1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিনেত্রী, তৃণমূল সাংসদ নুসরতের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ

২ আগস্ট ২০২৩

প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ, অভিনেত্রী নুসরত জাহানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ জমা পড়েছে ইডির কাছে। সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন নুসরত। তবে সাংবাদিকরা প্রশ্ন শুরু করতেই চলে যান তিনি৷

https://p.dw.com/p/4Uh1E
সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রসের সাংসদ নুসরাত জাহান
সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূল কংগ্রসের সাংসদ নুসরাত জাহানছবি: Subrata Goswami

বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় তৃণমূলের একাধিক নেতা জেলবন্দি। এই তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে জেলার যুবনেতা।

নুসরতসহ নয় জনের বিরুদ্ধে এবার যে অভিযোগ উঠেছে সেখানে মামলাকারীরা দাবি করেছেন, ফ্ল্যাট দেয়ার নাম করে যে সংস্থা তাদের ঠকিয়েছে, তার ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূল সাংসদ। ৪২৯ জনের কাছ থেকে মাথাপিছু ৫ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। 

‘‘প্রতারিতদের মধ্যে ৪০-৪৫ জন অভিযোগ দায়ের করেন’’

অভিযোগকারীরা সকলেই ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (আইওবি)-র অবসরপ্রাপ্ত অথবা বর্তমান কর্মী। নয় বছর আগে তাদের সংগঠন ‘ইচ্ছুক' সদস্যদের কাছ থেকে তাদের ফ্ল্যাট তৈরির জন্য আবেদন চায়। আইওবি শাখার একটি অ্যাকাউন্টে অগ্রিম টাকা জমা দিতে বলা হয় সদস্যদের। সেই অ্যাকাউন্ট 'সেভেন সেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রাইভেট লিমিটেড' নামে এক সংস্থার। অভিযোগ, ওই সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন তৃণমূল সাংসদ নুসরত।

ফ্ল্যাটের নামে টাকা

মামলাকারীদের আইনজীবী কমল বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "২০১৪ সালে টাকা নেয়ার চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট দেয়ার কথা ছিল। তা না হওয়ায় ২০২০ সালে নতুন চুক্তি হয়। ওই সংস্থা দু'বছরের মধ্যে বাড়ি দেয়ার কথা বলে। সেই সময়ও পার হয়ে যাওয়ায় প্রতারিতদের মধ্যে ৪০-৪৫ জন অভিযোগ দায়ের করেন।"

প্রথমে গড়িয়াহাট থানায় অভিযোগ জানানো হয়। তাতে সুরাহা না হওয়ায় গত বছরের আগস্ট মাসে আলিপুর আদালতে মামলা করা হয়েছে। ১৬ আগস্ট মামলার পরে শুনানি। এরই মধ্যে গত সোমবার প্রতারিতরা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে জানান মামলাকারীদের আইনজীবী।

অভিযোগ অনুযায়ী ২০ কোটির বেশি টাকা জমা পড়েছে নির্মাণ সংস্থার অ্যাকাউন্টে। এই টাকায় নুসরত ফ্ল্যাট কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কমল বলেন, "ওই টাকা দিয়ে জমিজমা কেনা হয়েছে। নুসরত প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট কিনেছেন।"

রাজনীতির তির

বিজেপি নেতৃত্বের মাধ্যমে ইডির কাছে দরবার করেছেন প্রতারিতরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ প্রবীণ মানুষদের বাড়ির জন্য তোলা টাকা নিয়ে প্রতারণা করেছেন। তাদের টাকা দিয়ে নিজের জন্য দেড় কোটির ফ্ল্যাট কিনেছেন। ইডির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে আইনি লড়াই করা হবে।"

বুধবার এক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ব্যক্তিগত বিষয়ে কিছু বলবো না যেটা আমি জানি না৷ এটা নিয়ে নুসরত বলবে। এটা আমার বিষয় নয়। তবে কোম্পানির কত ডিরেক্টর থাকে, তার মালিক কোনো অন্যায় করলে দায় কি কর্মীর হবে?"

এই অভিযোগ থেকে দূরত্ব তৈরি করতে চেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য, "এটা দলের কোনো বিষয় নয়। যেটা জানি না, তা নিয়ে কিছু বলতে পারবো না। এ বিষয়ে নুসরত বা তার আইনজীবী প্রতিক্রিয়া দিতে পারবেন।"

নুসরতের ঝটিকা সংবাদসম্মেলন

মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে হইচই হলেও কার্যত মুখ খোলেননি অভিযুক্ত সাংসদ। তার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে নুসরত বলেন, "আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। ২০১৭ সালে ওই সংস্থা থেকে আমি পদত্যাগ করেছি। আমার একটিও শেয়ার এই সংস্থায় নেই। এখানে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।"

এই সংস্থার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, তা স্বীকার করেছেন নুসরত। তিনি বলেন, "ফ্ল্যাট কেনার জন্য ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা আমি ওই সংস্থার থেকে ঋণ নিয়েছি। সুদ সমেত ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছি। সব তথ্য আমার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টে আছে।"

ব্যাঙ্কের নথি সাংবাদিকদের দেখাতে চাননি সাংসদ। এমনকি তাদের কোনো প্রশ্নও শোনেননি, বরং মেজাজ হারিয়ে সংবাদমাধ্যমকে নিশানা করেন। ‘ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে ওই সংস্থা থেকে কেন নিয়েছিলেন'- এ প্রশ্নেরও উত্তর না দিয়ে প্রেস ক্লাব ছেড়ে চলে যান নুসরত।

সংস্থার আর এক ডিরেক্টর, ব্যবসায়ী রাকেশ সিং আগেই জানিয়েছেন, নুসরত ঋণ নিয়েছিলেন। পরে টাকা ফেরত দেন। ডিরেক্টর পদও ছেড়ে দিয়েছেন।

বিজেপির পাল্টা

বিজেপি নুসরতের যুক্তি খারিজ করে তার সাংসদ হিসেবে পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারি দাবি করেছে। সাংসদ মুখ খোলার পরপরই সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতা শঙ্কুদেব পান্ডা বলেন, "টাকা যে নিয়েছেন সেটা স্বীকার করেছেন নুসরত। কিন্তু তিনি চেক ও অনলাইন মারফত ১ লক্ষ ৯৮ হাজার নিয়েছেন। তা হলে ১ কোটি ১৬ লক্ষের হিসেব কেন দিচ্ছেন? কেনই বা ব্যাঙ্কের বদলে সেই সংস্থার থেকে ঋণ নিলেন যার তিনি ডিরেক্টর?"

ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশনের প্রতিলিপি ও নুসরতের স্বাক্ষরিত নথি বলে দাবি করে বিজেপি নেতা বলেন, "তৃণমূল সাংসদ প্রবীণ মানুষদের টাকা নয়ছয় করেছেন। পদত্যাগ করে তিনি দায় ঝেড়ে ফেলতে পারেন না। টাকা দেয়া সাত জন প্রবীণ ইতিমধ্যে প্রয়াত। দিন তিনেকের মধ্যে ইডি পদক্ষেপ না করলে আমরা আদালতে যাবো।"

শাসকের বিড়ম্বনা

সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারির বোঝা আগেই ছিল। এই দুই মামলায় বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা অভিযুক্ত। এরপর একে একে যুক্ত হয়েছে কয়লা ও গরু পাচার, নিয়োগ দুর্নীতির মামলা। নানা অভিযোগে শাসক শিবিরের নেতারা জেলে রয়েছেন।

তৃণমূলের সাবেক মহাসচিব ও রাজ্যের একসময়ের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এক বছরের বেশি সময় নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জেলবন্দি। তিনি বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক। একই অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য জেলে। মানিক নদিয়ার পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক।

গরু পাচার মামলায় দিল্লির তিহার জেলে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডলও এখানেই বন্দি।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। তল্লাশির সময় এই বিধায়ক তার দুটি মোবাইল পুকুরে ফেলে দেন বলে অভিযোগ তোলে সিবিআই। তদন্ত চলছে নদিয়ার তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত অভিযোগে কারাবন্দি হুগলি জেলা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ ও শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়।

দূরত্ব দেখানোর কৌশল?

এমন নানা অভিযোগের মধ্যে নতুন আর্থিক দুর্নীতির মামলায় আরো এক তৃণমূল নেতার নাম জড়ালো। পার্থ, শান্তনু, কুন্তল-সহ একাধিক অভিযুক্তের ক্ষেত্রে তৃণমূল যেভাবে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেছে, নুসরতের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ দিন নুসরত বলেছেন, চলতি বিতর্কের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। সাংসদের এই বয়ানে কি বিরোধীদের নিশানা থেকে রেহাই পাবে শাসক দল?

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷