1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লাইপজিশ শহরে মেয়েদের ফুটবল ক্যাম্প

মারিনা জোয়ারদার১৩ আগস্ট ২০০৮

গত বছর জার্মানির প্রমিলা ফুটবল দল বিশ্বকাপ জিতে প্রমাণ করে দেয় যে ফুটবল শুধু পুরুষদের খেলা নয়৷ ফুটবলের জগতে জার্মান প্রমিলা দল গত বছর থেকে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যেন

https://p.dw.com/p/EwWc
মুসলিম মেয়েরাও পিছিয়ে থাকতে রাজী নয়ছবি: DPA

এমনকি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও মহিলা ফুটবলের ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মেয়েরা যেন ফুটবল খেলায় অনেক এগিয়ে আসতে পারে সেই চেষ্টাই তারা করছে৷ জার্মানির পূর্বে অবস্হিত লাইপসিশ শহরে তৈরী করা হয়েছে মেয়েদের ফুটবল ক্যাম্প৷ পৃথিবীর যে সব দেশে মেয়েরা ফুটবল খেলছে তারা জড়ো হয়েছে লাইপসিশে৷ গোল্ড মেডেল বা প্রথম স্হান অধিকার করার চেয়ে অংশগ্রহণই মুখ্য হয়ে দেখা দিয়েছে৷ ১০ই অগাস্ট থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্প এবং শেষ হবে আগামী ১৫ই অগাস্ট৷

সকাল ন টা৷ একটি ট্রেনিং ম্যাচ দিয়ে দিন শুরু৷ ৬ টি দেশ থেকে ২৬ জন মেয়ে দ্রুতগতিতে দৌড়াচ্ছে বলের পেছনে৷ তাদের ওপর দৃষ্টি রাখা কিছুটা কষ্টকর৷ দ্রুত দৌড়াতে থাকা মেয়েদের পরস্পর থেকে একটু পৃথক রাখার কাজটা বেশ কঠিন৷ কিন্তু সেই দায়িত্বই পালন করার চেষ্টা করছেন হাইনরিশ সোবোটকা৷ ট্রেনিং ম্যাচে অংশ নিচ্ছে অন্যান্যদের সঙ্গে জর্ডানের একটি মেয়ে৷ তিনি বললেন,

একমাত্র এই মেয়েটিই মাথায় স্কার্ফ পরে খেলে৷ খেলার মাঠের বাইরেও সে সব সময়ই মাথা ঢেকে রাখে৷ সবাই এটি বেশ সহজভাবেই মেনে নিয়েছে৷ এই হিজাব না থাকলে অবশ্য কেউই বুঝতে পারবে না না কে কোন দেশ থেকে এসেছে৷ কে সার্বিয়া থেকে, কে তুরস্ক থেকে, কেই বা জর্ডান থেকে - পার্থক্য ধরা মুস্কিল৷

কে মাথায় হিজাব পরল আর কে পরল না তাতে লাইপসিশের ক্যাম্পে কোন বাধার সৃষ্টি করছে না৷ আয়োজকদের মধ্যে রয়েছে হাইনরিশ সোবোটকা৷ সে ইউরিয়েন্ট নামের একটি দলে খেলে৷ এই সংস্হাটিই লাইপসিশের প্রমীলা ফুটবল ক্যম্পিংয়ের মূল আয়োজকদের অন্যতম৷ জর্ডান, আলজিরিয়া, নরওয়ে, সার্বিয়া, তুরস্ক এবং জার্মানি থেকে মেয়েরা জার্মানিতে এসেছে খেলতে৷ গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে তাদের ট্রেনিং৷ সবাই একসঙ্গে খেলছে, শিখছে, অর্জন করছে অভিজ্ঞতা৷ নরওয়ে থেকে এসেছে হিলডা বর্শডোয়ে৷ ১৯ বছর বয়স্কা বর্শডোয়ে নরওয়ের মহিলা ফুটবল ক্লাব ট্রন্ড হাইমের একজন তুখোড় খেলোয়াড়৷ বর্শডোয়ের মতে খেলায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ সে আরো জানালো, আমি খুব বেশী কথা বলি৷ মাঠের ভেতরে এবং বাইরে৷ এটি খুব জরুরী এবং খেলা তাতে বেশ সহজ হয়৷ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল খেলোয়াড়ের অবস্হান কোথায়, এবং সে কিভাবে দেখছে৷ কেউ যদি জীবনে পক্ষপাতহীন হয় তাহলে খেলার মধ্যে দিয়ে তা ফুটে উঠবে৷ ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে সাধারণ এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়বে৷ আমি এভাবেই খেলাকে দেখছি৷

Fußball Frauen Länderspiel Deutschland China
ফুটবলে মেয়েদের আধিপত্য বিস্তার ক্রমেই এগিয়ে চলছেছবি: Picture-Alliance /dpa

ফুটবল খেলার মাঠ স্বাভাবিক জীবনের প্রতিচ্ছবি, সমাজের প্রতিচ্ছবি৷ তবে মেয়েদের ফুটবলে ঘড়ির কাঁটা যেন ঘুরছে অন্যভাবে৷ সবাই তেমন পারদর্শী নয়, লাইপসিশে সবার জন্য ফুটবল খেলা ছিল অবসর সময় কাটানোর একটি সুযোগ মাত্র৷ আলজিরিয়ার মেয়েদের জন্যও সে কথা প্রযোজ্য ৷ রাদিয়া সেমোর আলজিয়ার্সের একটি ক্লাবে খেলে৷ ৩০ বছর বয়স্ক রাদিয়া গত ১০ বছর ধরে ফুটবলের সঙ্গে জড়িত৷ তার প্রিয় খেলোয়াড় জ়িনেদিন জ়িদান৷ লাইপসিশে অংশগ্রহণ তার জন্য ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ সে জন্যই আসা৷ রাদিয়া সেমোর বলল, প্রথমে আমি ভেবেছি এখানে ফুটবল খেলার জন্য আসা৷ কিন্তু পরে আমি আমার মত পাল্টাই৷ গত কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু মেয়ের সঙ্গে আমরা খেলেছি, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের খেলোয়াড়৷ আমরা নিজেদের বোঝার চেষ্টা করেছি, একই ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করেছি৷ নিজেদের দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অন্য সবকিছু নিয়ে আমরা কথা বলেছি, আলাপ আলোচনা চালিয়ে গিয়েছি৷ শুধু ফুটবল খেলার জন্য এখানে আসা নয়, সবার সঙ্গে মেশা, নিজেকে জানা, অন্যদের চেনা৷ আমার দেখে ভাল লাগছে যে অনেকের সঙ্গে মেশার সুযোগ আমরা পেয়েছি, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতি ধর্ম, বর্ণ একসঙ্গে একই জায়গায় এসে জড়ো হয়েছে৷

ফুটবলকে মাধ্যম করে সংস্কৃতি এবং ভাবের আদান প্রদান হচ্ছে লাইপসিশে৷ এবং তা শুধু খেলোয়াড়দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় তা ছড়িয়ে পড়েছে দর্শকদের মধ্যেও৷ নতুন দৃষ্টিতে নতুন আঙ্গিকে এই মেয়েরা ফুটবলকে দেখছে৷ তবে অধীর আগ্রহে সবাই অপেক্ষা করছে ১৫ই অগাস্টের শেষ খেলার জন্য৷ আগামী বছরও এই মহিলা ফুটবল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি৷