লকডাউনে পুলিশ চেকপোস্টের অভিজ্ঞতা
করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী ‘‘সর্বাত্মক লকডাউন’’ এর দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হয়েছে ২২ এপ্রিল৷ জরুরি প্রয়োজনে চলাফেরার জন্য পুলিশ কর্তৃক ‘মুভমেন্ট পাস’ চালু করা হলেও অনেকের কাছে তা পাওয়া যায়নি৷
মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেয়া
মিরপুরের একটি চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় পেশায় ঠিকাদার মোঃ জামাল উদ্দিন নামের একজনকে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কথা বলে জানা গেলো, রাইড শেয়ারিং এর মাধ্যমে মোটরবাইকে করে দুইজন চলাফেরা করা নিষেধ হওয়ায় পুলিশ এই পদক্ষেপ নিয়েছে৷
ইউনিফর্ম পরায় ঝামেলা হয়নি
মাহমুদুল হাসান নামের একজন প্রকৌশলী জানান, লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই তিনি বের হচ্ছেন৷ তবে তার প্রতিষ্ঠানের দেয়া বিশেষ পোশাক (ইউনিফর্ম) পরে গত কয়েকদিন চলাফেরা করছেন৷ প্রতিষ্ঠানের জরুরি সেবার কাগজপত্র সঙ্গে থাকায় আর কোন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়নি বলে জানান তিনি৷
হেঁটে যেতে বাধ্য করা
ঢাকার মগবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে সহকারী হিসেবে কাজ করেন তানিশা রহমান৷ লকডাউনের প্রথমদিন তাঁকে রিক্সা থেকে নামিয়ে দিয়ে কর্মস্থলে হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছে৷ জরুরি সেবাদানকারী পরিচয় দিয়েও কোন লাভ হয়নি৷
পুলিশের ধাওয়া
মান্নান আহমেদ নামের একজন রিক্সাচালক জানান, ৪-৫ দিন আগে মিরপুর ১০ নম্বরের চেকপোস্টে পুলিশ তাকেসহ আরও অনেক রিক্সাচালককে ধাওয়া করে৷ যাত্রী থাকার পরেও তাদের কোন রকম কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি৷
‘এখন আর পুলিশ ধরে না’
ধানমন্ডির একটি সুপারশপে ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কর্মরত মনিরা আক্তার জানান, তার কর্মস্থল বাসা থেকে অনেক দূরে৷ লকডাউন শুরু প্রথম দুই দিন চেকপোস্টগুলোতে পুলিশ বেশ তৎপর থাকলেও এখন আর কোন সমস্যা হয় না বলে জানান তিনি৷
‘মামলার ভয়ে গাড়ি চালাই না’
রাজু আহমেদ নামের একজন মোটরবাইক চালক জানান, লকডাউন শুরুর দিন যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ চেকপোস্টে তাকে এক হাজার টাকার মামলা দেওয়া হয়৷ এরপর থেকে তিনি আর গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছেন না৷ কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘যা কামাই করি সবই যদি জরিমানা দিতে হয়, তাইলে আর লাভ হইলো কি?’
স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে ছাড়
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত মারিয়া গোমেজ জানান, লকডাউনে স্বাস্থ্যসেবাদানকারী হিসেবে চলাফেরার সময় তার ব্যক্তিগত কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা নেই৷ তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে সহকর্মীদের হেনস্তা হওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে তিনি জানান৷
শেষ রক্ষা হলো না
সৌদিআরব প্রবাসী জাকির হোসেন কারওয়ান বাজার থেকে বিমানের টিকেট নিতে এসেছেন টাঙ্গাইল থেকে৷ ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় বিজয় সরণি মোড়ে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তাকে ১২০০ টাকা জরিমানা করে৷ এর আগে আরো দুই জায়গায় ছাড় পেলেও এখানে এসে অনেক অনুরোধ করেও শেষ রক্ষা হলো না বলে জানান তিনি৷
সমস্যা হয়েছে প্রথম তিন দিন
সৈয়দা রাকিবা আক্তার নামের একজন ওষুধের ব্যবসায়ী জানান, লকডাউন শুরুর প্রথম ২-৩ দিন চলাচলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখে পড়তে হলেও এখন নিয়ম কানুন ঢিলেঢালা হয়ে গেছে৷ এভাবে দিনের পর দিন কর্মজীবী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে থাকা সম্ভব না বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
ক্ষমা চেয়ে রক্ষা
সিএনজি অটোরিক্সা চালক মোঃ কামাল হোসেন লকডাউনের পর আজই প্রথম বের হয়েছেন৷ বিজয় সরণির মোড়ে তিনজন যাত্রী নেওয়ার অপরাধে পুলিশ তাকে মামলা দিতে চায়৷ পরে বিশেষ কারণ দেখিয়ে এবং হাতজোড় করে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ৷