সাগরের মাঝখানে হোটেল
২৮ জুলাই ২০১৬সাগরের মাঝখানে হোটেল, নাম আবার স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷ দক্ষিণ ইংল্যান্ডের উপকূল থেকে এক সামুদ্রিক মাইল দূরত্বে৷ ব্রিটেনের লাক্সারি হোটেলগুলির মধ্যে এ এক বিশেষ ধরনের বিলাস!
অতীতে স্পিটব্যাংক ছিল সত্যিই একটি ফোর্ট বা দুর্গ, যার কাজ ছিল পোর্টসমথ বন্দরে ঢোকার মুখটি সুরক্ষিত করা৷ আজ সেই ফোর্ট পরিণত হয়েছে একটি লাক্সারি হোটেলে৷
তীর থেকে হোটেল পর্যন্ত আসাটাই একটা অ্যাডভেঞ্চার৷ তবে সাগরের স্রোত এখানে কম নয়, কাজেই বোটের ওঠানামায় সি-সিক হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে৷
ফোর্ট ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স বলেন, ‘‘আমরা এখন স্পিটব্যাংক ফোর্টের দিকে চলেছি৷ আমি হলাম ডমিনিক, ফোর্ট ম্যানেজার৷ মাত্র দশ থেকে ১৫ মিনিটের যাত্রা৷ ঐ তো, সামনেই দেখতে পাচ্ছেন স্পিটব্যাংক ফোর্ট৷''
হেদার-এর একটি বহুদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো৷ স্বামী গ্র্যাহামের সত্তরতম জন্মদিন উপলক্ষ্যে তিনি এই ট্রিপটি কামনা করেছিলেন৷ হেদার বলেন, ‘‘খুব রোমাঞ্চকর, তাই না? বাতাস যে আরো জোরালো নয়, সাগর যে আরো উত্তাল নয়, সেটাই সৌভাগ্য৷''
কেল্লা তো নয়, লাক্সারি হোটেল
১৩৮ বছরের পুরনো ফোর্টটি দেখলে মনে হবে না যে, এটি একটি লাক্সারি হোটেল৷ পৌঁছনোর পর অতিথিদের খাড়া সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়৷ তারপর শুরু হয় শ্যাম্পেনের গ্লাস দিয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা৷ হেদার বললেন, ‘‘আমি যা ভেবেছিলাম, তা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ কিন্তু এরকম সব দেয়াল, কোণায় কোণায় ছোট ছোট ঘর, এ সব এখনও আছে বলে ভাবিনি৷ আমার দারুণ লাগে৷''
আগে যেখানে গোলাগুলি আর বারুদ রাখা হতো, আজ সেখানে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়৷
দিন কয়েকের ছুটি কাটানোর জন্য স্পিটব্যাংক ফোর্টের জুড়ি নেই৷ ব্রিটিশ কোটিপতি মাইক ক্লেয়ার ফোর্টটি কেনেন ২০০৯ সালে মাত্র ১৩ লাখ ইউরো মূল্যে, পরে আরো ৪০ লাখ ইউরো ব্যয় করে ফোর্টের খোলনলচে পালটে দেওয়া হয়৷
ফোর্ট ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স ঘোষণা করলেন, ‘‘আপনারা থাকবেন অ্যাডমিরাল চার্চিল সুইটে৷''
হেদারের প্রতিক্রিয়া হল, ‘‘ও মা, দেখো, দেখো৷ এতো বড় হবে, ভাবতে পেরেছিলে? বাকি ফোর্টের তুলনায়৷ অবিশ্বাস্য৷''
ফোর্ট ম্যানেজার ডমিনিক হোন্স বললেন, ‘‘এটা হল সমুদ্রের দিকে মুখ করা কামানের ঘরগুলোর একটি৷ আগে এখানে সাড়ে বারো ইঞ্চি ব্যাসের একটা কামান গোটা ঘরটা জুড়ে থাকত৷''
স্পিটব্যাংক ফোর্টে এরকম ন'টি সুইট আছে৷ প্রত্যেকটি সুইটের স্টাইল আলাদা৷ গ্র্যাহাম পর্যন্ত খুশি৷
গ্র্যাহাম মনে করেন, ‘‘হ্যাঁ, আমাদের দু'জনের জায়গা হয়ে যাবে৷ তারপরও জায়গা থাকবে৷''
সৈন্যদের বদলে হোটেল গেস্ট
দিনে ছ'হাজার তিনশ' ইউরো খরচ করতে পারলে গোটা স্পিটব্যাংক ফোর্টটাই বুক করা যায়৷ আগে জলের নীচের ঘরগুলোতে শ'দুয়েক সৈন্যের শোয়ার ব্যবস্থা ছিল৷ আজ সেখানে হোটেল গেস্টদের জন্য বার৷
স্পিটব্যাংক ফোর্টের ইতিহাস না শুনলে অযাত্রা হয়৷ ডমিনিক হোন্স সেই ইতিহাস শোনালেন, ‘‘মাটিতে কামানের চাকা ঠেলার যে দাগগুলো ছিল, তা এখনও দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়া কামানগুলো নাড়াচাড়া করার জন্য ছাদ থেকে দড়ি ঝোলানোর আংটাগুলোও দেখতে পাবেন৷''
একটি ছোট মিউজিয়ামে গেলে দেখা যাবে, পাথরের দুর্গে মানুষ আগে কীভাবে থাকত ও কাজকর্ম করত৷
ডমিনিক হোন্স জানালেন, ‘‘এখানে দু'শ সৈন্যের খাবার তৈরি হতো৷ আমরা এখানে নানারকমের সামরিক জিনিসপত্র রেখেছি, যার ফলে হোটেলের শেফ-রা কখনোসখনো চমকে যান, যখন তারা শোনেন যে, এটাই হবে তাঁদের রান্নাঘর৷''
আগে সৈন্যরা ঝোলানো হ্যামকে শুতেন৷ আজ ফোর্টের ন'টি লাক্সারি সুইটে ১৮ জন অতিথি রাত কাটান৷ তাদের অধিকাংশ এক কিংবা দু'রাত্রির বেশি থাকেন না৷ তবে অতীতের সেই কঠিন বাস্তবের কথা ভেবে তাঁদের রোমাঞ্চ হয় বৈকি৷৷
আপনিও কি এই স্পিটব্যাংক ফোর্ট হোটেলে রাত্রিযাপন করতে চান? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷