1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরজি করে ময়নাতদন্ত ঘিরে সংশয়ে সিবিআই

২৬ নভেম্বর ২০২৪

আরজি কর হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত ঘিরে প্রশ্ন। তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা আরো একগুচ্ছ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চাইল।

https://p.dw.com/p/4nQZ9
আর জি কর হাসপাতালে অভয়া মঞ্চ
আরজি কর হাসপাতালের সামনেছবি: Subrata Goswami/DW

গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। এক তরুণী চিকিৎসককে হাসপাতালের সেমিনার রুমে তার দেহ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার তদন্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট। কীভাবে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তথ্য উঠে আসতে পারে এই রিপোর্টে। স্পষ্ট হতে পারে অপরাধের নেপথ্য কাহিনি। কিন্তু এই ময়নাতদন্ত ঘিরেই সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মনে।

সিবিআই-এর রিপোর্ট তলব

তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর সেদিন বিকেলে আর জি কর হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। এক ঘন্টা ২০ মিনিট ধরে চলে এই ময়নাতদন্ত। এখান থেকে সংগ্রহ করা নানা নমুনা পাঠানো হয় ফরেনসিক পরীক্ষায়। কিন্তু ময়নাতদন্ত যদি ঠিকভাবে না হয়, তাহলে সংগ্রহ করা নমুনা বা অন্য প্রমাণ নষ্ট হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রীয় সংস্থার।

সূত্রের খবর, সিবিআই ময়নাতদন্তের গ্রহণযোগ্যতা খতিয়ে দেখতে একই ধরনের প্রক্রিয়ার বিশদ তথ্য চেয়েছে আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। ৯ আগস্ট চিকিৎসক ছাড়াও আরো কয়েকজনের ময়নাতদন্ত ওই হাসপাতালে হয়েছিল।

চিকিৎসকের আগে ও পরে পাঁচটি করে মৃতদেহের রিপোর্ট তদন্তকারীরা চেয়ে পাঠিয়েছেন। এই রিপোর্টগুলির সঙ্গে চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হবে, কোথাও কোনো অসঙ্গতি আছে কি না। শুধু আরজি কর নয়, অন্য হাসপাতালের ময়নাতদন্তের নমুনা রিপোর্ট চেয়েছে সিবিআই।

তদন্তে নানা প্রশ্ন

তরুণী চিকিৎসকের হত্যাকারী হিসেবে চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের নাম উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয়ের ছবি সেই ভোররাতে আরজি করের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। এই সঞ্জয় হত্যাকারী কি না, তা নিয়ে শুধু আন্দোলনকারী নয়, বিভিন্ন জনের মনে প্রশ্ন রয়েছে।

চিকিৎসক হত্যার ক্ষেত্রে সাক্ষী যেহেতু কেউ নেই, তাই বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ অপরাধী চিহ্নিতকরণের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্ত ঘিরে সংশয় সে কারণেই তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, ময়নাতদন্ত করার সময় যে ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে, তার মান খারাপ বলে সূত্রের খবর। এর ফলে দেহের কোন অংশে আঘাত রয়েছে, সেটা অস্পষ্ট ছবির জন্য বোঝা সমস্যার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

মৃত চিকিৎসকের শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, প্রমাণ মিলেছে যৌন নির্যাতনের। এই সংক্রান্ত সব নমুনা পাঠানো হয়েছিল ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য। তারপরও একাধিক বিষয় ধন্দ থেকে যাচ্ছে।

অপরাধ প্রমাণ হবে?

ময়নাতদন্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ, এমন নানা বিষয়ে অজস্র প্রশ্ন তাই ঘোরাফেরা করছে আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে সিনিয়র চিকিৎসক, নাগরিক সমাজ, সাবেক পুলিশকর্তা, সকলের মনে উঁকি দিচ্ছে নানা প্রশ্ন।

অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমাদের অনেকগুলো প্রশ্ন আছে। তার উত্তর এখনো আমরা পাইনি। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভটা কী? মোটিভটা বুঝতে পারলে কারা কারা জড়িত থাকার সম্ভাবনা আছে, সেটা বুঝতে পারতাম। তার থেকেও আমাদের কাছে এটা গুরুত্বপূর্ণ যে একটা বৃহত্তর অপরাধচক্র এখানে কাজ করছিল প্রশাসনিক এবং রাজনৈতিকভাবে, তার সঙ্গে এই খুন ও ধর্ষণের কী সম্পর্ক? এসব উন্মোচন করা তদন্তকারী সংস্থার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত। সেগুলো তারা এবার করুন।"

এখনো বিচার পাননি কলকাতার হাসপাতালে অন্ধ হয়ে যাওয়া রোগীরা

সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, "খুন এবং ধর্ষণের ময়নাতদন্ত সূর্যাস্তের পর হয় না প্রথমত সেটা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তৃতীয়ত, ময়না তদন্তে নির্যাতিতার শরীরের উপরের দিকে যা যা আঘাতের চিহ্ন আছে তার উল্লেখ করা আছে। কিন্তু শরীরের নীচের দিকে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল কিনা সেটা উল্লেখ করা নেই। এই ত্রুটিগুলো গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছিল।

আমার ধারণা সেই জন্যই অন্য পোস্টমর্টেম গুলিতে এরকমই কিছু হয়েছে, নাকি ওগুলো ঠিক করে করা হয়েছে, এটা জানার জন্য এই রিপোর্টগুলি চাওয়া হয়েছে।"

এতে কি তদন্ত গতি পাবে? তিনি বলেন, "সম্প্রতি আরজিকর কাণ্ডে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে দেখা যাচ্ছে যে ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত করতো না, ডোম ময়নাতদন্ত করে যা বলছে, সেটাই ডাক্তাররা লিখছে। ডোমেরা হয়তো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কিন্তু ডাক্তারদের মতো অতটা শিক্ষিত তো নয়। এগুলোর জন্য হয়তো সিবিআই এই রিপোর্টগুলো চাইছে। তবে তাতে তদন্ত গতি পাবে বলে আমার মনে হয় না!"

ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের সদস্য ডাঃ অর্ণব তালুকদার ডিডাব্লিউকে বলেন, "নির্যাতিতার আগের পাঁচটা ময়নাতদন্ত বা তার পরের পাঁচটা ময়নাতদন্তের সঙ্গে তুলনা করে ব্যাপারটা কতটা কার্যকর হবে, সেটা আমরা বলতে পারব না। এই যে ঘটনা ঘটেছে এটা আর পাঁচটা ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই তুলনীয় নয়, এক সারিতে ফেলা যায় না। আগের পাঁচটা বা পরের পাঁচটা ময়নাতদন্ত।

ময়নাতদন্ত রিপোর্টে অনেকগুলো ফাঁকফোকর রয়ে গেছে: সুবর্ণ গোস্বামী

 যদি ঠিকঠাক হয়ে থাকেও তাতে তো প্রমাণ হয় না যে নির্যাতিতার ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ঠিকঠাক হয়েছে। এটা একটা স্পেশাল কেস, যেখানে প্রশাসনের তরফ থেকে তথ্য ও লোপাট করা হয়েছে, তাই কেসকে স্পেশাল ভাবে দেখা উচিত, আর পাঁচটার কেসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা ঠিক হবে না।"

চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী ডিডাব্লিউকে বলেন, "ময়নাতদন্তের রিপোর্টে অনেকগুলো ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। শরীরের সামনের অংশে, ওপর দিক থেকে শোয়ানো আছে, এরকম অবস্থায় অনেক আঘাতের চিহ্ন আছে। কিন্তু পিঠের দিকে চোট আঘাত আছে কিনা তার কোনও উল্লেখ ছিল না। নির্যাতিতার শরীরে কোন এক্সরে হয়নি। ময়নাতদন্তে লেখা আছে 'নো ফ্র্যাকচার'। এক্সরে না করে এটা কীভাবে বলা সম্ভব? ময়নাতদন্তে কোন ইমেজিং এর কথা লেখা নেই। "

তার বক্তব্য, "আগে পরের দশটা রিপোর্ট যদি দেখা যায়, তাহলে বোঝা যাবে, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট আরজি করে কি এভাবেই ময়নাতদন্ত করে! সব ক্ষেত্রেই এই অবহেলা করা হয়? নাকি এই ফাঁকফোকরগুলো শুধুমাত্র এই বিশেষ কেসটিতে? যদি দেখা যায় এই অবহেলা শুধুমাত্র নির্যাতিতার ক্ষেত্রে হয়েছে তাহলে একরকম মানে পাওয়া যাবে! বোঝা যাবে যে উপরের তলা থেকে নির্দেশ এটার পেছনে দায়ী। যদি সামগ্রিকভাবেই এই চিত্র থাকে পোস্টমর্টেমের, তাহলে বুঝতে হবে পুরোটাই সিস্টেমের অবহেলা।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷