মুক্ত ট্রাম্প, তবু অসম্মান
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০বিশেষজ্ঞরা যা ভেবেছিলেন, বাস্তবেও তাই ঘটল৷ সেনেটে ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এর অর্থ, আপাতত মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদ থেকে তাঁকে সরতে হচ্ছে না৷ তবে ইমপিচমেন্টের হাত থেকে রক্ষা পেলেও অপমান থেকে পুরোপুরি রক্ষা পেলেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ তাঁর দলেরই এক সেনেটর দলীয় হুইপ উপেক্ষা করে ভোট দিলেন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে৷
গত মাসেই ডেমোক্র্যাট অধ্যুষিত মার্কিন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের পক্ষে রায় দিয়েছিল৷ মূলত দু'টি বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হয়েছিল সেখানে৷ এক, পুনর্নিবাচনের সম্ভাবনা বাড়াতে ট্রাম্প বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন৷ ইউক্রেনের সরকারের উপর অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চেয়েছিলেন৷ এবং দুই, তিনি জাতীয় নিরাপত্তার তোয়াক্কা করেননি এবং সংসদের কার্যকলাপে বাধা দিতে অভূতপূর্ব অভিযান চালিয়েছেন৷ মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে প্রস্তাব পাস হওয়ার পরে তা যায় উচ্চকক্ষ বা সেনেটে৷ যেখানে রিপাবলিকানদের ভোট বেশি৷ ১০০ সদস্যের সেনেটে রিপাবলিকান সেনেটরের সংখ্যা ৫৩৷ মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, সেনেটে দুই তৃতীয়াংশ ভোট প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে গেলে তবেই তাঁকে ইমপিচ করা সম্ভব৷ রিপাবলিকান অধ্যুষিত সেনেটে তা যে প্রায় অসম্ভব, আগেই সে আভাস দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা৷
দীর্ঘ শুনানির পর বুধবার বিকেলে সেনেটে ভোটাভুটি শুরু হয়৷ সেখানে প্রথম প্রস্তাবে ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দেন রিপাবলিকান সেনেটর মিট রোমনি৷ অতীতে যিনি বারাক ওবামার বিরুদ্ধে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়াইও করেছেন৷ রোমনি কেবল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, সেনেটে দাঁড়িয়ে কার্যত তুলোধোনা করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্টকে৷ বুধবার তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের সার্বভৌমত্ব, মূল্যবোধ এবং নিরাপত্তা নিয়ে ছেলেখেলা করেছেন ট্রাম্প৷’’ ট্রাম্পও অবশ্য তার জবাবে বলেছেন, রোমনি দ্বিচারিতা করছেন। বস্তুত, সেনেটে সাক্ষী নিয়ে এসে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ দিতে চেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটরা৷ রিপাবলিকান সেনেটররা তা হতে দেননি। কিন্তু রোমনি সাক্ষী আনার বিষয়ে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন করেছিলেন৷
দু'টি প্রস্তাবের প্রথমটিতে ট্রাম্প মুক্ত হয়েছেন ৫২ জন রিপাবলিকান সেনেটরের ভোটে৷ দ্বিতীয়টিতে পেয়েছেন ৫৩ জন সেনেটরের ভোট৷ এ দিন মুক্ত হয়েই একটি পোস্টার টুইট করেন প্রেসিডেন্ট৷ একই সঙ্গে জানিয়েছেন আজ, বৃহস্পতিবার দেশের মানুষকে বার্তা দিতে পারেন তিনি৷ পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, আগামী বহু বছর ট্রাম্পই ক্ষমতায় থাকবেন। যদিও মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী কোনও প্রেসিডেন্ট দুই বারের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন না৷ ফলে এ বারই শেষ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়াতে পারবেন ট্রাম্প৷ কিন্তু জিততে পারবেন কি?
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে দু'রকম কথা বলছেন। ট্রাম্পপন্থীদের বক্তব্য, মুক্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে সেনেটের ভোটকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন। বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেই অভিযোগগুলি আনা হয়েছিল। সেনেটে যা ধোপে টেকেনি৷
তবে অন্য পক্ষের বক্তব্য, অ্যামেরিকায় কোনও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রস্তাব ওঠাই যথেষ্ট অসম্মানের৷ তার মধ্যে ট্রাম্পের নিজের দলের সেনেটর তাঁর বিরুদ্ধে একবার ভোট দেওয়ায় বিষয়টির গুরুত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে৷ ডেমোক্র্যাটরা স্বাভাবিক ভাবেই প্রচার করবেন যে, সেনেটে রিপাবলিকানরা ট্রাম্পকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন৷ সাক্ষী পর্যন্ত ডাকতে দেওয়া হয়নি৷ ফলে সেনেটের বিচার নির্ভুল নয়। বুধবার রাত থেকেই এ কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা৷ ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার টুইট করে বলেছেন, ‘রিপাবলিকান সেনেটররা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাক্ষী পর্যন্ত আনতে দেননি৷ এই বিচার মূল্যহীন৷’ কংগ্রেসের স্পিকার ন্যানসি পেলোসি লিখেছেন, ‘ট্রাম্প এখনও দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক৷’
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সেনেটের বিচারসভায় ডেমোক্র্যাটরা প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে নিয়ে আসার কথা বলেছিলেন৷ বোল্টন সাক্ষী দিতে রাজিও হয়েছিলেন৷ কিন্তু যে ভাবে সাক্ষীদের কাছ থেকে রিপাবলিকান সেনেটররা ট্রাম্পকে বাঁচিয়েছেন তা সাধারণ মানুষ খুব ভাল চোখে দেখেননি। ফলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে৷
এসজি/জিএইচ (সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স)