1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আদেশের চাপে ‘বিপর্যস্ত’ কোভিড চিকিৎসকরা

৩১ মে ২০২০

সুরক্ষা সামগ্রীর সংকট অনেকটা কাটলেও কোভিড চিকিৎসকরা এখন নানা ধরনের প্রশাসনিক চাপে আছেন৷ বিশেষ করে তাদের আইসোলেশনের নিয়ম মানতে চাইছে না কোনো কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷

https://p.dw.com/p/3d4FA
করোনা চিকিৎসা
ছবি: bdnews24

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নীতিমালার বাইরে গিয়ে তারা নতুন নতুন নিয়ম চাপিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী একজন চিকিৎসক সাত দিন কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার পর ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকবেন৷ এরপর সাত দিন তিনি পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে আবার দায়িত্বে ফিরে যাবেন৷ এরমধ্যে তিনি কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা হবে৷

কিন্তু সর্বশেষ ৩০ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এক আদেশে আইসোলেশন বাতিল করে৷ তারা জানিয়ে দেয় কোভিড-১৯ পজেটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসলে চিকিৎসক কিংবা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আইসোলেশনে যেতে হবে না৷ কেউ গিয়ে থাকলে তাকে অনুপস্থিত বলে ধরা হবে৷

অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে পাঠানো এই আদেশে তারা বলছে, কেবল কোভিড আক্রান্ত হলে হাসপাতালে আইসোলশনের সুবিধা পাবেন চিকিৎসকরা৷ তাও ১০ দিন, ১৪ দিন নয়৷ আর পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রীও দেয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়৷ এনিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচেছ৷ 

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী

এনিয়ে বক্তব্য জানার জন্য মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষকে পাওয় যায়নি৷ তবে চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক মোস্তফা খালেদ আহমেদ জানান, ‘‘অধ্যক্ষ আসলে ভুল বার্তা দিয়েছেন৷ তিনি অধিদপ্তরের নির্দেশনা বুঝতে পারেননি৷ আশা করি তিনি তার আদেশ সংশোধন করবেন৷’’

এর বাইরেও নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপতালের করোনার সেবা দেয়া চিকিৎসকরা তাদের হোটেলের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্য হোটেল বুক করায় পরিচালকসহ চারজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে৷ এর আগে মাস্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলায় দুইজন চিকিৎসককে ওএসডি করা হয়েছে৷ অভিযোগ আছে দুগ্ধপোষ্য শিশুর মা চিকিৎসককেও ডিউটি পালনে বাধ্য করা হচ্ছে৷ কোভিড চিকিৎসকরা দায়িত্ব পালনের সময় নিয়ম অনুযায়ী বাসায় যান না৷ নির্ধারিত হোটেল বা আবাসস্থলে থাকেন৷

বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ এর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী জানান, ‘‘কুয়েত মৈত্রী হাসাপতালের চিকিৎসকদের অন্যায়ভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়৷ তাদের মধ্যে একজন কোভিড রোগীর চিকিৎসা শেষে নিয়ম অনুযায়ী আইসোলেশনে ছিলেন৷ আইসোলেশনে থাকার কারণেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷ আরেকজন নারী চিকিৎসক দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকায় তিনি ছুটি চান৷ আর আরেকজন দুই মাস আগেই পদত্যাগ করেন৷ কিন্তু নিয়ম নীতি না মেনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’ 

তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘অধিদপ্তর নিয়ম করেই খালাস৷ কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইসোলেশন নীতি মানছে না অনেক হাসপাতাল৷ তারা তাদের ইচ্ছেমত নীতিমালা জারি করছে৷ এতে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীরা বাড়তি চাপে আছেন৷ তারা এমনিতেই মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করছেন৷ আর এই বাড়তি চাপ তাদের আরো বিপর্যস্ত করে তুলছে৷’’

কয়েকজন কোভিড চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা যায়, আইসোলেশনের নীতি নিয়ে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে সমস্যা তেমন হচ্ছে না৷ বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে সমস্যা হচ্ছে৷ তাদের অনেককেই আইসোলেশন সুবিধা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে বা দেয়া হচ্ছে না৷ তাদের বলা হচ্ছে, ‘‘আক্রান্ত না হলে আবার কিসের আইসোলেশন৷’’ অন্যদিকে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালগুলো তাদের নিজেদের মর্জি মাফিক চলছে৷ পিপিই নিয়েও আছে সংকট৷

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৯৪০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন ১২ জন৷ বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ডাক্তার আছেন ৩০ হাজার৷ আর সবমিলিয়ে রেজিষ্টার্ড চিকিৎসক আছেন এক লাখের মতো৷ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং কোভিড -১৯ বিষয়ক মিডিয়া সেলের প্রধান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘চিকিৎসক কম থাকায় সরকারি হাসপাতালে কোথাও কোথাও আইসোলেশ নীতি পুরো মানা সম্ভব হচ্ছে না৷ তবে সেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় হতে পারে৷ কিন্তু সাধারণভাবে নীতি মানতে হবে৷’’

ডা. নিরুপম দাস

বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের (বিডিএফ) প্রধান ডা. নিরুপম দাস জানান, ‘‘অনেক জায়গা থেকেই আমরা কোভিড চিকিৎসকদের আইসোলেশন নীতি না মানার অভিযোগ পাচ্ছি৷ উপসর্গ না থাকলে আইসোলেশন নিয়ে নানা বাহানা করা হচ্ছে৷ আর কোভিড চিকিৎসকদের সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলায়  নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় সবাই মুখ বন্ধ করে আছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা হলেন কোভিডের সুপার স্প্রেডার৷ এখন চিকিৎসক সংকট বলে যদি নীতি অনুসরণ না করা হয় তাহলে পরিস্থিতি খারাপ হবে৷ তারাতো নানা প্রশাসনিক আদেশে এমনিতেই এখন বিপর্যস্ত৷ উপরন্তু তারাই হতে পারেন করোনা ছাড়ানোর বড় কেন্দ্র৷’’

ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ যে আদেশ দিয়েছেন তা আইনের বাইরে৷ তিনিতো আইনের বাইরে কাজ করতে পারেন না৷ তার জানা উচিত আমাদের দেশে এখন ২৩ ভাগ কোভিড আক্রান্তের কোনো উপসর্গ নেই৷

‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে এরইমধ্যে বিশ্বে চারজন কোভিড চিকিৎসক মানসিক চাপের মুখে আত্মহত্যা করেছেন৷ তাই আমাদের চিকিৎসকদের যতদূর সম্ভব চাপ মুক্ত রাখতে হবে,’’ বলেন এই চিকিৎসক নেতা৷