শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, আ. লীগ কার্যালয় ভাঙচুর
৪ আগস্ট ২০১৮প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দুপরের সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় অবস্থান করছিলেন৷ তখন জিগাতলা এলাকায় ছাত্রদের ওপর হামলার গুজব ছড়ায়৷ এই গুজবে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার শিক্ষার্থীরা দৌড়ে জিগাতলার দিকে যাওয়া শুরু করেন৷ তখন বিজিবি গেটের সামনে তাদের ওপর হামলা হয়৷ ছাত্রলীগের কর্মীরা এই হামলায় জড়িত বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ৷ তখন ছাত্রদের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ হয়৷
এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে চারজন ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার গুজব ছড়ানো হয়৷ বিশেষ করে অভিনেত্রী নওশাবা ফেসবুক লাইভে গিয়ে এই তথ্য দিয়ে সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান৷ এরপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা একটি অংশ ধানমন্ডির ৩/এ নম্বরে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালায়৷ ওই সময় আওয়ামী লীগ অফিসের মধ্যে কয়েকজনকে আটকে রাখার গুজবও ছড়ায়৷
এরপর আওয়ামী লীগ অফিসে শিক্ষার্থীরা হামলা চালালে সেখান থেকেও পাল্টা হামলা হয়৷ এসময় ওই এলাকায় দু'পক্ষের হামলা ও পাল্টা হামলায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়৷ ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিক নুরুজ্জামান লাবু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘দুই পক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে হামলা ও পাল্টা হামলা করে৷ পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে৷ হামলায় উভয় পক্ষের লোকজনই আহত হয়৷ ২০-২৫ জন ছাত্র আহত হয়েছে৷ বেশ কিছু ছাত্রকে আটক করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ হামলায় ৫ জন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন৷''
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে হামলায় তাদের ১৭ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে৷ সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দাবি, ‘‘প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হামলাকারীরা ব্যাগে করে এই পাথর নিয়ে এসেছে৷ তাদের কারো কারো হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল৷ এই হামলার স্টাইল দেখে আমি বলতে পারি, এটা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা করতে পারে না৷ কারণ, এটা কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়৷ ছাত্রদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ও মতলববাজ বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা এসব কাজ করছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘এই পাথর আজকে স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যা আছে, তার চেয়ে বেশি আছে ওই বিএনপি এবং তাদের সাম্প্রদায়িক দোসরদের হাতে৷ তারা নতুন নতুন স্কুল ড্রেস তৈরি করছে৷ মিরপুর থেকে নকল আইডি কার্ড তৈরি করছে৷ এরপর তারা স্কুল ও কলেজের ড্রেস পরে আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে৷''
এদিকে বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর একটি টেলিফোন অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে৷ ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেছেন, ‘‘কুমিল্লা থেকে লোক এনে বিএনপি সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে ঢুকে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল৷ সেই অডিও ফাঁস হয়ে গেছে৷''
কিন্তু আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই অডিও বানোয়াট৷ এটা আমার না৷ অতীতেও আওয়ামী লীগ এ ধরণের নানা কথা বলেছে৷ নিজেদের রক্ষার জন্যই তারা এসব করেছে৷''
আর অভিনেত্রী নওসাবা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত৷ আমাকে ফোনে একজন চার জন নিহত এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার খবর দিয়েছেন৷ আমি পুলিশকেও জানিয়েছি৷ এরপর সবাইকে সচেতন করতে ফেসবুক লাইভে তা জানিয়েছি৷'' তবে এ বিষয়ে তিনি নিজে নিশ্চিত না, সেটাও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷''
বিকেল ৫টার পর ধানমন্ডি এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে৷ ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘‘এখন ওই এলাকা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে আছে৷''
শনিবার পুরো ঢাকা শহরেই বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীরা৷ তবে যানবাহন ছিল কম৷ পাবলিক বাস দেখা যায়নি৷ শিক্ষার্থীরা ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা মাঠে থাকবেন৷
পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন রবিবার থেকে রাজধানীতে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে ব্যাপক তল্লাশি শুরু হবে৷
গত রবিবার দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকে) বাসচাপায় রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়৷ দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে তারা নিহত হন৷ নিহতরা হলেন দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম৷ এরপরই নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্ররা মাঠে নামে৷ শনিবার রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঁচটি বাস হস্তান্তর করা হয়েছে৷