‘লাজ’ ভাঙাতে সিঙ্গাপুরি স্টাইল
১৩ আগস্ট ২০১০ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুর, লোকসংখ্যাও কম৷ এখন তা আরো কমের দিকে৷ কারণ নাকি লজ্জা৷ ‘লাজুক' তরুণ-তরুণীরা বিয়ের পিঁড়িতে বসে চাচ্ছেন না৷ আর তার অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে বাড়ছে না জনসংখ্যা৷ এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে৷ তাই তরুণ-তরুণীদের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ যেন বাড়ে সেই জন্যই প্রচারাভিযান চালানোর এই উদ্যোগ৷
সিঙ্গাপুরের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি দরপত্রের নোটিশ ঝুলিয়েছে তাদের ওয়েবসাইটে৷ তাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে আহ্বান রাখা হয়েছে, একটি প্রচারাভিযান চালানো হবে৷ কারা চালাবেন, তারা দরপ্রস্তাব জমা দিন৷ বিষয়টি হলো, কী কী করলে বিয়ে আর সন্তান পয়দা করতে সবাই আগ্রহী হবে, তান সুলুকসন্ধান করতে হবে৷ দরপত্র বিজ্ঞপ্তিতে এর বেশি কিছু বলা হয়নি৷ যেটুকু উহ্য রেখেছে সরকার, তা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে সেদেশের পত্রিকা স্ট্রেইট টাইমস৷ তারা বলেছে, একটি টিভি বিজ্ঞাপন তৈরি হবে৷ বাংলাদেশ, ভারত, চীনের মতো দেশে যখন প্রচার হয়, সন্তান একটি হলে আর দুটি নয়৷ তখন সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞাপন হবে - বিয়ে করুন আর বাচ্চা-কাচ্চায় ভরিয়ে দিন দেশ৷ এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য তারাই, যাদের বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে৷
পরিসংখ্যান বলছে, সিঙ্গাপুরে বিয়ের সংখ্যা ২০০৯ সালে আগের বছরের চেয়ে এক শতাংশ কমেছে৷ নারী প্রতি শিশুর সংখ্যাও প্রায় এক শতাংশ কমে এখন মাত্র এক দশমিক ২৩৷ সরকারের এই চেষ্টায় যে যুব নর-নারীরা পরস্পরের প্রতি ঝুঁকে পড়বে, তেমন লক্ষণ অবশ্য এখনি দেখা যাচ্ছে না৷ বার্তা সংস্থা এএফপি প্রতিক্রিয়া জানতে চাইছিল সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া কো হুন কিয়াত-এর৷ কিয়াতের চোখে পুরো ব্যাপারটি হাস্যকর৷ সরকারের প্রচারে বিয়েতে আগ্রহী হবেন কি না - জানতে চাইলে তাঁর উত্তর ছিল - ‘‘কার্তিকের কুকুর হওয়ার মতো অবস্থা আমার এখনো হয়নি৷'' অর্থাৎ, সরকারের পরিকল্পনায় অনেকটা জল ঢেলে দিলেন ২৫ বছর বয়সি এই যুবা৷
তবে সরকার কিন্তু বেশ ভাবিত, তা সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর কার্যক্রমে স্পষ্ট৷ আগামী ফেব্রুয়ারিতে শুরু হচ্ছে চীনের চান্দ্র বৎসর, এটাকে বলা হচ্ছে ‘বাঘ বর্ষ'৷ এই বছরে সন্তান জন্ম নিলে পশু স্বভাবের হবে - এমন একটা কুসংস্কার আছে৷ তাই অনেক দম্পতিই সন্তান নিচ্ছেন না৷ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, কুসংস্কারের এই বলয় ছিন্ন করুন৷ জন্ম দিন আরো সন্তান৷
সিঙ্গাপুরের মোট জনসংখ্যা ৫০ লাখের মতো, এর মধ্যে ১০ লাখই অভিবাসী৷ অভিযোগ রয়েছে, সিঙ্গাপুর সরকার নাকি নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিষয়ে অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ করে৷ বিয়ে আর সন্তান বাড়ানোর উদ্যোগও তারই নজির বলে মনে করছেন অনেকে৷ আসলে তরুণ-তরুণীরা এত লাজুক হয়ে পড়েছে, সরকার আর কী করবে? জনসংখ্যা বাড়ানো বলে কথা৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ