ক্যামেরাবন্দি গলির ফুটবল
২৮ মে ২০১৪ফুটবল মানে একটা প্যাশন৷ সেই প্যাশনটাকেই ছবিকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন আলোকচিত্রশিল্পী ক্রিস্টফ সাইমন৷ তবে তিনি চেয়েছিলেন, রিও-র মতো শহরের ফাভেলা, অর্থাৎ বস্তির রাস্তায় যে সব ছেলেরা ফুটবল খেলে, তাদের চোখ দিয়ে সেই প্যাশনকে দেখতে এবং ধরে রাখতে৷ সেজন্য তিনি বেছে নেন রিও-র যেমন কুখ্যাত, তেমনই সুবিখ্যাত ‘সিটি অফ গড’ বা ‘ঈশ্বরের শহর’ বস্তিটিকে৷
সাইমনের ভাষ্যে: ‘‘ব্রাজিলের ফাভেলাগুলোতে বাচ্চারা ফুটবল খেলে সর্বসময় এবং সর্বত্র৷ পুরনো ফাটাছেঁড়া ফুটবল নিয়ে পোড়ো জমিতে কিংবা দেয়ালে বল কিক করে৷’’ বিশ্বকাপ আসছে, তাই সাইমন নাকি ব্রাজিলিয়ানদের ফুটবলপ্রীতি নিয়ে ছবি তোলার কথা ভাবছিলেন৷ এর আগে তিনি রিও-র বিভিন্ন বস্তিতে পুলিশের ‘শান্তি অভিযানের’ ছবি তুলেছিলেন৷ তখন ফাভেলার রাস্তায় সাইমনের পিছনে ফেউ-এর মতো বেড়াতো এই ছেলে-ছোকরার দল৷
ওদিকে সাইমনের ৫০ বয়স পার হতে চলেছে৷ ফটোগ্রাফার হিসেবে যা কিছু শিখেছেন, তা এবার কাউকে শিখিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে৷ সেখানেও চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফাভেলার ঐ ছেলেদের মুখ৷ রাস্তার ফুটবলের নাম করে ওদের ক্যামেরার কাজ শেখালে কেমন হয়? খোঁজ নিয়ে দেখলেন, জাপানের নিকন কোম্পানি বিনামূল্যে দশটি ওয়াটারপ্রুফ ‘কুলপিক্স’ ক্যামেরা দিতে প্রস্তুত৷
তখন ‘সিটি অফ গড’ বস্তিতে একটি ফটোর দোকান চালান সাইমনের এক বন্ধু টোনি বারোস৷ এই টোনি আবার চেনেন ফাভেলার সব বাসিন্দা ও তাঁদের ছেলেপিলেদের৷ মাস তিনেকের জন্য এই সব বিচ্ছুদের সাইমনের সাগরেদ করে দেওয়া তাঁর পক্ষে শক্ত কাজ নয়৷ কাজেই ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস অবধি প্রত্যেক সপ্তাহান্তে টোনি আর সাইমন তিন থেকে দশজন অবধি বাচ্চাদের নিয়ে গলির ফুটবলের ছবি তুলতে বেরোতেন৷ খুদে ফটোগ্রাফারদের বয়স দশ থেকে পনেরো বছরের মধ্যে৷ তারা তিন-চার ঘণ্টা থেকে শুরু করে সারাদিন অবধি ছবি তুলত৷ তারপর তাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে হতো৷
জন্মেই যেমন কেউ ফুটবলার হয় না, তেমন জন্মেই কেউ ফটোগ্রাফার হয় না৷ সাইমনকে তাঁর সাগরেদদের অনেক কিছু শেখাতে হয়েছে: যেমন ছবিতে নিজেদের দেখালে চলবে না; যাদের ছবি তুলবে, তারা যেন স্বাভাবিক থাকে, পোজ না করে; কোনোদিন ফ্ল্যাশ ব্যবহার কোরো না, ইত্যাদি৷ এই শিক্ষার পরিণতি: ছেলেদের তোলা ছবিগুলো পুরোপুরি অথেন্টিক, মানে বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে, বলে সাইমন মনে করেন৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি)