শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপি
১৪ জানুয়ারি ২০১৪নতুন শপথ নেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে৷ তবে নির্বাচন নিয়ে হতাশার কথা আবারো জানিয়েছে দেশটি৷ মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ-এর নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘‘নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ হিসেবে আপনারা স্বীকৃতি দেননি৷ তবে এখন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন৷ তা এবার, এই সরকারকে আপনারা কি স্বীকৃতি দেবেন?'' জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘‘বিষযটি আসলে এমন নয়৷ আমরা অবশ্যই নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করি৷ কিন্তু এ সব নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যেই আমরা হতাশার বিষয়টি পরিষ্কার করেছি৷ আমাদের দৃষ্টিতে যেহতেু নতুন সংসদের অধিকাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি বা নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, কাজেই এ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন হয়নি৷ আর এ কারণেই আমাদের উদ্বেগ৷''
এছাড়া, তারা হাসিনা সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে কিনা – এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘‘অবশ্যই আমরা কাজ চালিয়ে যাব৷ তবে নির্বাচন নিয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টিও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে রাখছি৷'' প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও এর আগে হতাশা প্রকাশ করে৷
তবে ভারত, চীন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল এবং কম্বোডিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে৷ ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে তাদের সহিংসতা পরিহারের জন্য আহ্বান জানিয়েছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, বৃহত্ শক্তিগুলো তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্র নিয়ে তাদের আগ্রহ দেখালেও তাদের মূল আগ্রহ বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বণিজ্যের দিকে৷ তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিচ্যুতি দেখা গেলেও তা তাদের মূল স্বার্থে কতখানি আঘাত করবে, সেটাই তারা প্রথম বিবেচনায় নেবে৷ হঠাত্ করে চলমান সম্পর্কে তারা কোনো পরিবর্তন আনবে না৷ তিনি মনে করেন, নতুন সরকার গঠন হয়ে যাওয়ায় এখন তারা সরকারকে পর্যবেক্ষণে রাখবে৷ আর সবার অংশগ্রহণে নতুন একটি নির্বাচনের জন্য ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করার কাজ অব্যাহত রাখবে৷ তবে সেটা এমন নয় যে, ছয় মাসের মধ্যেই তারা নতুন একটি নির্বাচন চাইবে৷
ড. শান্তনু মজুমদার বলেন, বৃহত্ শক্তিগুলো বিরোধী দলকেও পর্যবেক্ষণে রাখবে৷ তারা চাইবে না যে, নতুন একটি নির্বাচনের জন্য আবার একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হোক৷ কারণ বিশৃঙ্খল অবস্থা তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্থ করে৷ এ জন্য তারা বিরোধী দলকে সরাসরি সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছে৷ তারা চাইছে, আলাপ-আলেচনার মাধ্যমে সরকার এবং বিরোধী দল যেন সমঝোতায় আসে৷ বিরোধী দল যেন আলেচনার টেবিলে আসে৷
সরকারি দল ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার চাপ কমানোর জন্য সমালোচকদের সংখ্যা কমাতে চাইছে৷ এছাড়া দেশের ভেতরে চাপ কমাতে তারা পদ্মা সেতু, বিদ্যুৎ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধকে আগ্রাধিকারে রেখেছে৷ তারা মনে করে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ইতিবাচকভাবে এগোনো গেলে মানুষের মনোভাবে পরিবর্তন আসবে৷ এর সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের বিচারকেও এগিয়ে নিতে চায় তারা৷
অন্যদিকে বিএনপি এখন আন্দোলনের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে ভাবছে৷ এ কারণেই জামায়াত এবং বিএনপির এক প্রবাসী নীতি-নির্ধারকের চাপ থাকার পরও তারা টানা অবরোধ থেকে সরে এসেছে৷ আগামীদিনের আন্দোলনকে তারা সহিংসতামুক্ত রাখতে চাইছে৷ তাই ২৯শে জানুয়ারির আগে বড় কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি৷ ঐ দিন নতুন সংসদের অধিবশেন বসছে৷ সে কারণে ২৯শে জানুয়ারি সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দিতে পারে বিএনপি৷ বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বুধবার বিকেলে বিরোধী দলের সর্বশেষ অবস্থান এবং নতুন আন্দোলন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন৷
এদিকে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হয়েছে শনিবার৷ সরকার পরিচালনা এবং চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে এই সভা বেশ গুরুত্বপূর্ণ৷ আর সংসদীয় বোর্ডের সভা বসবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়৷