1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদিবাসীদের ভাষা কি আধিপত্যের শিকার?

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাংলাদেশে আদিবাসীদের ভাষা বাংলাভাষার আধিপত্যের শিকার কী না তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ মহান ভাষা আন্দোলন ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য আন্দোলন৷ কিন্তু সেই চেতনার বিকাশ হচ্ছে না বলে অভিযোগ গবেষক ও আদিবাসীদের৷

https://p.dw.com/p/4Nkq4
BdTD | Bangladesch | Die Monipuri-Gemeinde von Mirjajangal Monipuri Rajbari
ছবি: Md Rafayat Haque Khan/ZUMA Wire/imago images

তার মনে করেন, একই প্রক্রিয়ায় বাংলা নিজেও এখানে ইরেজি আধিপত্যের শিকার৷

বাংলাদেশে কমবেশি ৫১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আছে৷ তাদের ভাষা আছে ৪৫টি৷ তার মধ্যে ১৪টি ভাষা বিলুপ্তির পথে বলে চিহ্নিত করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট৷৷ এর মধ্যে মহাবিপন্ন হলো রেমিংটচা৷ এই ভাষায় মাত্র ছয় জন লোক এখন কথা বলেন৷ আদিবাসীদের ভাষার গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান,"এই ভাষায় যে ছয়জন কথা বলেন তাদের সর্ব কনিষ্ঠজনের বয়স ৫৬ বছর৷ এই ছয়জন মারা গেলে ভাষাটি হারিয়ে যাবে৷ এর কোনো লিখিত রূপ নাই৷ আবার যে ছয়জন আদিবাসী এই ভাষায় কথা বলেন তারা একই পরিবার বা একই এলাকায় থাকেন না৷”

শুধুমাত্র রেমিংটচা ভাষা নয়৷ এর সঙ্গে মহা বিপদাপন্ন যে আরো ১৩টি ভাষা আছে সেইসব ভাষায় কথা বলা আদিবাসীর সংখ্যাও কমছে৷ এই ১৪টি ভাষায় কেনোটিতে সর্বোচ্চ দুই হাজার আদিবসী কথা বলেন৷ কিন্তু কোনোটিরই বর্ণমালা বা লিখিত রূপ নাই৷

মাত্র পাঁচটি আদিবাসী ভাষায় টেক্সটবুক আছে৷ তাও আবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত৷  সরকারি উদ্যোগে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদ্রি এই পাঁচটি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক করা হয়েছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত৷ মথুরা ত্রিপুরা বলেন,"ফলে এটা আসলে পরবর্তী শিক্ষায় আর কাজে লাগে না৷আমাকে তাই বাংলা ইরেজিসহ ছয়টি ভাষা শিখতে হয়েছে৷”

বাংলাদেশে এখন সর্বোচ্চ ২০টি আদিবাসী ভাষার বর্ণমালা ও লিখিত রূপ আছে৷ বাকিগুলো ওইসব জনগোষ্ঠীর মুখে আছে৷ ফলে সেগুলোও বর্ণমালা ছাড়া টিকবে না, হারিয়ে যাবে৷

মথুরা ত্রিপুরা বলেন, "এখানে সরকারের দায়িত্ব আছে৷ কিছু কাজ সরকারের উদ্যোগে হলেও তা সামান্যই৷ কিন্তু যাদের ভাষা তাদেরও দায়িত্ব আছে৷ ভাষার চর্চা, ওই ভাষায় লেখালেখি বা সাহিত্য চর্চা না করলে তো ভাষা টিকবে না৷”

তার মতে, "যে ভাষায় যত কম লোক কথা বলেন সেই ভাষা তত বিপন্ন৷ সার্বিকভাবে এই ভাষাগুলো বাংলার আধিপত্যের শিকার৷ আবার ওই আদিবাসীদের মধ্যে যাদের ভাষায় বেশি লোক কথা বলেন তাদের আধিপত্যের শিকার অন্য ক্ষুদ্র ভাষা গোষ্ঠী৷ এর অর্থনৈতিক দিকও আছে৷ চাকরি পেতে ব্যবসা করতে যে ভাষার গুরুত্ব বেশি সেই ভাষা অন্য ভাষাকে দুর্বল করে দেয়৷”

বান্দরবান জেলা পরিষদের সদস্য এবং আদিবাসী কবি ও গবেষক সিং ইয়ং ম্রো বলেন,"কিছু ভাষা আছে যেগুলো আসলে টিকিয়ে রাখার আর কোনো সুযোগ নাই৷ ওই ভাষার বর্ণমালাও নাই আবার লোকও খুবই কম৷ ফলে তারা হারিয়ে যওয়া সময়ের ব্যাপার৷ কিছু ভাষা আছে যে ভাষায় কথা বলার লোক মোটামুটি আছে৷ কিন্তু এর বর্ণমালা তৈরি করতে গিয়ে সংকট হচ্ছে৷ কারণ তারা একমত হতে পরছেন না৷ যেমন খুমি ভাষা৷ এধরনের ভাষাও হারিয়ে যাবে৷”

তার কথা,"চর্চা রাখতে হবে৷ ওই ভাষায় লেখাপড়ার সুযোগ না থাকলেও সাহিত্য, গল্প, কবিতাসহ আরও চর্চার ক্ষেত্র আছে৷ সেটা করতে হবে৷ তা না হলে ভাষা টিকবে না৷ যেমন আমরা ম্রো ভাষায় সাহিত্য চর্চা করছি৷ নিজেরাই পড়ালেখার বই ছাপিয়েছি৷ কম্পিউটারে ফন্ট তৈরি করেছি৷ আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখন নিজের ভাষার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে৷  তবে সরকারের উদ্যোগও আরো প্রয়োজন৷ যেমন আমরা বান্দরবান জেলা পরিষদের নিয়ম করেছি এখানে কোনো চাকরির আবেদন করলে নিজের মাতৃভাষার জন্য ১০ নাম্বার রেখেছি,” জানান সিং ইয়ং ম্রো৷

‘এই ভাষায় যে ছয়জন কথা বলেন তাদের সর্ব কনিষ্ঠজনের বয়স ৫৬ বছর’

তিনি বলেন," বাংলা, ইরেজি না জানলে চাকরি পাওয়া যায়না৷ ফলে আদিবাসী ভাষার গুরুত্ব অনেক কম৷ সেই বিবেচনায় বাংলাও এখন ইরেজির কাছে অবহেলার শিকার৷”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সুমন সজ্জাদ আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করছেন অনেক দিন ধরে৷ তিনি বলেন, "আমার কাছে মনে হয়েছে আদিবাসীদের ভাষা বাংলা ভাষার আধিপত্যের শিকার হয়েছে৷ আর তাদের ভাষার চর্চা কমেছে এবং বর্ণমালা সময়ের সঙ্গে আপডেট করার যে বিষয় রয়েছে তা তারা করেনি৷ ভাষার ধাপগুলো যেভাবে পেরোতে হয় তারা তা করছে না৷ ফলে অনেক ভাষাই এখন বিপদাপন্ন এবং হারিয়ে যাওয়ার পথে৷”

তার কথা,"বাংলা একাডেমি তো শুধু বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জন্য কাজ করে৷ এখানেও আদিবাসী ভাষা ও সাহিত্যের কোনো জায়গা নেই৷”

তিনি বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ভাষার মর্যাদা নিয়ে কাজ করলে আদিবাসীদের ভাষা অবহেলিত থাকার কথা নয়৷

তিনি মনে করেন,"প্রত্যেক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে আদের ভাষার চর্চা রাখা যেমন জরুরি৷ তেমনি সরকারকেও উদ্যোগী হতে হবে৷”

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক রুনেল চাকমা বলেন,"আমরা তিনটি নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সাংস্কৃতি নিয়ে কাজ করি৷ চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা৷ এর বাইরে আমাদের কোনো কাজ নেই৷”

আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ বলেন,"আমরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণসহ এর চর্চা ও বিকাশে একটি প্রকল্প নিয়েছি৷ এখন জনবল ও অবকাঠামোর কাজ চলছে৷ ওই ভাষাগুলোর সংকট নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে৷আমরা অবশ্যই কাজ করব৷”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান