অভিষেককে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ
২০ মে ২০২৩অভিষেককে প্রশ্ন
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তল ঘোষ। জেলবন্দি কুন্তল দাবি করেন, তার মুখ দিয়ে অভিষেকের নাম বলানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এই অভিযোগ জানিয়ে তিনি চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় সংস্থা ও পুলিশকে। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার সিবিআই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নামে সমন জারি করে।
শুক্রবার দলের জনসংযোগ যাত্রায় বাঁকুড়ায় ছিলেন অভিষেক। আজ সকাল ১১টায় তিনি হাজির হন কলকাতার সিবিআই দপ্তরে। সেখানে কুন্তলের চিঠির ভিত্তিতে তাকে প্রশ্ন করা হয় বলে সূত্রের খবর। এই তলব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছেন অভিষেক। সোমবার শুনানি চেয়েছেন তিনি।
সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকরা কুন্তলের চিঠি নিয়ে প্রশ্ন করেন অভিষেককে। ২৯ মার্চ শহিদ মিনারের জনসভায় অভিষেক বলেন, মদন মিত্র, কুণাল ঘোষকে চাপ দেয়া হয় তার নাম বলার জন্য। এর পরের দিন কুন্তল আদালতে পেশের সময় একই ধরনের অভিযোগ তোলেন। সেই কথা চিঠিতেও লেখেন। যদিও অভিষেক জানিয়েছেন, এই চিঠির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। দীর্ঘ সময় ধরে চলে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব।
তলব ঘিরে তর্ক
অভিষেককে তলব ঘিরে রাজনৈতিক তরজা তুঙ্গে উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপ, "তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিকে আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে। অভিষেককে আটকালে আমি কর্মসূচিতে যাব। নবজোয়ার তখন নবপ্লাবন হবে।"
তলব নিয়ে প্রশ্ন অর্থহীন বলে মনে করেন বাম সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর মন্তব্য, "সিবিআই যখন খুশি ডাকতে পারে। হাজিরা না দিলে গ্রেপ্তারও করতে পারে। গ্রেপ্তারি এড়াতে উনি হাজিরা দিয়েছেন।"
তৃণমূল প্রশ্ন তুলছে, কেন চিঠির ভিত্তিতে তলব করা হল? মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, "জনৈক কুন্তল ঘোষের চিঠিতে অভিষেকের নামে কোনো অভিযোগ নেই। অথচ সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তা হলে শুভেন্দুকে কেন তলব ও গ্রেপ্তার করা হবে না?" এর জবাবে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "সুদীপ্ত সেনের চিঠি কে লিখেছে, কারা কুন্তলকে দিয়ে চিঠি লিখিয়েছে, সেটা শিশুরাও জানে। এ কথা বলে অপরাধ আড়াল করা যাবে না।"
ইডি অভিযান
অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদের দিনই ইডিনিয়োগ মামলায় কলকাতা ও জেলায় ১০টি জায়গায় অভিযান চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে 'কালীঘাটের কাকু' নামে পরিচিত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ি, ফ্ল্যাট ও অফিস। নিজেকে অভিষেকের কর্মী বলে দাবি করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণ। তৃণমূল জেলা পরিষদের সদস্য থেকে জেলবন্দি সাবেক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীর বাড়িতেও অভিযান করেছে এই কেন্দ্রীয় সংস্থা।
স্বস্তি শিক্ষকদের
নিয়োগ মামলায় প্রভাবশালী-যোগের রহস্য যখনতদন্তকারীদের নজরে, সেই সময় আদালতের নির্দেশে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষক। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি চলে গিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করে।
বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের নেতৃ্ত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ আপাতত সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। শিক্ষকদের বেতন কমছে না। যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অন্যান্য নির্দেশ বহাল রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, আগস্টের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
এই সার্বিক ঘটনাক্রম কি শাসক দলের জনসমর্থনে প্রভাব ফেলবে? পর্যবেক্ষক অমল মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তৃণমূল ক্রমশ বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এর প্রভাব লোকসভা ভোটে পড়বে। যে নারীরা সমর্থন করেন তৃণমূলকে, তারাও এ সব দেখে সন্তুষ্ট হবেন না।"