্তানি করে৷ কোটি কোটি টাকার ব্যবসা৷
পরের দিন কাস্ত্রো শহরে আঞ্চলিক রাজনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক৷ সরকারি কর্মকর্তা জানালেন, ‘‘সরকার ধীবরদের সঙ্গে মিলে উন্নতি করার চেষ্টা করছেন, যাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের মাছধরার ক্ষেত্রে প্রগতি সাধন করি৷ কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা একমত হতে পেরেছি৷''
দৃশ্যত আজকের বৈঠকেও একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ আগামীতে প্রতি দু'মাস অন্তর এ ধরনের আলাপ-আলোচনা বসবে, যাতে দক্ষিণ চিলির ধীবরদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়৷
রামধনু যোদ্ধা
রাজনীতির কচকচির পর মাইয়োর্গা আবার তাঁর সারা জীবনের স্বপ্নের কথা ভাবতে চান: তাঁর নিজস্ব একটি বড়োসড়ো মাছধরার জাহাজ৷
নৌকোর নাম হবে ‘গেরেরো আরকোয়িরিস' বা ‘রামধনু যোদ্ধা'৷ স্যার্খিও-র পুরনো নৌকার নামও তাই ছিল৷ নামটার একটা বিশেষ অর্থ আছে৷ স্যার্খিও জানালেন, ‘‘কোথায় যেন পড়েছি, রেনবো-ওয়ারিয়র নামের একটি জাহাজ মুরুরোয়া অ্যাটল-এ ফরাসিদের আণবিক বোমা ফাটানো প্রায় বন্ধ করে দিতে চলেছিল৷ জাহাজটা নাকি ফরাসিদের সর্বত্র অনুসরণ করে বেড়িয়েছিল, তাদের শান্তিতে থাকতে দেয়নি, যা প্রাণ চায় করতে দেয়নি৷ কাজেই আমার জাহাজের নামও রামধনু যোদ্ধা৷''
কেননা স্যার্খিও ও চিলির অন্যান্য ধীবররাও এতো সহজে হাল ছাড়তে রাজি নন৷