সিএএ আন্দোলনে রাজনৈতিক লাভ কার?
১৬ জানুয়ারি ২০২০ভারতীয় সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(সিএএ) পাশ হওয়ার পর দেশ জুড়ে বিক্ষোভ চলছে৷ রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি ছাত্রসমাজ প্রবলভাবে রাস্তায় নেমেছে৷ প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন৷ তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে রাজ্যে৷ পথে নেমেছে বাম ও কংগ্রেসও৷ প্রতিবাদে মুখর একাধিক অরাজনৈতিক সংগঠন৷ সব মিলিয়ে নয়া আইন কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় রয়েছে প্রবলভাবে৷ সিএএ আন্দোলন দেখে যদি মনে হয়, প্রায় সব মানুযই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী, তাহলে ভুল হবে৷ সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় আইনের বিরোধিতার সঙ্গে সমর্থনের ছবিটাও উঠে এসেছে৷
চলতি সপ্তাহে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ৫৯ শতাংশ মানুষ আইনের বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলনকে সমর্থন করছেন৷ দু-হাজারের কিছু বেশি নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি সমীক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর প্রতি এই বিপুল সমর্থন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কাড়ছে৷ রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষ মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ৷ তার দ্বিগুণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন মমতা৷ অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষকে পাশে পাচ্ছে তৃণমূল৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে উঠে আসার পর নতুন আইন নিয়ে আন্দোলন মমতাকে অক্সিজেন দিল বলে মনে করা হচ্ছে৷
যদিও এই সমীক্ষা আরো একটি বিষয় সামনে এনেছে৷ মমতার প্রতি যেমন সমর্থন আছে, তেমন আইনের সমর্থকের সংখ্যা একেবারে কম নয়৷ বরং বলা যায়, অর্ধেক ভোটার এর পক্ষে৷ তাই ৫১ শতাংশ মানুষ যেমন মনে করেন, তৃণমূলকে রাজনৈতিক ফায়দা দেবে চলতি আন্দোলন৷ তেমনই ৪৩ শতাংশ মানুষের ভাবনা ঠিক বিপরীত৷ তারা বলছে, এতে সুবিধা পাবে বিজেপি৷ যে মেরুকরণের ফলে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিস্ময়কর উত্থান হয়েছিল বাংলায়, সেই প্রবণতাকে আরো শক্তিশালী করছে নয়া আইন বিরোধী আন্দোলন৷ আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন৷ তার আগে মেরুকরণ আরও তীব্র হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত৷ অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, "সমীক্ষক সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলব না৷ তবে মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, এ রাজ্যে নতুন আইনের খুব বেশি বিরোধিতা নেই৷ এতে এখানকার শাসক দল বিরাট লাভবান হবে বলে আমি মনে করি না৷ তারা যে উপঢৌকনের নীতি নিয়ে চলে, তাতে বরং বেশি লাভবান হতে পারে৷ সংগঠনও তৃণমূলের বড় শক্তির জায়গা৷''
সমীক্ষায় জনতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই আইন সংবিধান বিরোধী কি না৷ তার জবাবে ৫৩ শতাংশ মানুষ হ্যাঁ বলেছে, না বলেছে ৪৬ শতাংশ৷ অর্থাৎ, নিরঙ্কুশ বিরোধিতা নয়, সমর্থনও রয়েছে এই আইনের পিছনে৷ বিরোধীরা আইনকে মুসলিম বিরোধী বলে প্রচার করায় মেরুকরণের সম্ভাবনাও বাড়ছে৷ তাতে রাজনৈতিক লাভ কাদের হবে, সেটা ভোটের ফলে বোঝা যাবে৷
তবে অনেকেই মনে করছেন, এই আন্দোলন তথা মেরুকরণে ধাক্কা খেতে পারে বাম ও কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে তাদের পক্ষে যে সমর্থন অবশিষ্ট আছে সেটা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে৷ তাই এই দুই পক্ষের ‘গট-আপের তত্ত্ব' সামনে আনছে বাম-কংগ্রেস৷ এমনকি মমতাকে কটাক্ষও করছে তারা৷ রাজ্যের বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "এই আন্দোলনের নেতা হিসেবে তৃণমূল নেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন ঠিকই৷ কিন্তু এটা যে তাঁর অভিনয়, সেটা মানুষ বুঝতে পারবে৷ তিনি পথে নেমেছেন, অথচ তাঁর দলের হাতে থাকা পুরসভা এনপিআর-এর কাজ করছে৷ তাই ৫৯ শতাংশ মানুষ আইনের বিরুদ্ধেই থেকে যাবে, কিন্তু তাঁরা তৃণমূলের পাশে থাকবে না৷"এই আন্দোলনের ফলে কাটমানি দুর্নীতি সন্ত্রাস প্রভৃতি যে বিষয়গুলি পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীরা সামনে এনেছিল, সেগুলি প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না বলে বাম নেতার বিশ্বাস৷
কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, "মমতা আত্মসমর্পন করেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কাছে৷ তাই উনি সিএএ আন্দোলনের মুখ নন, মুখোশ৷ দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে যাননি বিধানসভায় সর্বদলীয় প্রস্তাবও আনতে দেননি৷''