1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিএএ আন্দোলনে রাজনৈতিক লাভ কার?

১৬ জানুয়ারি ২০২০

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কী ভাবছে তার আঁচ পাওয়া গেল সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায়৷ রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে৷ যদিও সমর্থকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়৷

https://p.dw.com/p/3WIbF
Indien, Neu-Delhi: Protestierende Jamia Milia Islamia Studenten
ছবি: DW/A. Ansari

ভারতীয় সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন(সিএএ) পাশ হওয়ার পর দেশ জুড়ে বিক্ষোভ চলছে৷ রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি ছাত্রসমাজ প্রবলভাবে রাস্তায় নেমেছে৷ প্রতিদিনই চলছে বিক্ষোভ৷ তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আইনের বিরোধিতায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন৷ তাঁর নেতৃত্বে আন্দোলন চলছে রাজ্যে৷ পথে নেমেছে বাম ও কংগ্রেসও৷ প্রতিবাদে মুখর একাধিক অরাজনৈতিক সংগঠন৷ সব মিলিয়ে নয়া আইন কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনায় রয়েছে প্রবলভাবে৷ সিএএ আন্দোলন দেখে যদি মনে হয়, প্রায় সব মানুযই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধী, তাহলে ভুল হবে৷ সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় আইনের বিরোধিতার সঙ্গে সমর্থনের ছবিটাও উঠে এসেছে৷

চলতি সপ্তাহে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত সমীক্ষা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের ৫৯ শতাংশ মানুষ আইনের বিরুদ্ধে মমতার আন্দোলনকে সমর্থন করছেন৷ দু-হাজারের কিছু বেশি নাগরিকের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি সমীক্ষায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রীর প্রতি এই বিপুল সমর্থন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের নজর কাড়ছে৷ রাজ্যে সংখ্যালঘু মানুষ মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ৷ তার দ্বিগুণ মানুষের সমর্থন পাচ্ছেন মমতা৷ অর্থাৎ, সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষকে পাশে পাচ্ছে তৃণমূল৷ গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে উঠে আসার পর নতুন আইন নিয়ে আন্দোলন মমতাকে অক্সিজেন দিল বলে মনে করা হচ্ছে৷

বিমলশঙ্কর নন্দ

যদিও এই সমীক্ষা আরো একটি বিষয় সামনে এনেছে৷ মমতার প্রতি যেমন সমর্থন আছে, তেমন আইনের সমর্থকের সংখ্যা একেবারে কম নয়৷ বরং বলা যায়, অর্ধেক ভোটার এর পক্ষে৷ তাই ৫১ শতাংশ মানুষ যেমন মনে করেন, তৃণমূলকে রাজনৈতিক ফায়দা দেবে চলতি আন্দোলন৷ তেমনই ৪৩ শতাংশ মানুষের ভাবনা ঠিক বিপরীত৷ তারা বলছে, এতে সুবিধা পাবে বিজেপি৷ যে মেরুকরণের ফলে লোকসভা ভোটে বিজেপির বিস্ময়কর উত্থান হয়েছিল বাংলায়, সেই প্রবণতাকে আরো শক্তিশালী করছে নয়া আইন বিরোধী আন্দোলন৷ আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন৷ তার আগে মেরুকরণ আরও তীব্র হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত৷ অধ্যাপক বিমলশঙ্কর নন্দ বলেন, "সমীক্ষক সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলব না৷ তবে মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমার মনে হয়েছে, এ রাজ্যে নতুন আইনের খুব বেশি বিরোধিতা নেই৷ এতে এখানকার শাসক দল বিরাট লাভবান হবে বলে আমি মনে করি না৷ তারা যে উপঢৌকনের নীতি নিয়ে চলে, তাতে বরং বেশি লাভবান হতে পারে৷ সংগঠনও তৃণমূলের বড় শক্তির জায়গা৷''

সমীক্ষায় জনতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই আইন সংবিধান বিরোধী কি না৷ তার জবাবে ৫৩ শতাংশ মানুষ হ্যাঁ বলেছে, না বলেছে ৪৬ শতাংশ৷ অর্থাৎ, নিরঙ্কুশ বিরোধিতা নয়, সমর্থনও রয়েছে এই আইনের পিছনে৷ বিরোধীরা আইনকে মুসলিম বিরোধী বলে প্রচার করায় মেরুকরণের সম্ভাবনাও বাড়ছে৷ তাতে রাজনৈতিক লাভ কাদের হবে, সেটা ভোটের ফলে বোঝা যাবে৷

মনোজ চক্রবর্তী

তবে অনেকেই মনে করছেন, এই আন্দোলন তথা মেরুকরণে ধাক্কা খেতে পারে বাম ও কংগ্রেস৷ পশ্চিমবঙ্গে তাদের পক্ষে যে সমর্থন অবশিষ্ট আছে সেটা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ভাগ হয়ে যেতে পারে৷ তাই এই দুই পক্ষের ‘গট-আপের তত্ত্ব' সামনে আনছে বাম-কংগ্রেস৷ এমনকি মমতাকে কটাক্ষও করছে তারা৷ রাজ্যের বাম বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, "এই আন্দোলনের নেতা হিসেবে তৃণমূল নেত্রীর গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন ঠিকই৷ কিন্তু এটা যে তাঁর অভিনয়, সেটা মানুষ বুঝতে পারবে৷ তিনি পথে নেমেছেন, অথচ তাঁর দলের হাতে থাকা পুরসভা এনপিআর-এর কাজ করছে৷ তাই ৫৯ শতাংশ মানুষ আইনের বিরুদ্ধেই থেকে যাবে, কিন্তু তাঁরা তৃণমূলের পাশে থাকবে না৷"এই আন্দোলনের ফলে কাটমানি দুর্নীতি সন্ত্রাস প্রভৃতি যে বিষয়গুলি পশ্চিমবঙ্গে বিরোধীরা সামনে এনেছিল, সেগুলি প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না বলে বাম নেতার বিশ্বাস৷

কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীর বক্তব্য, "মমতা আত্মসমর্পন করেছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের কাছে৷ তাই উনি সিএএ আন্দোলনের মুখ নন, মুখোশ৷ দিল্লিতে সর্বদলীয় বৈঠকে যাননি বিধানসভায় সর্বদলীয় প্রস্তাবও আনতে দেননি৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷