1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উন্নতির মাত্রা নিয়ে প্রশ্ন

১৫ জুন ২০১২

এই গ্রহের প্রাকৃতিক সম্পদ তো আর অনিঃশেষ নয়! তেমনই অনিঃশেষ নয় উন্নতির মাত্রা৷ তাহলে সবসময়ে উন্নয়ন সম্ভবপর কী আদপে? সেটা কী সোনার পাথরবাটি নয়? রিও সম্মেলনের আগে এই মৌলিক প্রশ্ন উঠেছে, যাতে জড়িয়ে রয়েছে পরিবেশও৷

https://p.dw.com/p/15Fcm
ছবি: Bonginkosi Vilakazi

জি ডি পি৷ অর্থনীতির এই পরিভাষাটি আমাদের সকলেরই বেশ পরিচিত শব্দ৷ এর অর্থ হল গড় জাতীয় উৎপাদন৷ এই যে গড় জাতীয় উৎপাদন, সেটাকে বাড়ানোর জন্যই প্রতিটি দেশের সর্বাঙ্গীন আর সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা৷ এখন প্রশ্ন হল, জিডিপি যদি ক্রমাগত বেড়েই যেতে থাকে, সেটা একটা অসম্ভব ব্যাপার৷ কারণ, বাস্তবে তা সম্ভব নয়৷ কোনোভাবেই সম্ভব নয়৷ অথচ মজার বিষয় হল, বিশ্বের যে কোনো দেশেই যাওয়া যাক, সকলের মুখেই শোনা যাবে, অর্থনীতিতে আমাদের জিডিপি বাড়ছে৷ আসল কথা হল, এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাঁকি রয়েছে৷ আর দ্বিতীয় কথা হল, জিডিপি বাড়ানোর হিসেব দেওয়ার সময় একবারের জন্যও জানানো হয়না এই জিডিপ বাড়াতে গিয়ে পরিবেশের কতটা ক্ষতি করা হয়েছে৷ কারণ, সেই ক্ষতি আখেরে এই গ্রহের সবচেয়ে বড় ক্ষতি৷

KeystoneXl Pipeline
ছবি: Christina Bergmann

বিষয়টাকে জটিল মনে হতেই পারে৷ তাই শুরুতে দেখে নেওয়া যাক, জিডিপি বস্তুটি কী? জিডিপি আসলে অন্যকিছুই নয়, একটি দেশের দ্বারা উৎপাদিত যাবতীয় পণ্য, আধুনিকতম ওষুধ বিষুধ থেকে সুপারমার্কেটের জিনিসপত্র এমনকি সরকারি তরফে নাগরিক সুখ সুবিধার জন্য যে সমস্ত পরিষেবা দেওয়া হয়েছে একটি অর্থবছরে, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব করেই বোঝা যায় সেই অর্থবছরে দেশটির জিডিপি বাড়লো নাকি কমল৷ যখন দেখা যায় জিডিপি বেড়েছে, তখন ধরেই নেওয়া যায় সেই বছরে কর্মসংস্থান বেশি হয়েছে, দেশের উৎপাদন বেড়েছে, পরিষেবা খাতেও সরকারের উদ্যোগ আগের তুলনায় বেড়েছে, ইত্যাদি৷

এই জিডিপি, এবং তার পরিসংখ্যান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন একদল সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং কিছু নামজাদা অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি করা একটি প্যানেল৷ সংক্ষেপে যে প্যানেলকে বলা হয়ে থাকে ‘আকোস্তা'৷ আকোস্তা'র বক্তব্য, জিডিপি যে হিসেব দেখায় তাতে কেবলই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে৷ কিন্তু এই বিশ্বের তথা এই প্রকৃতির যা কিছু ভাণ্ডার, তার সবটাই তো পর্যাপ্ত৷ সেটা অনিঃশেষও নয়৷ তাহলে কীভাবে উন্নয়ন এবং আরও উন্নয়ন সম্ভবপর? তাছাড়া, জিডিপি-র হিসেবে আজ পর্যন্ত কোথাও দেখা যায়নি যে উন্নয়ন ঘটাতে গিয়ে যে বিপুল প্রকৃতিক সম্পদের অপচয় করা হচ্চে, তার ক্ষতিপূরণের হিসেবটা৷ সেক্ষেত্রে এই জিডিপি কতটা গ্রহণযোগ্য?

Logo Rio+20

রিও সম্মেলনের মুখে আকোস্তা যে মৌলিক প্রশ্ন তুলেছে, সেটাকে অস্বীকার করা অসম্ভব৷ শিল্পক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর প্রসঙ্গে এই আকোস্তা জানাচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে সচরাচর লক্ষ্য করা যায়, তাদের জিডিপি বেশ ভালো মাত্রাতেই বাড়তে থাকে৷ কিন্তু সেটাকে বাড়াতে গিয়ে প্রকৃতির ভারসাম্যের ওপরে যে বিপুল হামলা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, সেদিকে কী লক্ষ্য রাখা হচ্ছে আদৌ?

এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷ আকোস্তা জানিয়ে দিচ্ছে, কোনোদিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে না৷ কারণ, প্রতিটি শিল্পোন্নত ধনী দেশের লক্ষ্য হচ্ছে, কী উপায়ে অর্থনীতিকে আরও গতিময় করে তোলা যায়৷ আর সেটা করতে গিয়ে যেহেতু প্রকৃতির ওপরে বেশি চাপ দেওয়া হচ্ছে, সুতরাং সেদিক থেকে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে তারা নানারকমের চালাকির আশ্রয় নেয়৷ যাতে প্রাকৃতিক ক্ষতিটা বুঝতে না পারা যায়৷ কিংবা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার একটা প্রবণতাও চোখে পড়ছে অনেকের৷ ধরা যাক, দাবানলের ঘটনা৷ গ্রীষ্মে অনেক দেশেই দাবানল দেখা যায়৷ যাতে অরণ্য পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়৷ সচরাচর সেই দাবানলের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তার আর্থিক মূল্যের একটা পরিমাপ মেলে বটে, কিন্তু সেই ক্ষতিটা প্রকৃতির ঘরে যতটা হয়, তার পরিমাপ কোনোদিনই মেলে না৷ কারণ সে হিসেব কেউ রাখেও না৷ তাছাড়া দাবানলের মতই অন্যান্য প্রাকৃতিক ক্ষতিগুলোকে হিসেবে এনে জিডিপি-র বাড়বৃদ্ধিতে আটকে কেন রাখা হবে না, এ প্রশ্নও তুলেছে আকোস্তা৷

সুতরাং, অপরিমিত বাড়বাড়ি মার্কা অর্থনীতি নয়, চাই এমন অর্থনীতির বাড়বৃদ্ধি, যাকিনা বাড়বে কিন্তু ধীরে৷ অপরিমিত বাড়বৃদ্ধির কারণে যে প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ক্ষতি হবে, সেই অসুস্থ প্রবণতাটাকেই বন্ধ করতে চাইছে আকোস্তা৷ রিও সম্মেলনে তারা তাই সোচ্চারে জানাবে, জিডিপি-র তুমুল বৃদ্ধি নয়, চাই ধীর কিন্তু সামগ্রিক প্রগতিশীল বৃদ্ধি৷

প্রতিবেদন: ক্রিস্টিনা রুটা / সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা: আঙ্কে রাসপার / দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য