‘এসডিজিতেও সাফল্য আসবে’
১৩ মার্চ ২০১৮ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যুর হার কত?
ডা. কাজী মোস্তফা সারোয়ার: আমাদের এখন আছে প্রতি হাজারে ২৬ জন৷ আমাদের এসডিজিতে টার্গেট হলো ১০ জন৷ আমরা সেই লক্ষ্যে এখন কাজ করছি৷ ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা এই লক্ষ্য পূরণ করব৷
বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান কততম?
এমডিজিতে আমাদের লক্ষ্য ছিল, সেটা আমরা পূরণ করেছি৷ আপনারা জানেন, এই লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী সাউথ-সাউথ পুরস্কার লাভ করেছেন৷ শিশুমৃত্যু আমরা কমিয়ে আনতে পারলেও নবজাতকের মৃত্যু রোধে অতটা সাফল্য আসেনি, এখন উন্নতি হচ্ছে৷ তবে বিশ্বে কততম সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না৷ তবে আমাদের অবস্থান ভালো৷
এমডিজিতে তো আমরা লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি, এসডিজিতে লক্ষ্যমাত্রা কী?
এসডিজিতে আমাদের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে শিশুমৃত্যু প্রতি হাজারে ১২ জনে নামিয়ে আনতে হবে৷ এখন যেটা আছে ২৬ জনে৷ এটা করতে হবে ২০৩০ সালের মধ্যে৷
বাংলাদেশের শিশুমৃত্যু কমছে, এই উন্নতির পেছনের কারণ কী?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটা নিয়ে কাজ করছে৷ পাশাপাশি আমরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকেও প্রান্তিক পর্যায়ে কর্মীদের মাধ্যমে কাজ করছি৷ যেমন, আমাদের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে এবং জেলা পর্যায়ে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র আছে, সেখানে আমরা নবজাতকদের লালন-পালনে সমন্বিত প্যাকেজ নিয়েছি৷ যে তিন, চারটি কারণে শিশু মারা যায়, যেমন ইনফেকশন, শ্বাসকষ্ট, কম ওজনের শিশু – এ সব বিষয়ে আমরা চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেই৷ তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়৷ এ সব কারণে আমাদের কর্মীরা বেশ প্রশিক্ষিত৷ তারা বিপজ্জনক চিহ্ন দেখলেই হাসপাতালে পাঠাতে পারে৷ এসব কারণে শিশুমৃত্যুর হার কমে আসছে৷
আরেকটা হলো কম ওজনের শিশু৷ এর জন্য আমরা মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্রে ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার চালু করেছি৷ আগে শিশুদের ইনকিউবেটরে রাখা হতো৷ এখন ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ারে মায়ের গলার সঙ্গে তাদের বেঁধে রাখা হয়, তাতে তারা মায়ের শরীরের উষ্ণতা পায় এবং শিশুরা সুস্থ হয়ে ওঠে৷ আরেকটা কারণ হলো নাভি কাটার পর যে ইনফেকশন হতো, বা ধনুষ্টংকার হতো, এখন সেটা হয় না৷ এর জন্য ভ্যাকসিন দেয়া হয়৷ আমরা আশা করছি ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি-র টার্গেট পূরণ করতে পারব৷
নবজাতক মৃত্যুর মূল কারণ যদি বলেন...
মূলত পাঁচটি কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়৷ প্রধান কারণ হলো শ্বাসকষ্ট৷ এছাড়া কম ওজনের শিশু, নাভিতে ইনফেকশন এবং জন্মগত কিছু ত্রুটি – এগুলোই মৃত্যুর প্রধান কারণ৷
বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে তো প্রশ্ন আছে, তারপরও শিশুমৃত্যুর হারের দিক দিয়ে ভালো অবস্থানে, কারণ কী?
কী প্রশ্ন আছে আমি জানি না, কিন্তু এটা বলতে পারি যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে স্বাস্থ্য সূচকে আমাদের উন্নতি হচ্ছে৷ স্বাস্থ্য সূচকের সবগুলোতে আমরা এগিয়ে আছি৷ মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টি – এগুলোতে আমাদের অনেক উন্নতি হয়েছে৷ এমনকি আমাদের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে৷ এখন আমাদের গড় আয়ু ৭১ বছর৷ এগুলো স্বাস্থ্য সূচকের উন্নতিকে নির্দেশ করে৷ স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নতি না হলে এগুলোতে আমরা উন্নতি লাভ করতে পারতাম না৷ আমার মনে হয়, প্রশ্ন থাকার কোনো কারণ নেই৷
শিশুমৃত্যু আরো কমানোর উপায় কী?
আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, প্রতিটি সদর হাসপাতালে শিশুদের জন্য স্পেশাল কেয়ার ইউনাইটেড ইউনিট গঠন করা হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত ৪৬টি হাসপাতালে এটা তৈরি করা হয়েছে৷ এটা আইসিইউ-র মতো৷ আমরাও এই উদ্যোগ নিচ্ছি৷ আশা করছি, সব জায়গায় এটা হয়ে গেলে শিশু মৃত্যু আরো কমে আসবে৷
মায়ের সঙ্গে নবজাতক বা শিশু মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক আছে?
অতটা নেই, তবে কিছুটা আছে৷ যেমন, যেসব মায়ের সন্তান প্রসব হাসপাতালে হবে, সেখানে মায়ের স্বাস্থ্যও নিশ্চিত হবে, নবজাতকের স্বাস্থ্যও নিশ্চিত হবে৷ বাড়িতে প্রসব হলে নবজাতকের সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না৷ এমনকি মায়েরও৷ কিন্তু হাসপাতালে প্রসব হলে এগুলো সঠিকভাবে দেখা যায় এবং চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়৷ যে মায়ের প্রসব হাসপাতালে হবে, তার ঝুঁকি যেমন কমবে, শিশুরও মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে৷ এই কারণে একটা সম্পর্ক থাকে৷
বাংলাদেশে শিশু বিশেষজ্ঞের সংখ্যা কেমন? যা আছে, তা কি পর্যাপ্ত?
পর্যাপ্তই, তবে সঠিক সংখ্যাটা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না৷ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁরা বিশেষজ্ঞ৷ এখন প্রতিটি মেডিকেল কলেজেই এই ধরনের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা আছে৷ এখন শুধু জেলা না, প্রতিটি উপজেলাতে শিশুবিশেষজ্ঞদের সরকার পদায়ন করছে৷ সুতরাং শিশু বিশেষজ্ঞ পর্যাপ্ত আছে৷
শিশুদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কি দেশে আছে?
আমাদের দেশে এখন সরকার শিশুদের দিকে আলাদা নজর দিয়েছে৷ শিশুদের জন্য আলাদা হাসপাতাল আছে৷ শিশু হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি মেডিকেল কলেজে আলাদাভাবে শিশু ইউনিট গঠন করা হয়েছে৷ জেলা হাসপাতালেও শিশু ইউনিট আছে৷ এমনকি প্রতিটি উপজেলাতে শিশু বিশেষজ্ঞদের সরকার পদায়ন করছে৷ আমি যতদূর জানি, রাজধানীতে পাঁচ হাজার শয্যাবিশিষ্ট ইনষ্টিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন৷ এটা অচিরেই হবে বলে আমি জানতে পেরেছি৷ ইতিমধ্যে এর কাজও শুরু হয়েছে৷ এখানে সব ধরনের ব্যবস্থা ও বিশেষজ্ঞ আছে৷
আর কী হলে শিশুদের উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে এবং শিশুমৃত্যুর হার কমবে?
শিশুমৃত্যু কমানোর জন্য আমাদের যে ব্যবস্থাগুলো চলছে, আমার মনে হয় সেটা পর্যাপ্ত৷ আমাদের যে উদ্যোগগুলো আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন এবং হাসপাতালগুলোতে যেসব যন্ত্রপাতি আছে তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে শিশুমৃত্যু আরো কমে আসবে৷ এ ব্যাপারে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক এবং আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে৷
ডা. সারোয়ারের মতো আপনিও কি মনে করেন যে শিশুমৃত্যু কমাতে যেসব ব্যবস্থা নেয়া আছে, তা পর্যাপ্ত? লিখুন নীচের ঘরে৷