সারা বিশ্বে শিশুমৃত্যু
গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রভুত অগ্রগতি হয়েছে৷ কমেছে শিশুমৃত্যুর হার৷ ইউনিসেফ-এর ২০১৭ সালের রিপোর্ট দিচ্ছে এমন তথ্য৷ তারপরও এখনো যেতে হবে বহুদূর৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন৷
আড়াই দশকে কমেছে ৫৭ ভাগ
১৯৯০ সালে সারাবিশ্বে গড়ে প্রতিদিন ৩৫ হাজার পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মারা যেত৷ ২০১৬ সালে সংখ্যাটি কমে ১৫ হাজার হয়েছে৷ অর্থাৎ আড়াই দশকে প্রায় ৫৭ ভাগ কমেছে পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুমৃত্যুর হার৷
নবজাতকের মৃত্যুর হার
২০১৬ সালে সারাবিশ্বে ২৬ লাখ নবজাতক (এক মাস বয়সি বা তার কম) মারা গেছে৷ অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৭ হাজার৷ এই সংখ্যা পাঁচ বছরের কম যত শিশু মারা যায় তার ৪৬ শতাংশ৷ অথচ ২০০০ সালে এই হার ছিল ৪১ শতাংশ৷ তুলনামূলক হারে বাড়লেও নবজাতকের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতি হাজারে ২৫ বছরে ৩৭ থেকে কমে ১৯ হয়েছে৷
প্রথম মাসেই ঝুঁকি বেশি
জন্মের প্রথম মাসেই শিশুর মৃত্যুঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ পরিসংখ্যান বলছে, প্রথম মাসে প্রতি হাজারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৯, যেখানে এক মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত তা ১২ এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত সেটি ১১৷ ইউনিসেফ বলছে, ১ থেকে ৫৯ মাস পর্যন্ত নবজাতকের মৃত্যুর হার কমাতে যথেষ্ট সাফল্য পাওয়া গেলেও নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোর গতি খুবই শ্লথ৷
দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি
জনসংখ্যা বেশি, তাই সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৩৯ ভাগ শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়৷ এরপর সাবসাহারান আফ্রিকায়, ৩৮ শতাংশ৷
যে পাঁচ দেশে সবচেয়ে বেশি শিশুমৃত্যু
যত নবজাতকের মৃত্যু হয় তার অর্ধেকই হয় পাঁচটি দেশে৷ এগুলো হলো, পাকিস্তান, ভারত, নাইজেরিয়া, কঙ্গো ও ইথিওপিয়া৷ সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু হয় এমন দশটি দেশের আটটিই আফ্রিকার৷
সবচেয়ে কম জাপানে
জাপান শিশুস্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা বলে চিহ্নিত হয়েছে৷ সেখানে প্রতি ১ হাজার ১শ ১১ জন শিশুর মধ্য একজন প্রথম মাসে মারা যায়৷ এছাড়া আইসল্যান্ডে প্রতি হাজারে, সিঙ্গাপুরে প্রতি ৯০৯ জনে, ফিনল্যান্ডে প্রতি ৮৩৩ জনে, এস্তোনিয়া ও স্লোভেনিয়ায় প্রতি ৭৬৯ জনে, সাইপ্রাসে প্রতি ৭১৪ জনে এবং বেলারুশ, লুক্সেমবুর্গ, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি ৬৬৭ জনে একজন নবজাতক মারা যায়৷
পার্থক্য কমাতে হবে
উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনুন্নত দেশগুলোতে, মূলত আফ্রিকার দেশগুলোতে কমপক্ষে ৫০ গুণ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে৷ এই পার্থক্য কমিয়ে আনা খুব দরকার বলে মনে করছে ইউনিসেফ৷ তাদের হিসেবে, যদি প্রতিটি দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুমৃত্যুর হার রোধে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জন করতে পারে তাহলে ২০১৭ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে কমপক্ষে এক কোটি শিশুর জীবন বাঁচবে৷
চিকিৎসা আছে
ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, যেসব রোগে বেশির কম বয়সি শিশু (০-৫ বছর) মারা যায়, তার অধিকাংশেরই প্রমাণিত চিকিৎসা আছে এবং মোটেই ব্যয়বহুল নয়৷ তারা বলছে, বড় বাচ্চাদের (৫-১৪ বছর) চেয়ে ছোট বাচ্চারাই সংক্রামক রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং মারা যায়৷ তবে বড় বাচ্চারা বেশি মারা যায় দুর্ঘটনা বা অসংক্রামক রোগে৷
বাংলাদেশ ভালো করছে, তবে...
অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ ভালো করছে৷ আড়াই দশকে বাংলাদেশ পাঁচ বছরের কম শিশুমৃত্যু বছরে ২ রাখ ৪১ হাজার থেকে কমিয়ে ৬২ হাজারে নামিয়েছে৷ অর্থাৎ হার কমিয়েছে প্রায় ৭৪ শতাংশ৷ তবে নবজাতকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এখনো পৃথিবীর দশটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় রয়ে গেছে৷ এছাড়া এখনো বছরে ৮৩ হাজার শিশু জন্মের সময়েই মারা যায়৷