1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মান পুনরেকত্রীকরণ দিবস

ভোল্ফগাং ডিক/এসি৩ অক্টোবর ২০১৩

দুই জার্মানি এক হওয়ার ২৮ বছর পরও পূর্ব আর পশ্চিমের মানুষের মধ্যে দ্বিধা, সন্দেহের ‘বার্লিন প্রাকার' কিন্তু রয়েই গিয়েছে৷ পুবের মানুষ আর পশ্চিমের মানুষেরা নিজেদের একই জার্মান জাতি হিসেবে দেখতে শেখেনি আজও৷

https://p.dw.com/p/19suY
ছবি: Imago

বার্লিন প্রাকার খাড়া ছিল ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত অধিকৃত এলাকা থেকে যে ‘জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র' বা জিডিআর নামধারী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির সৃষ্টি হয়, তার বাসিন্দারা বার্লিন প্রাকার তথা ‘লৌহ যবনিকার' আড়ালে একরকম বন্দিই ছিল৷

১৯৮৯ সালে সীমানা খুলে যাওয়ার পর সাবেক পূর্ব জার্মানির হাজার হাজার বাসিন্দা পশ্চিমে পাড়ি দেন৷ তাঁরা চেয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ পেতে, যথেচ্ছ যাওয়া-আসা করতে, জিডিআর-এ যে সব ভোগ্যপণ্য পাওয়া যেত না, সেগুলো একবার কিনতে৷ যার ফলে জিডিআর-এর মানুষদের সেই সুপরিচিত সেলেটরঙা জুতো, কৃত্রিম চামড়ার জ্যাকেট আর প্যারাশুটের কাপড় থেকে তৈরি জগিং স্যুট কিছুদিনের মধ্যেই উধাও হলো৷ মাথার চুলের ফ্যাশন পাল্টে গেল৷ তথাকথিত ‘‘অসি'', মানে পুবের মানুষ, আর ‘‘ওয়েসি'', মানে পশ্চিমের মানুষদের মধ্যে যাবতীয় ফারাক যেন মুছে গেল৷ অন্তত চেহারায়৷

প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস

যা পড়ে রইল, তা হলো এক ধরনের নতুন বৈরিতা এবং নাক কুঁচকোনো৷ পুবের জার্মানরা আজও পশ্চিমের জার্মানদের ‘‘উদ্ধত, অর্থসর্বস্ব, আমলাতন্ত্রী, কৃত্রিম'' বলে ভাবে – আলেন্সবাখ জনমত সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরিপে যেমন প্রকাশ পেয়েছে৷ ২০১২ সালের জরিপটিতে দেখা যায় যে, পুবের মানুষদের পশ্চিমের মানুষদের সম্পর্কে যত পূর্বনিহিত ধারণা থাকে এবং আছে, পশ্চিমের মানুষদের পুবের মানুষদের সম্পর্কে কিন্তু তা নয়৷

ফরসা জনমত সমীক্ষা প্রতিষ্ঠানের জরিপে এমনকি ধরা পড়েছে যে, পূর্ব আর পশ্চিমের জার্মানরা আজও নিজেদের একই দেশ, একই জাতি হিসেবে ভাবতে পারেন না৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের মানুষরা নাকি আজও নিজেদের ‘‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক'' বলে বোধ করেন৷ পুব এলাকার জীবনযাত্রার মান তাদের কাছে বৈষম্যমূলক বলে মনে হয়৷ পূর্বাঞ্চলের রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, অবকাঠামোর আধুনিকীকরণ করে সর্বাধুনিক পর্যায়ে আনা হয়েছে বটে, কিন্তু সেখানকার বেতন-পারিশ্রমিকের মান আজও পশ্চিমের চেয়ে ২০ শতাংশ কম৷ অবসরভাতাও পশ্চিমের চেয়ে দশ শতাংশ কম৷

অর্থনীতিবিদরা বলেন, এই বৈষম্যের একটি মূল কারণ হলো, পুবে যে সব সংস্থা কারখানা খুলেছে এবং ব্যবসা ফেঁদেছে, তারা সবই পশ্চিমের বড় কোম্পানিগুলিকে রসদ কিংবা পার্টস সরবরাহ করে থাকে৷ পুবের সে সব সংস্থার মুখ্য কার্যালয় আবার হয় পশ্চিমে৷ আবার পশ্চিমের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, সেখানকার মানুষজনও তথাকথিত ‘‘অসি'' বা পুবের মানুষদের সম্পর্কে নানা ধরনের অপ্রীতিকর ধারণা পোষণ করে থাকেন৷

এঁরাও কম যান না

‘‘ওয়েসি''-দের মতে ‘‘অসি''-রা সর্বদাই অসন্তুষ্ট, অতৃপ্ত; তাদের সন্দেহ বাতিক, তাদের সব কিছুতেই ভয়৷ পশ্চিমের জার্মানদের মাত্র ৪৩ শতাংশ মনে করেন পুবের মানুষরা কাজ করতে ইচ্ছুক কিংবা কাজের বিভিন্ন পরিবেশ ও শর্তের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে প্রস্তুত৷ ‘‘সংহতি অনুদান'' নাম দিয়ে জার্মানির সব মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা হয় পূর্বাঞ্চলের পুনর্নির্মাণের জন্য৷ পশ্চিমের অধিকাংশ মানুষ সেই ‘‘সংহতি অনুদান'' যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খতম করে দেওয়ার পক্ষে৷ তাদের অনেকেই এখনো খেয়াল করে উঠতে পারেননি যে, এই অনুদান পুবের মানুষদেরও দিতে হয়৷

সমাজতত্ত্ববিদদের মতে ‘‘অসি'' আর ‘‘ওয়েসি''-দের মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যথেষ্ট সম্পর্ক, যথেষ্ট যোগাযোগ গড়ে ওঠেনি৷ এছাড়া একটি ভৌগোলিক সত্য হলো, জার্মানির পশ্চিমাঞ্চল জার্মানির পূর্বাঞ্চলের চেয়ে আকারে চারগুণ বেশি৷ কাজেই পারস্পরিক চেনাজানাটা অংশত একটা দূরত্বের সমস্যা হতে পারে৷ কিন্তু বিগত কয়েক বছরে সেই ‘‘দূরত্ব'' ক্রমেই কমে এসেছে৷

তাছাড়া তথাকথিত ‘‘মাওয়ারফাল'' বা বার্লিন প্রাকারের পতনের পর একটা গোটা প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে, যারা অসি-ওয়িসে ভেদাভেদ সম্পর্কে জানে হয়ত – কিন্তু পরোয়া করে না৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য