শিথিল বিধিনিষেধে করোনা রোখার চেষ্টা
২৩ মে ২০২১এবার লকডাউন বাড়ানোর সাথে আরো কয়েকটি ঘোষণা এসেছে৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন, দূরপাল্লার বাস ও লঞ্চ চলবে৷ হোটেল, রোস্তারাঁ, খাবারের দোকানে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাওয়া যাবে৷ যানবাহনে অর্ধেক আসন খালি থাকবে৷ ভাড়া দিতে হবে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি৷ সোমবার থেকে এসব নিয়ম কার্যকর হচ্ছে৷
এর আগে লকডাউনে গণপরিবহন আর ট্রেন ছাড়া সবকিছু খোলা ছিলো৷ স্বাস্থ্যবিধি আর মাস্ক পরার জন্য বলা হলেও তা তেমন কার্যকর হয়নি৷ সরকার মাস্ক পরাতে আইন প্রয়োগের কথাও চিন্তা করছে৷ বন্ধ থাকছে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷
বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর গত ৫ এপ্রিল থেকে ‘কঠার লকডাউন’ শুরু হয়৷ কিন্তু তিনদিনের মাথায় তা ঢিলেঢালা হয়ে যায়৷ পুলিশের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়েও চলাচলের কথা বলে হলেও পরের দিকেও তাও শিথিল হয়ে পড়ে৷ এরপর ধারাবাহিকভাবে বিধিনিষেধের সময়সীমা বাড়ে সঙ্গে একে একে সব খুলেও দেয়া হয়৷ ঈদের সময় ফেরিঘাটে বিজিবি মোতায়েন করেও বাড়িমুখো মানুষের ঢল থামানো যায়নি৷ ঈদের পরও তারা এসেছেন একইভাবে৷
এর আগে গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলে ২৬ মার্চ থেকে টানা ৬৬ দিন সব কিছু বন্ধ ছিলো৷ আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় ১৮ মার্চ থেকে৷
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ১২ হাজার ৩৭৬ জন৷ আর করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন সাত লাখ ৮৯ হাজার ৮০ জন৷ রবিবার ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৮ জন৷ করোনা শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৩৫৪ জনের৷
ভাইরোলজিস্ট ও করোনা সংক্রান্ত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য এবং বিএসএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মনে করেন, ‘‘দূরপাল্লার বাস এবং ট্রেন চলাচল শুরুর চাপ ছিলো৷ তাই সরকার কৌশলে বিষয়টি সহজ করে দিয়েছে৷ বিধিনিষেধের সময়ও বাড়িয়েছে আবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খোলারও অনুমতি দিয়েছে৷ সরকার একটা কৌশল অবলম্বন করেছে৷ আসলে তো সব কিছু তো খুলেই গেছে৷''
তিনি বলেন, ‘‘ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে ব্যাপক প্রবণতা দেখা গেছে তার প্রভাব দেখতে আমাদের আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে৷ কারণ কেউ সংক্রমিত হলে তা প্রকাশ পেতে কমপক্ষে ১৪ দিন সময় লাগে৷ তাই আগামী ২৬-২৭ তারিখে তা বোঝা যাবে৷’’
তার মতে, ‘‘বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি লকডাউন সম্ভব নয়৷ তাই আমরা সরকারকে শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধির ওপর জোর দিতে বলেছিলাম৷ বিশেষ করে মাস্ক পড়ার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে বলেছি৷ কিন্তু সেটা হয়নি৷ এখনো বলছি সবাইকে মাস্ক পরাতে হবে৷ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে৷ এর কোনো বিকল্প নাই৷’’
সোহারাওয়ার্দী হাসপাতালের ভাইরোলজিস্ট ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘‘এখন যা হচ্ছে তা বোঝা কঠিন৷ সবকিছুই তো খুলে দেয়া হচ্ছে৷ তাহলে বিধিনিষেধ কোথায়? আমরা শুরু থেকেই এই অব্যস্থাপনা দেখে আসছি৷ সেটা নিয়ে এখন বলতে বলতে ক্লান্ত৷ আর বলতে ইচ্ছা করে না৷’’
তার মতে, ‘‘যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় করোনা সংক্রমণ কিছুটা কমেছে৷ এখন খুলে দেয়া হয়েছে৷ কিছু দিন পর এর ফলাফল বোঝা যাবে৷’’
এদিকে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই আমরা নতুন নির্দেশনা দিয়েছি৷ সংক্রমণ বাড়লে আমাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হবে৷’’এদিকে ভারতে শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরনে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে নয়জন শনাক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷ সন্দেহভাজন আরও কয়েকজনের নমুনা জিনগত পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে৷