1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লকডাউনেও বদলায়নি কাশ্মীর

গৌতম হোড়
২৮ এপ্রিল ২০২০

করোনা এবং লকডাউনও বদলাতে পারলো না কাশ্মীরকে। তা আগের মতোই সংঘাতময়। 

https://p.dw.com/p/3bVSf
ছবি: Sharique Ahmad

নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের নিয়মিত সংঘর্ষ, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সমানে গোলাগুলি, অনুপ্রবেশের চেষ্টা, সাংবাদিকদের কন্ঠরোধের অভিযোগ, নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর অনুশাসন-- করোনা কালেও বদলালো না কাশ্মীরের চিরকালীন চিত্র। লকডাউন ঘোষণার পর সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষে কাশ্মীরে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের । এর মধ্যে ২৯ জন সন্ত্রাসবাদী, ১৩ জন নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্য এবং সাতজন সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তাবাহিনীর নিহত সদস্যদের মধ্যে সেনা, সিআরপিএফ জওয়ান, পুলিশ কর্মী সকলেই আছেন। নিয়মিত ব্যবধানে এই সংঘর্ষ চলছে। করোনার জন্য কাশ্মীরেও লকডাউন চলছে। বেশ কয়েকজনের এই রোগে মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু তাতেও বদলায়নি কাশ্মীরের চেনা ছবি

সোমবারের কথা ধরা যাক। কাশ্মীরের দুই জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী ও সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। কাজিগুন্ড ও কুলগামে।  কাজিগুন্ডে তিনজন সন্ত্রাসবাদী মারা গিয়েছে। কুলগামে মারা গিয়েছে একজন। এক সেনা অফিসার আহত হয়েছেন। তারপর সংঘর্ষের জায়গায় একটি বিস্ফোরণ হয়, তাতে নয় জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া উত্তর কাশ্মীরের উরি সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনার মধ্যে প্রবল গোলা-গুলি বিনিময় হয়েছে। লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন সেক্টরে গোলা-গুলি চলছে। ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তান আসলে কশ্মীরে অনুপ্রবেশকারীদের ঢোকাতে চাইছে। তাই সীমান্তের ওপার থেকে গোলা-গুলির পরিমাণ অসম্ভব বেড়ে গিয়েছে। তাতে সাধারণ মানুষও মারা যাচ্ছেন। ভারতও তার জবাব দিচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর মতে, কাশ্মীরে গণ্ডগোলের পিছনে রয়েছে লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা, যারা নিজেদের টিআরএফ বলে পরিচয় দেয়। তারা সোপোরে সিআরপিএফের জওয়ানকে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। বসন্তে এখন বরফ গলতে শুরু করেছে। তারপরই অনুপ্রবেশ বাড়াবার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। জঙ্গিরাও সক্রিয় হয়েছে। তারা দেখাতে চায়, কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হয়নি।  অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''জঙ্গিরা একটা মরিয়া চেষ্টা করছে। তারা সোপিয়ান, সোপোরের মতো জায়গায় সক্রিয়। ওই জায়গাগুলি আপেল চাষের জন্য বিখ্যাত। এখন আপেল তোলা এবং পাঠানোর কাজ করার জন্য শ্রমিকদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গেই কিছু জঙ্গি মিশে গিয়েছে। তবে আমি বলব, পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পাকিস্তান বরাবরই এই সময় অনুপ্রবেশ করাবার চেষ্টা করে। তারা সেই চেষ্টা বহাল রেখেছে। কিন্তু সাধারণভাবে বলতে পারি, এখন আর আগের অবস্থা নেই। কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দেওয়া গিয়েছে।''

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা মনে করেন, কাশ্মীরে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রায় নেই। সন্ত্রাসও আগের তুলনায় কমেছে। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''কাশ্মীর সমস্যার অনেক স্তর রয়েছে। অনেক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সেখানে সক্রিয়। পাক রাজনীতিবিদ এবং শাসকদের কাছে কাশ্মীরসমস্যাবহুল থাকাটা খুবই জরুরি। তাঁরা যখনই বিপাকে পড়েন, তখনই কাশ্মীরের প্রসঙ্গ তোলেন।  কাশ্মীর সমস্যা মিটে গেলে তাঁদের রাজনীতি চলবে কী করে? ভারতেও যখনই জাতীয়তাবাদী জিগির তোলার দরকার হয়, তখন কাশ্মীরকে টানা হয়। ফলে এক কথায় কাশ্মীর সমস্যা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। এবং সে কারণেই লকডাউনে কাশ্মীরের চেহারা বাকি দেশের মতো নয়।''

এরই মধ্যে অভিযোগ উঠেছে, কাশ্মীরেসাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করছে প্রশাসন। মোট তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। তার মধ্যে চিত্রসাংবাদিক মাসরত জাহরার বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গওহর গিলানি ও দ্য হিন্দু কাগজের সাংবাদিক পিরজাদা আশিকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ডিডাব্লিউ উর্দু বিভাগকে মাসরত জানিয়েছেন, সামাজিক মাধ্যমে তাঁর পোস্টের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি দেশবিদেশের সংবাদমাধ্যমে যা লেখেন বা তাঁর যে ছবি প্রকাশিত হয়, সেগুলিই তিনি পোস্ট করেন। তিনি কোনও গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। অভিযোগ, তাঁর ১৯ মাস পুরনো একটি পোস্ট নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।

তাই আপাতদৃষ্টিতে করোনা এবং লকডাউনের মধ্যেও কাশ্মীর আছে কাশ্মীরেই। জঙ্গি, পাকিস্তান, সংঘর্ষ, গোলা-গুলি, অনুপ্রবেশের চেষ্টা, সংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেখে সেটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা।