আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...
দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত কোনো গানকে রাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে জাতীয় সংগীত বলা হয়৷ বিশ্বের প্রতিটি দেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে আছে সেই দেশের সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর গৌরবগাঁথা৷ আমাদের জাতীয় সংগীতেরও আছে বর্ণাঢ্য অধ্যায়৷
ইতিহাসের পথ ধরে
এক ডাক হরকরার কণ্ঠে ‘আমি কোথায় পাবো তারে‘ গানটি শুনেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ ফকির লালন সাঁইয়ের ভাবশিষ্য গগন হরকরার গানটি মনে ধরে তাঁর৷ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে ‘আমার সোনার বাংলা‘সহ বাউল সুরে কিছু গান লেখেন কবি৷ সে বছর ৭ আগস্ট বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতার টাউনহলে গানটি প্রথম গাওয়া হয়৷ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল কুষ্টিয়ার আম্রকাননে বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেয়া হয়।
জাতীয় সংগীতের আদবকেতা
১৯৭৮ সালে জাতীয় সংগীত বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। বিধিমালা মেনে সঠিক উচ্চারণে ও শুদ্ধ সুরে গাইতে হবে জাতীয় সংগীত৷ গাওয়ার সময় দেখাতে হবে যথাযথ সম্মান৷ জাতীয় সংগীত বাজানো ও জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময়, সমবেত সকলকে জাতীয় পতাকার দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হবে। জাতীয় সংগীত গাইতে হবে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে। এর পুরোটা সব অনুষ্ঠানে গাওয়ার নিয়ম নেই। জাতীয় দিবসে অনুষ্ঠানের শুরু ও শেষের সঙ্গে সঙ্গে পূর্ণ সংগীত বাজাতে হবে।
অবিনশ্বর কবিগুরু
বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একমাত্র কবি, যিনি বাংলাদেশ আর ভারত-দুটি দেশের জাতীয় সংগীত রচনা করেছেন৷ ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘জনগণমন অধিনায়ক‘-গানটি মূলত ব্রহ্মসঙ্গীত৷ ১৯৩৭ সালের ২৮ অক্টোবর এটিকে জাতীয় স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস৷ স্বাধীনতার পর গানের প্রথম স্তবকটি ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের সম্মাননা পায়। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতের সুর করেছেন রবীন্দ্রনাথ৷ তাঁর অনুপ্রেরণায় ‘শ্রীলঙ্কা মাতা’ গানটি লিখেছেন আনন্দ সামারাকুন৷
মানব পতাকা
২০১৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে ২৭ হাজার ১১৭ জন। সবার হাতে একখণ্ড বাংলাদেশ। চারদিকে সবুজ আর মাঝে লাল। লাল-সবুজ মিলেমিশে রূপ নিল একটি জাতীয় পতাকায়। এদিন বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা তৈরি করা হয়৷ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি স্বীকৃতি দেয় গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস৷ ঠিক পরের বছর ভারতের চেন্নাইতে ৪৩ হাজার ৮৩০ জন মিলে তৈরি করে মানব পতাকা৷
মুখে মুখে জাতীয় কবি
জাতীয় কবির নাম বললে, উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলাম৷ কিন্তু সরকারের দলিলপত্রে জাতীয় কবি হিসেবে তাঁর নাম কোথাও নেই। জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় আয়োজনে তাঁকেই জাতীয় কবি হিসেবে অভিহিত করা হয়৷ তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, জাতীয় আর্কাইভ, নজরুল ইনস্টিটিউট ও বাংলা একাডেমির কোথাও মেলেনি সরকারি কোনো প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো দলিল৷
বিশ্বের প্রাচীন জাতীয় সংগীত
ইতিহাস বলছে, নেদারল্যান্ডের জাতীয় সংগীতই বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাতীয় সংগীত৷ ‘ভিলহেলমাস ফান নাসাওয়ে’ শিরোনামের এই গানটি ‘ভিলহেলমাস’ নামেই বেশি পরিচিত৷ যার অর্থ ‘উইলিয়াম’৷ ১৫৭২ সাল থেকে ডাচদের বীরত্বের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে এটি৷ ১৯৩২ সাল থেকে এই গানটিকে দেশটির জাতীয় সংগীতের মর্যাদা দেয়া হয়৷ এর আগে এটি ডাচ জাগরণের প্রতীক৷
বৈচিত্র্যময় জাতীয় সংগীত
উরুগুয়ের জাতীয় সংগীত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ৷ এটিতে স্তবক সংখ্যা ১৫৮৷ কলম্বিয়া, সেনেগাল, বেলজিয়াম, ইকুয়েডর-এই দেশগুলোর জাতীয় সংগীত রচয়িতা তাঁদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অথবা রাষ্ট্রপতি৷ দুনিয়ার সবচেয়ে পুরনো শব্দের সন্ধান পাওয়া যায় জাপানের জাতীয় সংগীতে৷ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের জাতীয় সংগীতে নেই কোনো শব্দ৷ শুধু আছে তূর্যনিনাদ৷