কাকে ভোট দেবেন অভিবাসীরা?
৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭সবুজ দলের নেতা চেম ও্যজদেমির যখন ১৯৯৪ সালে প্রথমবার জার্মান সংসদে আসন গ্রহণ করেন, তখন এক ‘খাঁটি' জার্মান দর্শক নাকি টেলিফোন করে জানতে চেয়েছিলেন: ‘ঐ তুর্কিটা ওখানে কী করছে?' আজ জার্মান সংসদের ৩৭ জন সদস্য ও জার্মানির প্রতি দশজন ভোটারের মধ্যে একজনের অভিবাসী পটভূমি আছে৷ বলতে কি, ও্যজদেমির যে শুধু সবুজ দলের যুগ্ম সভাপতি ও যুগ্ম চ্যান্সেলর পদপ্রার্থী, শুধু তাই নয়, জার্মান সংসদে তাঁর মতো তুর্কি বংশোদ্ভূত আরো দশজন সদস্য আছেন৷
প্রতি দশজন জার্মান ভোটারের মধ্যে একজন অভিবাসী অথবা অভিবাসী বংশোদ্ভূত৷ সে তুলনায় জার্মান মিডিয়া অনেক দেরিতে এই ভোটার গোষ্ঠীর দিকে নজর দিতে শুরু করেছে৷ গোষ্ঠী অবশ্য একটি নয়, একাধিক; তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোষ্ঠী দু'টি হলো তথাকথিত ‘স্পেটআউসসিডলার' বা ‘বিলম্বে প্রত্যাবর্তনকারী' – এঁরা হলেন প্রধানত সাবেক সোভিয়েত গণরাজ্যগুলি থেকে আসা জাতিগত জার্মান, যাঁরা যুদ্ধের অব্যবহিত পরে বা অনেক পরে জার্মানিতে এসেছেন৷ এঁদের বাবা-মা অথবা পূর্বপুরুষরা জার্মান হলেও, তাঁদের জন্ম জার্মানিতে নয়৷ ২০১৬ সালের মাইক্রোসেন্সাস অনুযায়ী বর্তমানে জার্মানিতে ‘বিলম্বে প্রত্যাবর্তনকারীদের' সংখ্যা প্রায় ৩১ লাখ৷
জার্মানিতে দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী জার্মান গোষ্ঠী হলেন তুর্কিরা: আগামী ২৪শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে ৭ লাখ ৩০ হাজার তুর্কি জার্মানদের ভোটাধিকার থাকবে, বলে ফেডারাল পরিসংখ্যান দপ্তরের অনুমান৷
ডাইনে, নাকি বাঁয়ে?
অভিবাসী পটভূমির ভোটাররা নাকি বামঘেঁষা দলগুলিকেই পছন্দ করে থাকেন, বলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা৷ তুর্কি জার্মানদেরক্ষেত্রে সে কথা সত্য হলেও, রুশি জার্মানদের ক্ষেত্রে নয়৷ এর মূল কারণ হলো বিভিন্ন অভিবাসী গোষ্ঠীগুলির অতীত ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা এবং তাদের দলগত স্বার্থ৷ ইউক্রেন থেকে যে জার্মান বংশোদ্ভূত ২০ বছর আগে জার্মানিতে ফিরেছেন, তাঁর সঙ্গে দক্ষিণ তুরস্ক থেকে আসা কোনো অভিবাসী বা পঞ্চাশের দশকে ইটালি থেকে আসা ‘অতিথি শ্রমিকের' স্বার্থ বা রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের ফারাক থাকারই কথা৷ ভোটের সময় সেই পছন্দ-অপছন্দগুলোই বড় হয়ে দেখা দেয়: ‘বিলম্বে প্রত্যাবর্তনকারী' জার্মানরা প্রধানত রক্ষণশীল বা দক্ষিণপন্থি দলগুলিকে ভোট দিয়ে থাকেন; তুর্কি জার্মানদের ভোট যায় মধ্যমপন্থি, বামঘেঁষা দলগুলির দিকে৷
রুশি জার্মান ভোট
সাবেক সোভিয়েত গণরাজ্য থেকে আসা জার্মান বংশোদ্ভূতদের জন্য জার্মান নাগরিকত্ব পাওয়া অপেক্ষাকৃত সহজ ও দ্রুত : সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর তৎকালীন চ্যান্সেলর হেলমুট কোল এই ব্যবস্থা করেছিলেন; কাজেই রুশি জার্মান, কাজাখ জার্মান ইত্যাদিরা দীর্ঘকাল ধরে হেলমুট কোলের সিডিইউ দলকেই ভোট দিয়ে এসেছেন৷
পরিস্থিতি বদলায় ২০১৫ সালের উদ্বাস্তু সংকটের কারণে৷ দশ লাখের বেশি উদ্বাস্তুর আগমনে নিজেদের স্বার্থ বিপন্ন মনে করে রুশি জার্মানরা ঝোঁকেন অভিবাসন বিরোধী উগ্র দক্ষিণপন্থি এএফডি দলের দিকে৷ চলতি নির্বাচনি প্রচার অভিযানে এএফডি দল রুশ ভাষায় প্রচারপুস্তিকা বিলি করেছে৷ ইতিপূর্বে বিভিন্ন রাজ্য ও পৌর নির্বাচনে ‘জার্মানির জন্য বিকল্প' দলের আশাতিরিক্ত সাফল্যের পিছনে স্থানীয় রুশি জার্মানদের সমর্থন কাজ করেছে৷ ম্যার্কেলের সিডিইউ দল এখন ‘বিলম্বে প্রত্যাবর্তনকারীদের' অবসরভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে হারানো সমর্থন ফিরে পাবার চেষ্টা করছে৷
তুর্কি জার্মান ভোট
তুর্কি জার্মান ভোটারদের সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দলের সঙ্গে বহুদিনের সম্পর্ক, যার একটি কারণ সম্ভবত এই যে, তুর্কি জার্মানদের অনেকেই ষাটের দশকে ‘অতিথি শ্রমিক' হয়ে জার্মানিতে এসেছিলেন এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এসপিডি চিরকালই শ্রমিক দল বলে গণ্য হয়ে এসেছে – এছাড়া যে দলগুলি দ্বিবিধ নাগরিকত্ব ও অভিবাসীদের অধিকারসমূহের জন্য শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল, এসপিডি তাদের অন্যতম৷ একটি জরিপ অনুযায়ী তুর্কিদের প্রায় ৭০ শতাংশ এসপিডি-কে সমর্থন করে থাকেন – যা সামগ্রিক ভোটারদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ তুর্কি জার্মানদের মধ্যে সবুজদের প্রতি সমর্থনও লক্ষণীয়ভাবে বেশি৷
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ানের সাম্প্রতিক নীতি ও কার্যকলাপ জার্মান-তুর্কি সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি করেছে: শুধু তাই নয়, এর্দোয়ান তুর্কি জার্মান ভোটারদের সিডিইউ, এসপিডি ও সবুজ দলগুলিকে বয়কট করার পরামর্শ দিয়েছেন৷ অপরদিকে জার্মানির তুর্কি বংশোদ্ভূত রাজনীতিকরা তুর্কি জার্মানদের ভোট দিতে যেতে বলছেন, কেননা অভিবাসী ভোটের আরেকটি বিশেষ লক্ষণ হল এই যে, অভিবাসীদের ভোটার টার্নআউট সাধারণ ভোটারদের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ কম হয়ে থাকে৷
আন্দ্রেয়া গ্রুনাউ, মারা বিয়ারবাখ/এসি