1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের নারী ইউএনওর গার্ড অব অনার চলবে

১৮ জুন ২০২১

মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-রা গার্ড অব অনার দিতে পারবেন না-এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷

https://p.dw.com/p/3vB2F
ছবি: bdnews24.com

ব্যাপক সমালোচনার মুখে সংসদীয় কমিটিও তাদের সুপারিশ থেকে সরে এসেছে৷

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘‘তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটা কোনো প্রস্তাব হলো! ওই প্রস্তাব তো সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক৷ সংবিধানে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে৷ তাদের ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা তো দূরের কথা, বিবেচনা করারও কোনো সুযোগ নাই৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মারা গেলে তাকে শেষ বারের মতো রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয় গার্ড অব অনারের মাধ্যমে৷ আর সেই সম্মান জানানো উপজেলা বা জেলার প্রাশানিক প্রধানের দায়িত্ব৷ এর সাথে নারী বা পুরুষের কোনো সম্পর্ক নাই৷ আর ধর্মীয় অনুভূতিরও কোনো বিষয় নাই৷ কারণ, গার্ড অব অনার জানাজার নামাজ নয়৷ এটা আলাদা৷’’ প্রস্তাব পাসের সময় অবশ্য মন্ত্রী নিজেও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন৷

ওই প্রস্তাব সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

এদিকে সংসদসহ নানা মহলের ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটিও তাদের সুপারিশ থেকে সরে এসেছে৷ কমিটিও এখন মনে করে তাদের প্রস্তাব সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ স্থায়ী কমিটির প্রধান শাজাহান খান এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কমিটির একজন সদস্য মেজর(অব.) রফিকুল ইসলাম এমপি বলেছিলেন কয়েকটি উপজেলায় নারী ইউএনওরা গার্ড অব অনার দেয়ায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লেগেছে৷ আমরা তার কথা পর্যালোচনা করে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম মাত্র৷ আমাদের প্রস্তাব মানতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম বিষয়টি পর্যালোচলার জন্য৷’’

এরইমধ্যে সংসদীয় কমিটি তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এসেছে বলে জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি৷ তিনি বলেছেন আমাদের প্রস্তাবটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ আমরা নিজেরাও বুঝতে পেরেছি আমাদের প্রস্তাবটি ঠিক নয়৷ কারণ, এর সাথে ধর্মীয় অনুভূতির কোনো সম্পর্ক নাই৷ গার্ড অব অনার এবং জানাজা এক নয়৷ জানাজা আলাদা পড়ানো হয়৷ তাই আমাদের প্রস্তাবটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নাই৷’’

যে ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলেছিল সংসদীয় কমিটি, তার সঙ্গে ইসলামী চিন্তাবিদরাও একমত নন৷ শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ‘‘মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার একটি রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতি বা রীতি৷ এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক খোঁজা ঠিক না৷ ইসলামে নারীরা জানাজা বা অন্য কোনো নামাজে ইমমতি করতে পারেন না৷ কিন্তু নিয়ম মেনে নামাজে অংশ নিতে পারেন৷ আর গার্ড অব অনার তো কোনো নামাজ নয়৷’’

সংসদীয় কমিটি এখন তাদের প্রস্তাব থেকে সরে এলেও যারা এই প্রস্তাব করেছেন তাদের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নারী নেত্রী অ্যাডাভোকেট এলিনা খান৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা হয়ত প্রতিবাদের মুখে এখন তাদের অবস্থান বদল করেছেন৷ কিন্তু তাদের প্রস্তাবে নারীর প্রতি তাদের মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে৷ যারা আইন প্রণয়ন করেন, তারা যদি সংবিধান না বোঝেন তাহলে তা দুঃখজনক৷ আর তারা ধর্মও জানেন বলে মনে হয় না৷ তাদের এই প্রস্তাব নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের পথে অন্তরায়৷’’

আমরা নিজেরাও বুঝতে পেরেছি আমাদের প্রস্তাবটি ঠিক নয়: শাজাহান খান

গত ১৩ জুন সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্ন তুলে গার্ড অব অনারে নারী ইউএনওদের বিকল্পের জন্য প্রস্তাব পাস করে সুপারিশ আকারে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়৷ শাজাহান খান এমপির সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, কাজী ফিরোজ রশীদ, ওয়ারেসাত হোসেন ও মোছলেম উদ্দিন আহমদ৷

প্রসঙ্গত, মৃত্যুর পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অব অনার দেয়ার সর্বশেষ নিয়ামাবলী জারি করা হয় ২০২০ সালে৷ এর আগে ২০১৫ সালে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গার্ড অব অনার দেয়ার বিধান চালু করা হয়৷

নিয়ম অনুযায়ী মহানগর ও জেলা সদরে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকারের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করবেন৷

আর এজন্য মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন জাতীয় পতাকায় আবৃত করতে হবে৷ তবে সৎকার বা সমাধিস্থ করার আগে জাতীয় পতাকা খুলে ফেলতে হবে৷ সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধি কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন৷ পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা সশস্ত্র সালাম প্রদান করবেন এবং বিউগলে করুণ সুর বাজাতে হবে৷ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গার্ড অব অনার পরিচালনা করবেন৷