সিনাত্রা, এলভিস আর মাইকেল জ্যাকসন
২৬ জুন ২০০৯একমাথা ঘনকালো কোঁকড়া চুল৷ চকচকে দুটো বুদ্ধিদীপ্ত চোখ৷ ছোট্ট ছেলেটা বড় দাদাদের সঙ্গে ব্যান্ড তৈরি করেছে৷ সে সরু গলায় গান গায়, গলাটা ভরা ট্রেমেলোতে৷ চড়ায় ওঠে দ্রুত৷ আর সেইসঙ্গে নাচ৷ গোটা শরীর জুড়ে আশ্চর্য এনার্জি তার৷ বয়স্ক মানুষরাও দেখা যায় তার সঙ্গে একসময় পা মিলিয়ে নেচে ওঠেন৷ ছেলেটার নাম মাইকেল জো জ্যাকসন৷
সেই ছোট্টবেলা থেকেই বোঝা গিয়েছিল, নাচ আর গানের এক নতুন দিগন্তের সন্ধান দিতে এসেছে মাইকেল৷ হলোও তাই৷ একের পর এক হিট অ্যালবাম৷ গোটা দুনিয়াজোড়া খ্যাতি, এসব পেতে বেশিদিন লাগেনি তরুণ মাইকেলের৷ ফ্যাশনের জগতেও আইকন হয়ে উঠল সে৷ ওর গান আর নাচ, সবকিছু মিলে ওর পারফরম্যান্স৷ যা কিনা প্রথাগত যাবতীয় নিয়মকানুনের বাইরে৷ যা হয়তো তথাকথিত কোনকিছুর তোয়াক্বা করে না৷ অথচ আজব ব্যাপার, মাইকেলের পারফরম্যান্স কেমন করে যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় সকলকে৷ সুতরাং এই অভিনবত্বই মাইকেলের এন্টারটেইনমেন্ট৷ এটাই ওর বিশেষত্ব৷ এই বিশেষত্বই গোটা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়েছে মাইকেল জ্যাকসনকে৷
জীবন জুড়ে প্রচুর পাগলামি করেছেন মাইকেল৷ নিজের মুখটা পছন্দ নয়, হোক প্লাস্টিক সার্জারি৷ গায়ের রঙ পছন্দ নয়, সেটাও বদলে ফেলা হল৷ বছর দুই বছরে এক আধটা অপারেশন তো কিছুই নয়৷ কিন্তু এর কুফল দেখা দিচ্ছিল তলায় তলায়৷ শরীরের আর কোন ধকল সহ্য করার মত ক্ষমতাই ছিল না৷ যে কারণে মাইকেলের মৃত্যু হল অকস্মাত৷ মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে৷ সামান্য হৃদরোগের ধাক্বা সামলাতে পারে নি তাঁর শরীর৷ ওর হৃদযন্ত্র থেমে গিয়েছিল চলতে চলতে৷ সেটাকে আর চালু করা গেল না৷
মাইকেলের দীর্ঘদিনের বন্ধু সোনি মিউজিকের প্রাক্তন সি ই ও টমি মোটোল্লা মাইকেলের মৃত্যুর পরপরই ওর কথা বলতে গিয়ে বলছেন, মাইকেল আসলে একটা যুগ৷ ফ্রাঙ্ক সিনাত্রার পর যেমন এলভিস প্রিসলে তেমনই এলভিসের পরই দুনিয়া পেয়েছে মাইকেলকে৷ মাইকেলের পর? না, এই মুহূর্ত পর্যন্ত কোন নতুন নাম উঠে আসেনি৷ আসা সম্ভবও নয়৷ কারণ মাইকেল বহুদিন পর্যন্ত থেকে যাবে পপ সঙ্গীতের আধুনিক আইকন হয়েই৷ গোল্ডেন, প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি যাবতীয় হিসাবকিতাব ছাপিয়ে মাইকেলের গানের অ্যালবাম বিক্রির সর্বকালীন রেকর্ড করে রেখেছে৷ থ্রিলার, ব্যাড বা ডেঞ্জারাস দুনিয়াজুড়ে বিক্রি হয়েছে শত শত মিলিয়ন কপি৷ মোটোল্লা জানিয়েছেন, এই রেকর্ড বিক্রিটাও একটা রেকর্ড৷ এটাও মাইকেলের রেকর্ড৷
মাইকেলের আর এক বন্ধু মনস্তত্ববিদ এবং পারফর্মার উরি গেলার একদিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, মাইকেল তাঁকে একদিন বলেছিলেন, আমি ভীষণ নিঃসঙ্গ৷ উরি বলছেন, মাইকেলের চোখদুটোর দিকে ভালো করে তাকালে ওর নিঃসঙ্গতাটা বোঝা যেত৷
কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা, চরম সাফল্য, জনপ্রিয়তা, খ্যাতি,অর্থ সবই পাওয়ার পরেও কোথায় নিহিত ছিল মাইকেল জ্যাকসনের এই নিঃসঙ্গতার বীজ ? তবে কী অনন্যসাধারণ প্রতিভা নিজেই তার যন্ত্রণার রক্তপ্রবাহ বহন করে নিয়ে আসে ?
মাইকেল জ্যাকসনের অকালমৃত্যু অন্য অনেক প্রশ্নের মতোই এই প্রশ্নটারও জন্ম দিয়ে গেল হয়তো বা৷
প্রতিবেদক: সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়, সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম