রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: জিয়াউর রহমান থেকে আব্দুল হামিদ
সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি একজন আসামিকে সাধারণ ক্ষমা করতে পারেন৷ অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় কয়েকজন আসামিকে দেয়া মুক্তি আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷
শফিউল আলম প্রধান
১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাত ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ ঐ মামলার বিচারে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধানের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল বলে ২০১৯ সালে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেনের লেখা এক প্রবন্ধ থেকে জানা যায়৷ পরে ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমান তার দণ্ডাদেশ মওকুফ করে দেন বলেও প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়৷ প্রবন্ধটি পড়তে উপরে (+) চিহ্নে ক্লিক করুন৷
আবুল কাসেম মানিক
রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ক্ষমা পেয়েছিলেন তিনি৷ পুরান ঢাকার দুই ব্যবসায়ী আবদুল খালেক রানা ও ফিরোজ আল মামুন হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়েছিল৷ একই মামলায় ২৮ জনকে ফাঁসি দেয়া হয়েছিল৷ ১৯৮২ সালে দুজনের ফাঁসি কার্যকর হয়৷ আবুল কাসেম মানিক ১৯৮৭ সালে আত্মসমর্পণ করেন৷ পরে এরশাদ তাকে ক্ষমা করে দেন৷
মহিউদ্দিন জিন্টু
পুরান ঢাকার দুই ব্যবসায়ী হত্যা মামলায় ফাঁসি হওয়া আসামিদের একজন ছিলেন জিন্টু৷ বিদেশে পালিয়ে থেকে ২০০৫ সালে দেশে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন৷ তারপর রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ তাকে ক্ষমা করে দেন৷ জানা যায়, পালিয়ে গিয়ে তিনি সুইডেনে ছিলেন৷ সেখান বিএনপির সুইডেন শাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন জিন্টু৷
একসঙ্গে ২০ জনকে ক্ষমা
নাটোরে ২০০৪ সালে তৎকালীন সরকারের ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা যুবদল নেতা সাব্বির আহম্মদ গামাকে হত্যা করা হয়৷ ঐ মামলায় ২০০৬ সালে ২১ জনের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়৷ ২০১০ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ২০ জনকে ক্ষমা করে দেন৷ একজন আসামি পলাতক ছিলেন৷
এএইচএম বিপ্লব
২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদকে জানান, গত পাঁচ বছরে ২৬ জন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামির সাজা মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি৷ এদের একজন লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের ছেলে বিপ্লব৷ ২০০০ সালে লক্ষ্মীপুর বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে তার বিরুদ্ধে এই রায় হয়৷ ২০১১ সালে রাষ্ট্রপতি তাকে ক্ষমা করেন৷ পরে আরেক হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়৷ ২০১৮ সালে তিনি মুক্ত হন৷
আসলাম ফকির
ফরিদপুরের আসলাম ফকির ২০০৩ সালে এ কে এম সাহেদ আলীকে হত্যা করেন৷ সেজন্য তার মৃত্যুদণ্ড হয়৷ ২০১৪ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আগের দিন তিনি এমন আচরণ শুরু করেন, কারাগারের নথির ভাষায় যা ছিল ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘অসুস্থতা’৷ ফলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর স্থগিত করা হয়৷ ২০১৫ সালে তার প্রাণভিক্ষার আবেদন গ্রহণ করে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়৷ ২০১৭ সালে তিনি মুক্তি পান৷ গতবছর আবারও এক হত্যা মামলার প্রধান আসামি হন তিনি৷
তোফায়েল আহমেদ জোসেফ
১৯৯৬ সালে ফ্রিডম পার্টির নেতা মোস্তফা হত্যা মামলায় ২০০৪ সালে জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল ঢাকার জজ আদালত৷ ২০১৫ সালে আপিল বিভাগ তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়৷ এরপর ২০১৮ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের ক্ষমা পেয়ে তিনি মুক্তি পান৷ সেই সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘তিনি আবেদন করেছিলেন ভয়ানক অসুস্থ, তার এক কিংবা দেড় বছর বাকি ছিল সাজা ভোগের৷ সেটার জন্য তিনি মারসি পিটশন করেছিলেন৷’’