1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আফগানিস্তানে একটি প্রাসাদের পুনঃসংস্কার করছেন মেয়েরা

১৪ জুন ২০১৭

চূর্ণবিচূর্ণ দেয়াল আর ছোট বড় গর্ত, তবুও শেলের আঘাতে একেবারে মিশে যায়নি প্রাসাদটি৷ কঙ্কাল হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে৷ পার্লামেন্ট ভবন হিসেবে তৈরি হয়েছিল কাবুলের দারুল আমান প্রাসাদ৷ যেটাকে পুরোনো রূপে আনতে কাজ করছেন তরুণীরা৷

https://p.dw.com/p/2ehCL
ছবি: DW/S. Petersmann

প্রায় চার দশকের যুদ্ধ ধ্বংস করে দিয়েছে নব্যধ্রুপদী এই স্থাপনাকে৷ ‘আমরা পারি'- এই কথাগুলো তিনতলা দালানের মাচায় বড় করে লেখা৷ প্রতিদিন যখন ওয়াঝমা কুররাম কাজে আসেন, তাঁর চোখে পড়ে এটি৷ গেলো এক বছর ধরে ধ্বসে পড়া ভবনটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন স্থপতি বা প্রকৌশলীরা, যাদের এক চতুর্থাংশ নারী৷ প্রাসাদটির পুনর্নির্মাণ কাজে সিকি ভাগ নারীকে রাখতে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির নির্দেশ ছিল৷ প্রাসাদের চার দেয়ালের ভেতর কাজ করতে তাই তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না কুররামদের৷ সমস্যা যা হচ্ছে তা কাজে আসা যাওয়ার সময়, রক্ষণশীল আফগানদের হাতে ৷এমনিতেই দেশটিতে স্বাধীন পেশায় মেয়েদের সংখ্যা খুব নগন্য, কারিগরি খাতে তো একেবারেই বিরল৷ তাই আসতে যেতে অনেক কটূক্তি শুনতে হয় কুররামকে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমাদের সমাজটাই এমন৷ এভাবেই বাঁচতে হয়৷ ওরা চায় আমি যেন উত্তর দেই৷ বিবাদে জড়াই৷ কিন্তু আমি এড়িয়ে যাই৷ এটাই ওদের শাস্তি৷’’ দারুল আমান প্যালেসের পুনর্নির্মাণ কাজটি একজন পুরোদস্তুর নির্মাণ প্রকৌশলী কুররামের প্রথম কাজ৷ ‘‘আমরা যা ধ্বংস করেছি তার সংস্কার আমাদেরই করতে হবে৷ নতুন প্রজন্ম পুরোনো প্রজন্মের ভুল শোধরাবে৷ আর এই ভবনটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য৷ এর সংরক্ষণ করতেই হবে৷'' দিন নেই রাত নেই, কাজ চলছে৷ ওভারটাইম নিয়েও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই৷ হাতুরি বেলচা নিয়ে বাইরে কয়েক ডজন শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন, জড়ো করছে খুলে পড়া পলেস্তারা৷

‘শান্তির ঠিকানা'

আফগানিস্তানের সংস্কারপন্থি বাদশাহ আমানুল্লাহ খান ১৯২০ সালে দারুল আমান প্রাসাদ, যার অর্থ ‘শান্তির ঠিকানা', নির্মাণ করেন৷ কাবুলের পশ্চিমদিকে ভবনটি নির্মাণের জন্য ওয়াল্টার হার্টেনের নেতৃত্বে একদল জার্মান স্থপতি নকশা তৈরি করেছিলেন৷ ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর আমানুল্লাহ চেয়েছিলেন দেশটিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে৷ ভবনটি আফগানিস্তানের সংসদ ভবন হিসেবে ব্যবহারের কথা ছিল৷ কিন্তু একদল চরমপন্থি ধার্মিকের উত্থানে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন তিনি৷ ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি তখন থেকেই এক বিরামহীন যুদ্ধের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে৷

আফগানিস্তানে এমন একটি দিনও যায় না যেদিন কোথাও বোমা ফাটেনি৷ গাড়ি বোমা, ট্রাক বোমা অথবা আত্মঘাতী বোমা হামলা৷ এত সব ধ্বংসলীলার মাঝেও এমন একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের পুনঃসংস্কার? তাই বলে একেবারে নিরাশ হয়ে ঘরে বসে থাকতে চান না কুররাম৷

‘‘আমাদের আশাবাদী হতে হবে৷ আমি নতুন প্রজন্মকে বিশ্বাস করি৷''

নির্মাণ প্রকৌশলী কুররাম
নির্মাণ প্রকৌশলী কুররামছবি: DW/S. Petersmann

অনিশ্চিত ভবিষ্যত

যে আশা নিয়ে কুররামরাদিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তার সঙ্গে বাস্তবতার ফারাকটা অনেক৷ দেশটিতে চলমান দ্বন্দ্বের কোন সমাধান আপাতত নেই৷ দেশের ৬০ ভাগেরও কম অঞ্চল সরকারের নিয়ন্ত্রণে, ৩৪টি প্রদেশের ৩১টিতেই যুদ্ধ চলছে৷ প্রায় ১৫ লাখ মানুষ গৃহহারা৷ তালেবান, আল কায়দা, ইসলামিক স্টেটসহ অনেকগুলো জঙ্গিগোষ্ঠী দুর্বিষহ করে তুলেছে সাধারণ মানুষের জীবন৷ দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে৷

এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ঘানি এই প্যালেসটিকে একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করেছেন৷ দু'বছর পর আফগানিস্তান তার স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করবে৷ তার মধ্যেই এই পুনঃসংস্কার কাজ শেষ করতে চান তিনি৷ যদিও এখনো পুরো অর্থ যোগাড় হয়নি৷ ২০০ মিলিয়ন ইউরোর মধ্যে ২০ মিলিয়ন এখন পর্যন্ত বরাদ্দ দিয়েছে সরকার৷

বুলেটের আঘাতে জর্জরিত ছাদের ওপর দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়েছিলেন প্রকল্পটির প্রধান স্থপতি মাসুমা দেলিজাম৷ মরচে ধরা দণ্ডে পতপত করে উড়ছে আফগানিস্তানের পতাকা৷ একটা গোলাপী প্লাস্টিক ব্যাগ বাতাসে এদিক ওদিক উড়ছে৷ অন্যপ্রান্তে নতুন সংসদ ভবনের তামার গম্বুজটিতে ঠিকরে পড়ছে সূর্যের আলো৷ প্রতিবেশী ভারতের অর্থে তৈরি এটি৷

‘‘এখানে দাঁড়ালে খুব ভালো লাগে৷'' বলছিলেন দেলিজাম৷ ইরানের শরণার্থী ক্যাম্পে বড় হয়েছেন ২৮ বছর বয়সি এই নারী৷ দেশে ফিরেছেন ২০০৪ সালে৷ চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তাঁর৷ ‘‘একদিন এই পথ দিয়ে আমি আমার সন্তান আর তার বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটবো৷ আর বলব, এই দারুল আমান তার বাবা-মা তৈরি করেছে৷''

সান্ড্রা পেটার্সমান/জেডএ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য