সবার ‘অধিনায়ক' হয়ে গেলেন সাকিব
২ সেপ্টেম্বর ২০১৯কবিতা অনেকেই লেখেন, কিন্তু সত্যিকারের কবি ক'জন আর হতে পারেন! যুগে যুগে মাঠের নেতাও অনেকেই হয়েছেন, কিন্তু মাঠের সীমানা পেরিয়েও নেতৃত্বের সেই মানসিক উদারতা ক'জন নিয়ে যেতে পেরেছেন? বাংলাদেশে মাশরাফী তা পেরেছেন, সাকিবও হয়ত পারবেন৷ সাকিবের অতীত অবশ্য তেমন আশায় সমৃদ্ধ নয়৷ অধিনায়ক সাকিবের প্রথম পর্বে তাই বিতর্ক, সমালোচনাও আছে বিস্তর৷ তখন ও তার পরে খানিকটা পথ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ৷ হাল ধরতে হয় মাশরাফীকে৷ গত কয়েক বছরে মাশরাফীর নেতৃত্বেই আমাদের স্বপ্নগুলো নতুন উচ্চতা পায়৷ আবার পালাবদলের সময় এসেছে৷ ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকে ফিরে ফিরে আসছে মাশরাফীর অবসরের কথা৷ সম্প্রতি সেই বিষয়েই কথা বলেছেন সাকিব আল হাসান৷ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতার দায় অধিনায়ককেও দিয়ে বলেছেন, ‘‘'আমি সবসময় বিশ্বাস করি, আমরা আরো অনেক দূর যেতে পারতাম৷ যদি দলের সবার কাছ থেকে সহায়তা পেতাম, তাহলে আমরা সেমিফাইনালেও খেলতে পারতাম৷ বহু কারণেই সম্ভব হয়নি৷ যখন একজন খেলোয়াড় পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়, দলের চেয়ে সে তখন নিজের পারফরম্যান্স নিয়েই বেশি চিন্তায় থাকে৷ তখন এটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ আমি মনে করি, একই ব্যাপার মাশরাফী ভাইয়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে৷ অধিনায়ক যখন পারফর্ম করতে পারেন না, এটা তখন তার নিজের ও পুরো দলের জন্যই সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়৷ ''
এখানেই থেমে থাকেননি ২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে সবচেয়ে উজ্জ্বল ক্রিকেটার সাকিব৷ অন্য সতীর্থরাও যে খুব একটা ভালো করেননি সে কথাও বলেছেন৷ তাহলে কি নিজেকে বড় করে দেখানোই তাঁর বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য? এ পর্যন্ত শুনলে তা-ই মনে হবে৷ কিন্তু অধিনায়কত্ব নিয়ে নিজের ভাবনায় সেই আশঙ্কা দূর করেছেন সাকিব৷ ইতিমধ্যে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব পেয়ে গেছেন৷ টেস্ট দলের দায়িত্ব পাওয়াও সময়ের ব্যাপার৷ সাকিব জানালেন, ‘‘মানসিকভাবে আমি ওসবের (অধিনায়কত্ব) জন্য প্রস্তুত নই৷ কিন্তু দল ভালো অবস্থায় নেই এবং আমি বুঝতে পারছি দলকে একটা ভালো অবস্থানে নিতে হলে দায়িত্বটা নেওয়া উচিত৷ কিন্তু আমি আগ্রহ পাচ্ছি না৷ আমি যদি দায়িত্ব না নিই, আমি আমার খেলায় মনোযোগ দিতে পারব৷ এটা দলেরও কাজে লাগবে৷''
সাকিব আরো বলেছেন, ‘‘'আমি চাই নতুনেরা দায়িত্ব নিক৷ তাদের কাঁধে দায়িত্ব না দিলে আপনি বুঝতে পারবেন না তারা কেমন করবে৷ যখন মাত্র ২২ বছর বয়সে আমাকে নেতৃত্ব দেওয়া হলো, কে জানতো আমি কতটা ভালো করব?''
তিন ফর্ম্যাটেরই অধিনায়ক হলে হয়ত ভালোই করবেন সাকিব৷ এখন বয়স আর কম নয়, ২৯৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিজ্ঞতাও তো কম হলো না৷ তাই অধিনায়কত্বের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত নন জানানোর পরও সাকিবের কথাগুলো আশা জাগিয়েছে৷ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সবার প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলেও খুব খারাপ একেবারেই করেনি৷ এক আসরের পারফর্ম্যান্স দিয়ে মাশরাফিকে মূল্যায়ন করাও ঠিক নয়৷ অবশ্য সাকিব তা করেনওনি৷ বিশ্বকাপে মাশরাফী যে কারণে ব্যর্থ হয়েছেন, সে কারণে ভবিষ্যতে তাঁরও যে ব্যর্থ হবার আশঙ্কা রয়েছে সেই ইঙ্গিতও রেখেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার৷ এভাবে দেশের ক্রিকেটকে একটু সময় নিয়ে হলেও মসৃণ পথে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাই দিয়েছেন তিনি৷
অনেকেই অধিনায়ক, কিন্তু শচীন টেন্ডুলকার, সাকিব আল হাসান অনেকেই হতে পারেন না৷ অধিনায়ক হিসেবে ভালো করতে পারছিলেন না টেন্ডুলকার৷ বিরূপ সমালোচনা হয়েছে অনেক৷ এক পর্যায়ে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন শচীন৷ ফিরেছিলেন আজহার৷ আজহারের নেতৃত্বে প্রথম টুর্নামেন্ট খেলতে নেমেই ভারতকে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপ জিতিয়েছিলেন শচীন৷সাকিবের বলে-ব্যাটে এমন অনেক জয় চায় বাংলাদেশ৷ সব ফর্ম্যাটের অধিনায়ক হলেও, না হলেও৷