বিজ্ঞানী আর জেলেরা একসঙ্গে
৬ মার্চ ২০১৭জোয়ার-ভাটা অনুযায়ী জার্মানির নর্থ সি বা উত্তর সাগর উপকূলে ওয়াডেন সি নামের টাইডাল ফ্ল্যাটস দেখা দেয়৷ হাজার হাজার বছর ধরে এই ওয়াডেন সি নানা ধরনের মাছ ও অন্যান্য প্রাণীদের বাসস্থান৷ কিন্তু এখানেও কি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে? নতুন প্রাণীরা বাসা গাড়ছে আর পুরনো বাসিন্দারা উধাও হচ্ছে?
ধীবর আর গবেষকরা মিলে সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ যেমন ডানিয়েল আহরেন্স, যিনি চিংড়ি মাছ ধরেন৷ গত কয়েক বছরে তাঁর জালে বেশ কিছু মাছ উঠেছে, যা সচরাচর এ অঞ্চলে দেখা যায় না৷ মেরিন বায়োলজিস্ট কাই ভ্যাটিয়েন তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা চান – যে কারণে তিনি মাছ-ধরার নৌকায় জেলেদের সঙ্গে সাগরে যান৷
কাঁকড়া ধরার জালের ফুটোগুলো ছোট হয়, তার ফলে অতি ছোট মাছও ধরা পড়ে৷ অর্থাৎ পরিবেশে কী ঘটছে, তা জানার একটা ভালো উপায় হলো, জালে কী উঠছে, তা পরীক্ষা করে দেখা৷ দিনে দশবার অবধি ১০০ কিলো করে মাছ ওঠে এই জালে৷ আসলে ধরা হয় সাগরের ছোট চিংড়ি, কিন্তু সেই সঙ্গে অন্যান্য মাছও ওঠে৷
কি মাছ উঠছে জালে?
মেশিনেই কাঁকড়া আর মাছ আলাদা করা হয়৷ সাথে অপ্রয়োজনীয় যা কিছু ধরা পড়ে, সেটাই বিজ্ঞানীদের কাছে মহামূল্যবান৷ মাছের কানকোর পিছনে একটা ছোট্ট দাগ আছে, নাকি নেই? তার ওপরেই নির্ভর করবে, কোন মাছগুলোকে ল্যাবরেটরিতে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করা হবে৷ আলফ্রেড ভেগেনার ইনস্টিটিউট ফর পোলার অ্যান্ড মেরিন রিসার্চের ল্যাবরেটরিতে মাছগুলো পরীক্ষা করেন জীববিজ্ঞানী কাই ভ্যেটিয়েন৷
তিনি একটি মাছ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন, যা সাধারণত উত্তর সাগরে পাওয়া যায় না৷ একটি ইউরোপীয় সি-বার্শ মাছ৷ ড্র্যাগনের মতো পাখনা এদের বিশেষত্ব৷ সাধারণত এরা থাকে অপেক্ষাকৃত উষ্ণ পানিতে৷
মেরিন বায়োলজিস্ট কাই ভ্যাটিয়েন বললেন, ‘‘ইউরোপীয় সি-ব্যাস উষ্ণ পানিতে থাকতে ভালোবাসে৷ তবে বিগত কয়েক বছরে এই সি-বার্শ মাছগুলোকে ক্রমেই আরো বেশিভাবে নর্থ সি-তে পাওয়া যাচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের একটা লক্ষণ হতে পারে৷''
গাল্ফ স্ট্রিম নামের উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের পরিবর্তনের ফলেই কি উত্তর সাগরের পানির তাপমাত্রা গত ৪০ বছরে ১ দশমিক ৪ সেন্টিগ্রেড বেড়েছে? এই অপ্রত্যাশিত মাছগুলো কি একটা ব্যতিক্রম, নাকি এরা কোনো ব্যাপকতর পরিবর্তনের সূচক? এই প্রশ্নের উত্তর পাবার জন্য অন্যান্য জেলেদেরও বলা হয়েছে, চিংড়ির সাথে আর কী কী মাছ ধরা পড়ছে, সেটা যেন তারা নোট করে রাখেন৷
মাছ-ধরা জাহাজের ক্যাপ্টেনরা যে এই গবেষণায় সাহায্য করতে রাজি, শুধুমাত্র সেই কারণেই এই গবেষণা সম্ভব হয়েছে৷ নয়ত গবেষকদের পক্ষে সাগরের রহস্য ভেদ করা সম্ভব ছিল না৷ অন্যদিকে মৎস্যশিকারীরা জানতে পারছেন, সাগরের প্রাণীদের জীবন কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে৷ এ এমন একটি প্রকল্প, যা থেকে ধীবর, বিজ্ঞানী ও পরিবেশ, সকলেই উপকৃত হচ্ছেন৷