1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাম্প্রদায়িক হামলা উসকে দিতে গুজব

২০ অক্টোবর ২০২১

সাম্প্রদায়িক হামলা উসকে দিতে এবার গুজব সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (ব়্যাব) এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারী কমপক্ষে ২৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

https://p.dw.com/p/41v5f
Bangladesch | Angriff auf Hindu Tempel
ছবি: Tarun Chakraborty Bishnu

তালিকায় আরো অনেকে আছে। যাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ।

সাম্প্রদায়িক হামলা উসকে দিতে এবার গুজব সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারী কমপক্ষে ২৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তালিকায় আরো অনেকে আছে। যাদের আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. কামরুজ্জামান লিখিত বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ফেনীর চৌমুহনীতে যতন কুমার সাহা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা আসলে সঠিক নয়। ওই ভিডিওটি চলতি বছরের ১৬ মে ঢাকার পল্লবীতে  শাহীন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ভিডিও। জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই মামলার আসামিদের এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি মহল এটাকে যতন কুমার সাহা ভিডিও বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। যারা ছড়িয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

এই সময়ে আরো কিছু ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে বিভ্রান্তি এবং উসকানির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে গত ১২ অক্টোবর ভারতের ত্রিপুরার একটি আগুনের ছবি ও ভিডিও রংপুরের হিন্দু পল্লিতে আগুনের ঘটনা বলে প্রচার করা করা। এই সময় কোরান অবমাননার প্রতিবাদ করায় এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দেড় বছরের পুরনো একটি ছবি ফেসবুকে দেয়া হয়।

কর্নেল কে এম আজাদ

ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস-এর(ইউল্যাব) ফ্যাক্ট চেকার গ্রুপ আরো কিছু ভিডিও এবং ছবি চেক করে দেখেছে। ইউল্যাব-এর ফ্যাক্ট চেকার আপন দাশ জানান, ‘‘কুমিল্লার ঘটনার পর প্রথম যে ছবিটি ছড়িয়ে পড়ে তা হল কুমিল্লায় মসজিদে ঢুকে হিন্দুরা মলমূত্র ত্যাগ করেছে । আসলে এটা ২০১৬ সালের ঘটনা। আর ঘটনা ঘটিয়েছিলেন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। মিজানুর রহমান আজহারির নামে একটি ফেসবুক পোস্ট ছড়ানো হয়েছে- কঠিন হুংকার দিলেন মিজানুর রহমান আজহারি। আসলে ওই পোস্ট তিনি দেননি। কুমিল্লায় কোরান অবমাননার প্রতিবাদে সেখানে একটি মিছিলের ছবি ছড়ানো হয়েছে। আসলে সেটা ছিলো ২০২০ সালে ঢাকার একটি প্রতিবাদ মিছিলের ছবি। চট্টগ্রামে এক মাস আগে ভিন্ন এক ঘটনায় গ্রেপ্তার এক বক্তির ছবি প্রচার করা হয়েছে কোরান অবমাননার কারণে গ্রেপ্তার বলে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ ডয়চে ভেলেকে জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারী ২০-২৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাবাদ করছেন। তিনি বলেন, ‘‘এই গুজবের মাধ্যমে খারাপ পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে । তাদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে। নজরদারি অব্যাহত আছে।”

তিনি বলেন, ‘‘রংপুরের যে আগুনের ছবি ছড়ানো হয়েছে তা দেশের বাইরের। আর যতন কুমার সাহা বলে যে ভিডিও ছাড়ানো হয়েছে তা মিরপুরের শাহীন উদ্দিনের।”

র‌্যাব সূত্র জানায়, যতন সাহা বলে যে ভিডিও ছাড়ানো হয়েছে তার সাথে যুক্ত থাকার অভিযোগে একজনকে আটক করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘‘গুজবের এই প্রবণতা অতীতেও ছিলো। তখন লিফলেট বা অন্য কোনোভাবে ছাড়ানো হতো। এখন ফেসবুকে ছাড়ানো হয়। ফলে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়। এটা গুজব বলে চিহ্নিত করার আগেই ঘটনা ঘটে যায়। তাই সচেতনতার কোনো বিকল্প নাই। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তাই জবাবদিহির মধ্যে আনা দরকার। বাংলাদেশ একা সেটা পারবে না। বাংলাদেশের মত আরো যেসব দেশ এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত তারা একযোগে উদ্যোগ নিতে পারে। এখান থেকে ফেসবুক বন্ধ করলে বাকস্বাধীনতার প্রশ্ন উঠবে। আবার এটা ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে সহিংস ঘটনা ঘটালে তা প্রতিরোধেরও আগাম ব্যবস্থা নাই। এটা একটা জটিল পরিস্থিতি।”

আপন দাস

আপন দাস বলেন, ‘‘বাংলাদেশে দুই তিনটি ফ্যাক্ট চেকার গ্রুপ আছে। তবে ফ্যাক্ট চেক করতে, ভিডিও অডিওর ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সময় লাগে।  সেই সময় পর্যন্ত তো আর নাশকতাকারীরা অপেক্ষা করে না। তবে কেউ কিছু শেয়ার করার আগে চেক করে নিতে পারেন। কিন্তু যারা ছড়ায় তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ছড়ায় ।

এই সময়ে সংবাদমাধ্যম গুলো পুরো তথ্য প্রকাশ করলে গুজব কমানো সম্ভব।  মানুষ সেখানে খবর না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সার্চ করে। আর সেই সুযোগ নেয় গুজব সৃষ্টিকারীরা। আর মানুষ যা বেশি ফেসবুকে খোঁজে ফেসবুক তাকে সেটা বেশি দেয়। ফলে গুজব দ্রুত ছাড়ায়।”

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোনো তথ্য যাচাই না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।

এদিকে টুইটার ‘বাংলাদেশ হিন্দু ইউনিটি কাউন্সিল' ও ‘ইসকন বিডিএইচ' নামে দুইটি একাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অবশ্য কারণ জানা যায়নি৷