1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বতন্ত্রদের নির্বাচনি প্রচারে নৌকার প্রার্থীদের বাধা

২১ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনী প্রচার শুরু হতে না হতেই দেশের বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী, সমর্থকসহ তাদের বাড়ি ঘরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে৷

https://p.dw.com/p/4aRdF
ঢাকায় বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের পোস্টার
দলের মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের কাছে বাধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগছবি: Rashed Mortuza/DW

পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে নির্বাচনী প্রচার মিছিলের আয়োজন করেও রেহাই পাচ্ছেন না তারা৷ অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা৷ কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ হামলাকারীদের আটক করছেন৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার তাদের ছেড়ে দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ এসেছে৷

সারা দেশে গত দুই দিনে অন্তত ২০টি হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ভাঙচুর করা হয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনী অফিসেও৷

চাঁদপুরের মতলবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সদস্য এম ইসহাক আহসান৷ তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া৷

ইসহাক আহসান অভিযোগ করেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি তার নিজ এলাকা কলাকান্দা ইউনিয়নে পুলিশের অনুমতি নিয়ে প্রচার মিছিল বের করেন৷ এসময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মায়া চৌধুরী সমর্থকেরা তার ২০-২৫ জন কর্মীকে অপহরণ করে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে আটক করে মারধর করেন৷ এই ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান শোভা৷ পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন৷

‘বলেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করলে চোখ উপড়ে ফেলবে’

তিনি  আরো বলেন, ‘‘এর আগে আমার বড়িতে হামলা চালানো হয়েছে৷ আমার এক কর্মীকে বুধবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে৷ সে এখন হাসাপাতালে আছেন৷ ওই চেয়ারম্যান এলাকায় মাইকিং করেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে যে কাজ করবে তার চোখ উপড়ে ফেলবে৷ আমি একাধিক মামলা ও জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না৷ রিটার্নিং অফিসারকে জানিয়েও কোনো নিরাপত্তা পচ্ছি না৷''

এদিকে, ফরিপুর-৩ আসনের  স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ এ পর্যন্ত তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের শামীম হকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে ২১টি মামলা ও জিডি করেছেন৷ তাতেও কোনো ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তার৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি পুলিশ, নির্বাচন কমিশন সবখানে অভিযোগ করেছি৷ কোনো ফল পাচ্ছি না৷ এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছু নেই৷ আর কয়েকদিন দেখব, তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব৷''

বৃহস্পতিবারও তার লোকজনের ওপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷ বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার কিষান গোপালপুরে পোস্টার লাগানোর সময় আমার দুই জন লোককে কুপিয়ে জখম করা হয়৷ এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি৷ এ পর্যন্ত আমার কর্মী সমর্থকদের ওপর কমপক্ষে ২১ দফা হামলা হয়েছে৷ একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল৷ পরদিন ছাড়া পেয়েছে৷''

এর আগের দিন, বুধবারও তার একাধিক নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই স্বতন্ত্র প্রার্থী৷

‘আমি সবখানে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না’

বুধবার চট্টগ্রাম-১৬ আসনে নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাাফিজুর রহমান চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে৷

পটুয়াখালী-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবুল হোসেন আজাদের প্রচার মাইক ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার সমর্থকদের বিরুদ্ধে৷

রাজবাড়ী-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরে আলম সিদ্দিকী হকের প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে৷

গাজীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমানা আলীর কর্মীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজের সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

কুষ্টিয়া-৪, রাজশাহী-৪ এবং রাজশাহী-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সভায় হামলা হয়েছে বুধবার৷

ঝালকাঠির রাজাপুর-কাঠালিয়া আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘‘এখানে হামলার ঘটনা না ঘটলেও আমার নেতা-কর্মীরা নতুন করে চাপের মুখে পড়েছেন৷ বিএনপি থেকে সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে উপজেলা আওয়ামী লীগ বৈঠক করে প্রত্যাখ্যান করায় ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে৷ আমার নেতা-কর্মীরা নানা ধরনের হুমকির মুখে আছেন৷''

‘প্রধানমন্ত্রীর কথার পর স্বতন্ত্রদের চাপে থাকার কারণ নেই’

এই পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বা সমর্থকদের ওপর হামলা হবে কেন? নির্বাচন তো বাংলাদেশে একটা উৎসবের  ব্যাপার৷ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকলে তা স্থানীয় পর্যায়ের ব্যক্তিগত, সামাজিক বা পারিবারিক শত্রুতার কারণে ঘটতে পারে৷''

তার কথা, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ৷ স্বতন্ত্রদের চাপে থাকার কোনো কারণ নেই৷''

তবে নির্বাচন কমিশনের  অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘‘আমরা যেসব অভিযোগ পেয়েছি তার তদন্ত চলছে৷ দুই এক দিনের মধ্যেই ব্যবস্থা দেখতে পাবেন৷ এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য বা অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) তিন জন ওসির (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি৷ তাদের প্রত্যাহার করেছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে আমাদের যা করার সব করব৷''