1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আসছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধের আইন

৫ মে ২০১৭

বাংলাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ আইন’ নামে একটি নতুন আইনের কাজ চলছে৷ খসড়ায় অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও এক কোটি টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2cTSe
Pakistan Bangladesh Bürgerkrieg
ছবি: AP

অপরাধ সংঘটনে সহায়তাকারী বা প্ররোচনাদানকারীরও শাস্তির বিধান আছে খসড়ায়৷ তবে সেই শাস্তি হবে আদালত যেভাবে নির্ধারণ করবে সেভাবে৷ আর খসড়ায় কোনো বিষয়গুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি হিসেবে অপরাধ বলে গণ্য হবে তা-ও বলা হয়েছে৷ আইন কমিশনের প্রস্তাবিত খসড়া আইনটিতে মোট ১৫ টি ধারা আছে৷

বৃহস্পতিবার রাতে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইন প্রণয়নের একটি প্রস্তাব বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গ্রহণ করে৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ওই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে সংসদকে জানান, ‘‘গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকার ইতিমধ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘এই আইনের একটি খসড়া ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়ে গেছে৷ ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকরণ অপরাধ আইন’ নামে এটা অনতিবিলম্বে মন্ত্রিপরিষদে উঠবে এবং ইনশাল্লাহ এই সংসদেই তা পাস হবে৷’’

আইন মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা এ বিষয়ে কাজ করেছে৷ তারাই এই খসড়াটি প্রস্তুত করেছে৷ মন্ত্রণালয়ের খসড়ার অনুলিপি পাওয়া যায়নি৷ তবে এর আগে আইন কমিশন এ সংক্রান্ত একটি খসড়া প্রস্তুত করেছিল৷ তারা সেই খসড়ার অনুলিপি রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রণালয়ে সরবরাহ করে৷ এই খসড়ার অনুলিপি পাওয়া গেছে৷ 

আইন কমিশনের করা আইনের খসড়া ডয়চে ভেলের হাতে এসেছে৷ আইনের চার ধারায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপরাধ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ:

৪ (১) নিম্নবর্ণিত বিষয়াবলী, তা যে কোনো মাধ্যম বা প্রকারেই হোক না কেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকরণ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে:

(ক) ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ তারিখ হতে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী ঘটনাসমূহ অস্বীকার;

(খ) ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তারিখ হতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাসমূহ অস্বীকার;

(গ) মুক্তিযুদ্ধের কোন ঘটনাবলীকে হেয় প্রতিপন্ন করবার উদ্দেশ্যে দেশি বা বিদেশি গণমাধ্যম বা প্রচারমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান বা প্রচার;

(ঘ) সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ তারিখ হতে ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রচারিত বা প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-সংক্রান্ত দলিলসমূহ এবং ওই সময়ের যে কোন ধরণের প্রকাশনার অপব্যাখ্যা বা অবমূল্যায়ন;

(ঙ) পাঠ্যপুস্তকসহ যে কোন মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে অসত্য, অর্ধসত্য, ভ্রান্ত বা বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন;

(চ) মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা বা জনগণকে হত্যা, ধর্ষণ ও তাঁদের সহায়সম্পত্তি লুটতরাজ বা তাহাতে অগ্নি সংযোগ-সংক্রান্ত যে কোন তথ্যের অবনমন;

(ছ) মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত কোন ঘটনা, তথ্য বা উপাত্ত ব্যঙ্গাত্মকভাবে উপস্থাপন;

(জ) মুক্তিযুদ্ধকে জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভিন্ন অন্য কোন রূপে অবনমন বা অবমাননা;

(ঝ) ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দখলদার সশস্ত্রবাহিনী, তাদের বিভিন্ন সহায়ক বাহিনী যেমন: রাজাকার, আল বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটি ইত্যাদির বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমের পক্ষে কোন ধরণের যুক্তি প্রদর্শন বা প্রচারণা এবং

(ঞ) মুক্তিযুদ্ধে সংঘঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, শান্তিবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধকে সমর্থন বা ওইরূপ অপরাধের বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা বা এ বিষয়ে কোন ধরণের অপপ্রচার৷

আইনের খসড়ায় দণ্ড বা শাস্তির ব্যাপারে বলা হয়েছে – ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি ৪ ধারায় বর্ণিত কোনো অপরাধ করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ৫ বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন এবং ইহার অতিরিক্ত সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷’’

খসড়া আইনের ভূমিকায় বলা হয়েছে, ‘‘যেসব মহান আদর্শ বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদের প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল, সে সকল আদর্শ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি৷ জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে সকল ঐতিহাসিক ঘটনার অস্বীকার বা বিকৃতির প্রতিরোধ করা আবশ্যক এবং সেই উদ্দেশ্যে বিধান প্রণয়ন করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়৷’’

‘এই ধরণের আইন পৃথিবীর আরো অনেক দেশে আছে’

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এই আইনটির জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি৷ এই আইনটি হলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জাতিকে বিভক্ত করার যে ষড়যন্ত্র করছে, তা বন্ধ হবে৷ তারা তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অংশ ব্যবহার করছে, কিছু অংশ বিকৃত করে সুবিধা নিচ্ছে৷ এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন৷ এই আইনটি তা ঊহৃ করবে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ হয়েছেন, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন এ রকম আরো অনেক প্রতিষ্ঠিত সত্য আছে যা অস্বীকার বা বিকৃত করা দেশের অবমাননা, রাষ্ট্রদ্রোহ৷ এই ধরণের আইন পৃথিবীর আরো অনেক দেশে আছে৷ জার্মানিতে কি কেউ বলতে পারবেন হলোকস্ট হয় নাই, গণহত্যা হয় নাই, নাৎসিরা ভালো?’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘অ্যাকাডেমিক ডিবেট থাকতে পারে৷ কিন্তু তাই বলে মুক্তিযুদ্ধের মূল বিষয় এবং প্রতিষ্ঠিত সত্য তো বিকৃত করা যাবে না৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...