লকডাউনে বাধা শুভ পরিণয়ে, ক্ষতি ব্যবসায়
১৮ এপ্রিল ২০২০করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লকডাউন চলায় জনজীবন ব্যাহত৷ কোনো কিছুই স্বাভাবিক ছন্দে চলছে না৷ বিয়ের মতো শুভ অনুষ্ঠানও বাদ পড়ার তালিকায় ঢুকে পড়েছে৷ সাধারণভাবে নতুন বছরের প্রথম মাসে অসংখ্য বিয়ের অনুষ্ঠান থাকে৷ কিন্তু, লকডাউন চলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হচ্ছে৷ জমায়েত ছাড়া আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব নয়৷ ফলে বাতিল হয়ে যাচ্ছে বিয়ে৷ পিছিয়ে দিতে হচ্ছে৷ এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা৷ আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে পাত্র ও কন্যার পরিবারের৷ সব ক্ষেত্রেই অগ্রিম দেওয়া হয়ে গিয়েছে৷ সেই টাকা কবে ফেরত পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই৷
প্রথমেই নজর রাখা যাক সেলিব্রিটিদের অন্দরমহলে৷ বাঙালি মতে ১৫ এপ্রিল বিয়ে হওয়ার কথা ছিল টলিউডের অভিনেত্রী পূজা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ অভিনেতা দেবের নায়িকা হিসেবে চ্যালেঞ্জ টু, হইচই আনলিমিটেড ছবিতে নজর কেড়েছেন তিনি৷ তিন বছর আগে বলিউডের অভিনেতা কুণাল বর্মার সঙ্গে তাঁর বাগদান হয়৷ কুণাল নাম কুড়িয়েছেন হাফ গার্লফ্রেন্ড-এর অভিনেতা হিসেবে৷ জাঁকজমক করে এই সেলিব্রিটি যুগলের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল৷ সেজন্য বিয়ের ব্যাপক আয়োজনও হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু, করোনা তাতে বাদ সেধেছে৷ ফলে অনুষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল৷ লকডাউন পর্ব মিটে গেলে তাঁরা আইনি বিয়ে সেরে ফেলবেন৷
একই অবস্থা টলিউডের দুই অভিনেতা যুগলের৷ সৌপ্তিক চক্রবর্তী ও রণিতা দাসের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল এই বৈশাখে৷ ইস্টিকুটুম-এর বাহা চরিত্রে অভিনয় করা রণিতা ছোট পর্দার জনপ্রিয় মুখ৷ জলনূপুর ধারাবাহিকের অভিনেতা সৌপ্তিকের সঙ্গে তাঁর দশ বছরের সম্পর্ক৷ তাই শুভ পরিণয়ের প্রতীক্ষা রয়েছে বহুদিনের৷ অবশেষে বৈশাখে দিন স্থির হলেও তা ভেস্তে গিয়েছে৷
লকডাউনের পরে অর্থনীতির হাল যে ভালো থাকবে না, এটা নিয়ে সংশয় নেই৷ সেকথা মাথায় রেখে অনেক সেলিব্রিটি ২০২০ সালেই বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চাইছেন না৷ অতীতের প্রখ্যাত অভিনেতা তরুণকুমারের নাতি সৌরভ চট্টোপাধ্যায় টলিপাড়ার বাঘবন্দি খেলা-র সোনিয়া ওরফে ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চেয়েছিলেন আগামী নভেম্বরে৷ তাঁরাও বিয়ে পিছিয়ে দিয়েছেন অনির্দিষ্টকালের জন্য৷ ছোটপর্দার অভিনেত্রী মিমি দত্ত, মানালি দে, তৃণা সাহার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে৷
আমজনতার পরিবারেও একই ছবি৷ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ পালন করতে গিয়ে অনুষ্ঠান বাতিল করতে হচ্ছে৷ তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রমও আছে৷ কেউ কেউ বিয়ে করতে নাছোড়বান্দা৷ লকডাউনের মধ্যেই নানা উপায়ে গাঁটছড়া বাঁধছেন৷ এর মধ্যে সবচেয়ে অভিনব ঔরঙ্গাবাদের যুবক মহম্মদ মিনহাজুদের উদ্যোগ৷ সপ্তাহখানেক আগে ভিডিও কলে বিয়ে করেছেন বাগদত্তাকে৷ অনুষ্ঠানের কাজি মুফতি আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, রীতি মেনেই বিয়ে দিয়েছেন৷ খরচ কম হওয়ায় অবশ্য দুটি পরিবারই খুশি৷
অনেকে ছাদনাতলাতেই বিয়ে করতে মরিয়া৷ তাই আইন বাঁচিয়ে, পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিয়ে করছেন৷ আচার-অনুষ্ঠান চলার সময় পাত্র-পাত্রীর সঙ্গে পুরোহিতের নিরাপদ দূরত্ব থাকছে৷ হুগলির কামারপুকুরের কার্তিক পাঁজা এটাই করেছেন৷ গত শ্রাবণে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুরের রিয়া সরকারের সঙ্গে৷ ১৭ এপ্রিল রীতি মেনে বিয়ে হয়েছে৷ তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আয়োজন বর্জন করেছে দুই পরিবার৷ পাত্রীর পরিবারের সদস্য রমা রায় বলেন, ‘‘সকলেরই মন খারাপ৷ প্রথমে ভাবা হয়েছিল, বিয়েটাই বাতিল হবে৷ তবু সেটা হয়েছে৷ অনুষ্ঠানের কথা পরে ভাবা যাবে৷’’
বিয়ের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত থাকেন বিভিন্ন পেশার মানুষজন৷ পার্লার থেকে পুরোহিত, ডেকারেটার থেকে কেটারার, সকলেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন লকডাউনের জেরে৷ উত্তর কলকাতার রাজু কেটারার থেকে দমদমের লা বেলা পার্লার, কারো হাতেই কাজ নেই৷ অথচ পুজোর সময় বাদ দিলে এই বিয়ের মরসুমই তাদের সারা বছরের রসদ জোগায়৷ যাঁদের বিয়ে বাতিল হলো, তাঁদের অগ্রিম ফেরানোর তাগাদা রয়েছে৷ পুরোহিত সঞ্জীব চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা এই সময়ের দিকে তাকিয়ে থাকি বছরভর৷ এবার পয়লা বৈশাখে দোকানে হালখাতা হলো না, তার উপর বিয়ে, উপয়নয়, অন্নপ্রাশন সবই বন্ধ৷ আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল৷’’