লবণের খনির মধ্যে গির্জা, হোটেল
২২ জুলাই ২০১৬মাটির নীচে অনেক গভীরে এক অভিনব জগত৷ তাতে রয়েছে এক চ্যাপেল, স্পা এবং পর্যটকদের জন্য খনি সংক্রান্ত ওয়ার্কশপ৷ ভিয়েলিচকায় বাতিল লবণ খনির মধ্যে এ সব দেখতে পাওয়া যায়৷ প্রায় ৭০০ বছর ধরে এই খনি সক্রিয় ছিল৷ এখন শ্রমিকদের বদলে পর্যটকদের ভিড়৷ বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ঘুরে দেখতে বছরে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ আসেন৷ এই পাতাল জগত ঘুরে দেখার দু'টি উপায় রয়েছে৷ পায়ে হেঁটে নীচে নামা যায়৷ অথবা আরও দ্রুত গতিতে লিফটে করে পৌঁছানো যায়৷
খনির মধ্যে ৬৪ থেকে ১৩৫ মিটার গভীরে সব মিলিয়ে মোট ন'টি স্তর রয়েছে৷ কয়েক'শ বছরের খননের ফলে দুই হাজার চেম্বার তৈরি হয়েছে৷ সেই সব জায়গায় আজ শ্রমিকদের তৈরি লবণের ভাস্কর্য শোভা পাচ্ছে৷
প্রায় ঘণ্টাখানেক চলার পর ১১০ মিটার গভীরে খনির সেরা আকর্ষণ চোখে পড়ে৷ ১৮৯৫ সালে তৈরি সেন্ট কিংগা পাতাল-গির্জা৷ ভূগোলবিদ মারেক স্ট্রোইনি বলেন, ‘‘সাধারণত প্রতি বছর বিভিন্ন দুর্ঘটনায় তিন-চার জন খনি-শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে৷ তাই শ্রমিকরা প্রার্থনার জায়গা চেয়েছিল৷ সে কারণেই তারা খোদাই করে চ্যাপেল ও ধর্মীয় মূর্তি বানিয়েছে৷''
কিংগা-চ্যাপেলে নিয়মিত প্রার্থনাসভা ও বিয়ের অনুষ্ঠান হয়৷ কমপক্ষে ১,১০০ ইউরো দান করলে নবদম্পতিরা এখানে বিয়ে করতে পারেন৷ এই চ্যাপেল গোটা বিশ্বে তার অ্যাকুস্টিক্স-এর জন্য বিখ্যাত৷ তাছাড়া লবণের ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি ঝাড়লণ্ঠনের মতো অনেক খুঁটিনাটি বিষয়ও নজর কাড়ার মতো৷ দর্শকরাও মুগ্ধ৷
এমন খনিতে কাজের অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন ছিল, দর্শকরা খনির অন্য একটি অংশে তার স্বাদ পেতে পারেন৷ তবে সেই ভ্রমণের জন্য পেশাদারি সাজ-সরঞ্জাম প্রয়োজন৷ সেইসঙ্গে চাই লবণ ভাঙার শক্তি৷ সেই লিফট দেখলে অতীত সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়৷
ভিয়েলিচকায় ক্রনিক রোগীদেরও সাহায্য করা হয়৷ অ্যাসমা বা হাঁপানি এবং অ্যালার্জি থাকলে এই ‘পাতাল হাসপাতাল' নিরাময়ের আশা দিতে পারে৷ মাটির প্রায় ১৩৫ মিটার নীচে আছে এক ভিন্ন ধরনের স্যানেটোরিয়াম৷ সেখানকার ভালো বাতাস রোগ সারিয়ে তুলতে পারে৷ বায়োলজিস্ট মাগডালেনা কস্ট্রোৎসোন বলেন, ‘‘উচ্চ মাত্রার আর্দ্রতা, স্থিতিশীল তাপমাত্রা এবং বাতাসে উচ্চ মাত্রার ন্যাট্রিয়াম ক্লোরাইড এখানকার বৈশিষ্ট্য৷ ভূ-পৃষ্ঠের মতো এখানো কোনো দূষণ বা অ্যালার্জি-সৃষ্টিকারক পদার্থ নেই৷''
খনির মধ্যে তিন ঘণ্টা কাটিয়েও যাদের আশ মেটেনি, তাদের জন্য রাত কাটানোর ব্যবস্থাও আছে৷ এটাই ভিয়েলিচকার লবণ খনির সর্বশেষ আকর্ষণ৷