1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডের খোঁজ

৮ নভেম্বর ২০১৯

ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের আগে অনুপ্রবেশকারী বিতর্ক আরো তীব্র হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রীর হাতে পাঁচ হাজার নেতার একটি তালিকাও রয়েছে বলে জানা গেছে, যেখান থেকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3ShZz
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

কেন্দ্র থেকে এরইমধ্যে অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা পাঠানো শুরু হয়েছে যাতে তারা কমিটিতে ঠাঁই না পায়৷ তবে সব জেলায় এখনও তালিকা যায়নি৷ কাউন্সিলের আগেই তা পৌছে যাবে যাবে বলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে৷ কিন্তু তৃণমূলে এই তালিকা নিয়ে নানা সন্দেহ এবং ধোঁয়াশা আছে৷

ঝালকাঠির রাজাপুর-নলছিটি এলাকার তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং কেন্দ্রীয় সহ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগে অনেক এমপিই আছেন বহিরাগত, অনুপ্রশেকারী৷ আমার এলাকায় যিনি আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছেন তিনি জাতীয় পার্টি ও বিএনপি ঘুরে এখন আওয়ামী লীগের এমপি৷ তিনি তার অনুসারীদের দিয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটি করেছেন৷ তাই কমিটিতে এখন প্রকৃত আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্র শিবির ও জাতীয় পার্টির লোক বেশি৷ তার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আছে৷ এখন তাকে রেখে দল থেকে অনুপ্রবেশকারী ও বহিরাগত দূর করা কীভাবে সম্ভব?’’

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান বলেন, ‘‘হাইব্রিড এবং অনুপ্রবেশকারী দুইটি আলাদা বিষয়৷ অনুপ্রবেশকারী বা বহিরাগতরা হলো যারা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ আর হাইব্রিড হলো যারা আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে ব্যাপক সুবিধা নিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন৷ এই হাইব্রিড আওয়ামী লীগ দলের ভেতরেও অনেক আছে৷ কিন্তু তাদের নিয়ে কথা হচ্ছে না৷ আবার যারা নতুন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন তাদের মধ্যেও ভালো মানুষ আছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘কেউ সুবিধাবাদী মানসিকতা থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন৷ কেউ হয়তো বাধ্য হয়েছেন৷ আবার কেউ কৌশলে দলে ঢুকে পড়েছেন৷ আর নেতৃত্বের কোন্দলে কোনো কোনো নেতা দল ভারী করতে বহিরাগতদের দলে নিয়েছেন৷’’

আমার এলাকার সাংসদ জাতীয় পার্টি, বিএনপি ঘুরে এখন আওয়ামী লীগের এমপি: মনিরুজ্জামান মনির

স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি থেকে অনেকেই আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ তাদের বড় একটি অংশ চাপের মুখে এবং মামলা থেকে বাঁচতে দল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে এসেছেন৷ তারা এখন বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যেই আলাদা গ্রুপ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছেন৷ আওয়ামী লীগের যেসব নেতা তাদের যোগদানে সহায়তা করেছেন তারাই তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন৷

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইউবুর রহমান শাহ বলেন, ‘‘অনেকেই ফুল দিয়ে, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে যোগ দিয়েছেন৷ এমপি সাহেব, মন্ত্রী সাহেব তাদের সাদরে নিয়েছেন৷ তারা ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দলে এসেছেন৷ ভোটের রাজনীতিতে তাদের গ্রহণ করা হয়েছে৷ এখনতো তারা সুবিধা চাইবেনই৷’’

তিনি বলেন, ‘‘এটা শুধু আমার উপজেলা নয় সারাদেশের চিত্র৷ আমি মনে করি, তখন আমরা কেন নিয়েছি, কারা নিয়েছেন সেই প্রশ্ন করা দরকার৷’’

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে এই অনুপ্রবেশকারী হিসেব করা হচ্ছে ২০০৮ সালের পর থেকে৷ গত ১০-১১ বছরে যারা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটিতে ঢুকেছে তাদের নিয়ে কথা হচ্ছে৷

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশকারী শব্দটি আওয়ামী লীগ ব্যবহার করছে না৷ নানা কারণে এটা নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচিত একটি শব্দ৷ আর তার কারণেই আমরা দলের মধ্যে একটা সার্ভে করেছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে৷ গত ১০ বছরে যারা আওয়ামী লীগে এসেছেন তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে ওই সার্ভে থেকে৷ এই তালিকায় যাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধিতা, যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগসহ নানা অভিযোগ আছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷ তারাই হলো অনুপ্রবেশকারী৷ তারা যাতে কমিটিতে না থাকতে পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ আর তাদের তালিকা প্রকাশ করে আমরা বলে দেব যে তারা আমাদের দলের কেউ নয়৷’’

পুরো তালিকা শেষ করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে: খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগে নতুন যোগ দিলেই তিনি অনুপ্রবেশকারী নন৷ যিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ও চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছেন, সুবিধা আদায়ে আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করছেন তিনিই বহিরাগত বা অনুপ্রবেশকারী৷’’

প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকা তালিকায় নেতার সংখ্যা পাঁচ হাজারের মত বলে জানা গেছে৷ এরইমধ্যে তাদের দেড় হাজারকে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও স্বাধীনতা বিরোধিতাসহ আরো গুরুতর অভিযোগ আছে৷ খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা তালিকা ধরে কাজ করছি৷ পুরো তালিকা শেষ করতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে৷’’

দলের শীর্ষ পর্যায়ে অনুপ্রবেশকারী আছে কীনা তাও দেখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যাদের হাত ধরে অনুপ্রবেশকারীরা দলে ঢুকেছে সেটা পরের বিষয়, এখন আমরাতো অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরি করে ফেলেছি৷ সেটা নিয়েই কাজ করছি৷’’

প্রসঙ্গত, আগামী ২১ ও ২২ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে৷