‘অনেক সমস্যার’ মিয়ানমারে পোপ
২৭ নভেম্বর ২০১৭পোপের মিয়ানমার সফর শুধুই নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের আরেকটি অংশ নয়৷ বরং এটি ধর্মীয় মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত ধর্মান্ধতা ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে মরিয়া এক সংগ্রামও৷ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ধর্মের অপব্যবহারের কারণে শুধু মিয়ানমার নয়, পুরো বিশ্বেই দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়ছে৷
মিয়ানমারের মতো দেশ, যেটি ৫০ বছরেরও বেশি সময় সামরিক শাসনের অধীনে ছিল, সেখানেও ধর্মের এমন ব্যবহারের ঘটনা শ্লেষপূর্ণ৷
মাত্র বছর দশেক আগেও মিয়ানমারের বৌদ্ধ পুরোহিতরা সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ আর এখন তাঁদের অনেকে সামরিক বাহিনীকে সমর্থন করছেন৷ উ থুসাইত্তা নামের এক পুরোহিত সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘সামরিক বাহিনী যখন বলে রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের বাড়িতে আগুন জ্বালাচ্ছে তখন আমি সেটা বিশ্বাস করি৷’’
পোপের চাওয়া
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে পোপ ফ্রান্সিস ধর্মীয় গোঁড়ামিতে বিশ্বাসী নেতাদের বিবেককে জাগ্রত করতে চান৷ তিনি ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কথা বলতে চান৷ এই ধর্মান্ধতা প্রায়ই রাষ্ট্রের স্বার্থের পক্ষে যায়৷ বৌদ্ধপ্রধান মিয়ানমারেও এখন সেটা হচ্ছে৷ মিয়ানমারে আরেকটি ধর্মীয় সংঘাত ছড়িয়ে পড়া প্রতিহত করতে চান পোপ ফ্রান্সিস৷
আঠার শতকে মিয়ানমারের বৌদ্ধ মৌলবাদীরা দাবি করেছিলেন, তাদের শিক্ষাপদ্ধতি বিদেশি প্রভাবমুক্ত৷ আর এখন তাঁরা তাঁদের দেশকে ‘ইসলামি অনুপ্রবেশ’ থেকে বাঁচাতে কাজ করছেন বলে দাবি করছেন৷ এই কাজে তাঁরা থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকার বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সমর্থন পাচ্ছেন৷
এদিকে, ইসলামি মৌলবাদীরাও রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনকে কাজে লাগিয়ে তাদের দল ভারির চেষ্টা করছে৷ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক জরিপ বলছে, সৌদি আরব থেকে পাওয়া নির্দেশের পর মুসলিম জঙ্গিরা মিয়ামারের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেছেন৷ প্রতিবেদন বলছে, জঙ্গিরা মিয়ানমারের ইসলামিক স্টেটের মতাদর্শ ছড়ানোর চেষ্টা করছে৷
মিয়ানমারের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়
পোপ কীভাবে এত নিশ্চিত হচ্ছেন যে, তাঁর সফরের প্রতি অনেকে নজর দেবেন? বৌদ্ধ অধ্যুষিত একটি দেশের মানুষ কেন ক্যাথলিক গির্জার প্রধানের কথায় আকৃষ্ট হবেন?
উত্তর হচ্ছে, মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের নিত্যদিনে ঘটে যাওয়া ঘটনার মধ্য দিয়েই পোপ তাদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন৷ বিশেষ করে সামরিক শাসনামলের প্রসঙ্গে তুলে ধরবেন পোপ৷ যখন তিনি ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনের কথা বলবেন তখন খ্রিষ্টান সহ অনেক মানুষের কাছেই মনে হবে, পোপ যেন তাঁদের কথাই বলছেন৷
মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ ক্যাথলিক৷ সামরিক শাসনামলের সময় তাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন৷ ১৯৬৫ সালে মিয়ানমারের রেভুলিউশনারি কাউন্সিল গির্জা পরিচালিত স্কুল ও হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছিল৷ ২০১০ সালে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আসার পর গির্জা পরিচালিত সংস্থাগুলোকে আবারও কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছে৷
বছরের পর বছর নির্যাতনের শিকার হওয়ার কারণে এটা বোধগম্য যে, মিয়ানমারের কার্ডিনাল আর বিশপরা কেন পোপ ফ্রান্সিসকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন৷ পোপ যদি রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করেন তাহলে তাঁর চলে যাওয়ার পর তাঁদের উপর আবার নিপীড়নের আশংকা করছে মিয়ানমারের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়৷
ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব
পোপ ফ্রান্সিস এই পরামর্শ শুনবেন কিনা তা সময়ই বলে দেবে৷ রাজনৈতিক বিষয়ে আগ্রহী হিসেবে পোপ আরেকবার শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন৷ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং লায়িং ছাড়াও নোবেলজয়ী অং সান সু চির সঙ্গে কথা বলবেন পোপ৷
আন্তঃধর্মীয় এক অনুষ্ঠানে তিনি বৌদ্ধ পুরোহিতদের সঙ্গেও কথা বলবেন৷ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক৷ কারণ অল্প সময়ের জন্য হলেও ধর্মীয় নেতারা দেখাতে সক্ষম হবেন যে, ধর্মীয় মৌলবাদ প্রতিহত করা তাঁদেরই কাজ৷
আসট্রিড প্রাঙে/জেডএইচ