1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইসল্যান্ডে তিমি বাঁচানোর উদ্যোগ

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চোখের সামনে তিমি দেখার সৌভাগ্য ক'জনের হয়? পরিবেশ দূষণ ও শিকারের কারণে তিমিদের সংখ্যা কমে চলেছে৷ আইসল্যান্ডে তিমি শিকার বন্ধ করতে জোরালো উদ্যোগ চলছে৷ সামান্য হলেও কিছু সাফল্যও পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/35D57
ছবি: picture-alliance/OKAPIA/A. & W. Steffen

একেবারে স্বপ্নের পেশা৷ মেগান উইটেকার আইসল্যান্ডের উপকূলে তিমি পর্যবেক্ষণ করেন৷ পর্যটকদের জন্য এটি অন্যতম সেরা আকর্ষণ৷ তবে তার জন্য ধৈর্য্যের প্রয়োজন৷

সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী হিসেবে তিনি দক্ষতার সঙ্গে তিমি চিনতে পারেন৷ একটি মিংক হোয়েল একঝাঁক মাছের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করছে৷ খুব কম সময়ের জন্য তারা পানির উপরে চলে আসে৷ ভাগ্য ভালো থাকলে পর্যটকরা আরও বড় আকারের হাম্পব্যাক তিমিরও সাক্ষাৎ পান৷

যে অঞ্চলে পর্যটকদের নৌকা থেকে তিমির ছবি তোলা হয়, সেখানেই অন্য কিছু মানুষ তিমি শিকার করেন৷ মেগান সেটিকে নৃশংস ব্যবসা বলে মনে করেন৷ মেগান বলেন, ‘‘এই প্রাণীদের ত্বক আমাদেরই মতো, ব্যথা হলে স্নায়ু তা জানান দেয়৷ তিমির শরীরে হার্পুন নিক্ষেপ করা হয়৷ শরীরে ঢুকে সেগুলি বিস্ফোরণ ঘটায়৷ এক ঘণ্টা পর্যন্ত কষ্ট পেয়ে তারপর তিমির মৃত্যু হয়৷ সেই প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক৷’’

আইসল্যান্ডের একমাত্র তিমি ধরার কেন্দ্র রাজধানী রেইকইয়াভিক থেকে অনেক দূরে একটি খাঁড়ির আড়ালে অবস্থিত৷ শিকারিরা একটি ফিন হোয়েল মেরেছে৷ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই প্রাণী লুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসেবে পরিচিত৷ প্রাণী অধিকার কর্মীরা ৪০ টন ওজনের এই তিমির শরীর কাটার প্রক্রিয়া নথিভুক্ত করেছেন৷ ভিগা টোরডার আইসল্যান্ডের এক অ্যাকটিভিস্ট৷ তিনি তিমি শিকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন৷ ইন্টারনেটে ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে আইসল্যান্ডে তিমি শিকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে চান তিনি৷ ভিগা বলেন, ‘‘এটা মোটেই আইসল্যান্ডের ঐতিহ্য নয়৷ নরওয়েজিয়ানরা এটা শুরু করেছিল৷ আমাদের ঐতিহ্য ছিল পাতাকপি চাষ, তিমি শিকার নয়৷’’

তিমি ধরার কোম্পানির মালিক ক্রিস্টিয়ান লফটসন এমন সমালোচনাকে অর্থহীন মনে করেন৷ কিশোর বয়সেই তিনি বাবার সঙ্গে তিমির উপর হার্পুন নিক্ষেপ করে তার মাংস খেতেন৷ লফটসন বলেন, ‘‘তিমির মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু৷ এটাই একমাত্র হরমোনবিহীন মাংস, সেই গ্যারান্টি দিতে পারি৷ কিন্তু ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা নিষিদ্ধ৷ সেই মনোভাব আমাদের এখানেও এলে আইসল্যান্ড আর কয়েক বছরের মধ্যে স্বাধীন রাষ্ট্র থাকবে না৷ কারণ, এই অ্যাক্টিভিস্টরা মাছ ধরাও বন্ধ করতে চায়, সবকিছুর বিরুদ্ধেই তারা প্রতিবাদ করে৷’’

সবকিছু নয়, লুপ্তপ্রায় ফিন হোয়েল প্রজাতির সুরক্ষার জন্য রেইকইয়াভিকে সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে৷ জনমত সমীক্ষা অনুযায়ী আইসল্যান্ডে আরো বেশি মানুষ তিমি শিকারের বিরোধী হয়ে উঠছেন৷

সরকার চাইলে এই শিকার যে কোনো সময়ে বন্ধ করতে পারে৷ তার বদলে তিমি শিকার কোম্পানিকে বছরে ১৯১টি ফিন হোয়েল মারার সরকারি অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ বিক্ষোভকারীদের অন্যতম ভালগেডুর আর্নাডোটির এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের অর্থমন্ত্রীর চাচা তিমি শিকার কোম্পানির নির্বাহী প্রধান৷ তাতেও যদি দুর্নীতির গন্ধ না পাওয়া যায়, কীসে পাওয়া যাবে? কিন্তু সংসদে অন্য দলও রয়েছে, যারা তিমি শিকারের বিরোধী৷ এই শিকার দ্রুত বন্ধ হবে বলে আশা রাখি৷’’

তিমি শিকার কেন্দ্রে বিশাল ফিন হোয়েলের শরীরের আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই৷ এখনো পর্যন্ত সেই মাংস শুধু জাপানে রপ্তানি করা হয়৷ তিমি শিকারি লফটসন ব্যবসার নতুন এক আইডিয়া খুঁজে পেয়েছেন৷ তিনি শরীরে আয়রনের অভাব মেটাতে ওষুধ তৈরি করতে চান৷ লফটসন বলেন, ‘‘আমরা মাংস শীতল করে শুটকি তৈরির পরিকল্পনা করছি৷ এই প্রক্রিয়ায় যে প্রায় ৩০ শতাংশ মাংস অবশিষ্ট থাকে, সেগুলিকে গুঁড়া করে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজে লাগানো হবে৷’’

এমন আইডিয়ার কথা শুনে মেগান অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই প্রাণী এতরকম হুমকির মুখে রয়েছে, যা দূর করতে আমাদের অনেক সময় লাগবে৷ তিমি শিকার অবিলম্বে বন্ধ করা সম্ভব৷ এই শিল্প অত্যন্ত অর্থহীন ও ক্ষতিকর৷’’

কমপক্ষে মিংক হোয়েলের শিকার সম্প্রতি বন্ধ হয়েছে৷ তিমি শিকার বন্ধ করার ক্ষেত্রে আইসল্যান্ডের পরিবেশ সংরক্ষণকারীদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বটে৷

মিশায়েল আল্টেনহেনে/এসবি