1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউনূস-বাইডেন বৈঠক: মার্কিন সমর্থন কাজে লাগানোর পরামর্শ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মধ্যে বৈঠক হয়েছে৷ সেখানে পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা৷

https://p.dw.com/p/4l485
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশকে সহায়তার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনছবি: pressinform.gob.bd

এদিকে, এই বৈঠক নিয়ে ভারতের চিন্তার কিছু নেই বলে মনে করেন দেশটির একজন বিশ্লেষক৷

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আছেন৷ মঙ্গলবার বৈঠকটি সেখানেই হয়েছে৷ বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন, আলোচনা কী নিয়ে হয়েছে তার চেয়ে ‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ'-এ আরো বেশি কিছু প্রকাশ করেছেন জো বাইডেন৷ তারা মনে করছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন আদায় করেছেন৷ ফলে ইউনূস সরকারের এখনকার কাজ হলো, এই সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সব ধরনের সংস্কারে সহযোগিতা নেওয়া৷

‘বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বিস্মিত করেছে'

সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ‘‘ড. ইউনূস-বাইডেন বৈঠকের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আমাকে বিস্মিত করেছে৷ জড়িয়ে ধরা, গলায় হাত রাখা, এরকমটি সাধারণভাবে দেখা যায় না৷ এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অন্তর্বর্তী সরকার ও সংস্কারকে পুরো সমর্থন দিয়েছে তারা৷ এখন সরকারের দায়িত্ব হবে এই সমর্থন কাজে লাগিয়ে সংস্কারের কাজ করা৷''

তিনি বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা হয়েছে৷ আশা করি এখন এই সংকট নিরসনে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে৷ জিএসপি সুবিধা নিতে কাজ করতে হবে৷ অর্থনৈতিক সংস্কার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য কাজে লাগাতে হবে৷''

মো. শহীদুল হক মনে করছেন, ‘‘এখানে ভূরাজনীতির একটা ভারসাম্য হবে৷ ভারত আর এককভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না৷ যদিও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বাইডেন৷ কিন্তু বাইডেন বাংলাদেশের ব্যাপারে তার সমর্থন স্পষ্ট করেছেন৷ আর যদি কমলা হ্যারিস ক্ষমতায় আসেন তাহলে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে৷''

তবে বাংলাদেশকে সতর্ক থাকারও পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত৷ ‘‘মার্কিন স্বার্থের জায়গাগুলো বুঝতে হবে৷ সেইখানে বাংলাদেশের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে হবে,'' বলেন তিনি৷

অ্যামেরিকা ও ইউরোপ সমানভাবে ইউনূসের সঙ্গে আছেন: এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী

‘অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের এত সমর্থন বাংলাদেশ কখনো পায়নি'

আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘শুধু বাইডেন নয়, অন্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে ড. ইউনূসের যে বৈঠক হয়েছে তাতেও স্পষ্ট যে, সারা বিশ্বের সমর্থন আছে তার ও তার সরকারের প্রতি৷ এখন অ্যামেরিকা ও ইউরোপ সমানভাবে ইউনূসের সঙ্গে আছেন৷ সেটা কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগানো যায় সেটাই দেখার বিষয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘দেশের অর্থনীতিতে পোশাক খাতের একটা বড় অবদান আছে৷ যুক্তরাষ্ট্র একক দেশ হিসাবে আমাদের তৈরি পোশাকের বড় ক্রেতা৷ ইউরোপে আমাদের বড় বাজার৷ এই বাজারগুলোতে আমাদের অবস্থান আরো শক্ত করতে হবে৷ আর বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আছে৷''

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে৷ পোশাক খাত নিয়েও হচ্ছে৷ আঞ্চলিক রাজনীতিতেও সেটা আছে৷ তবে মার্কিন ও ইউরোপের এই সমর্থনে বাংলাদেশ সেটা কাটিয়ে উঠবে আশা করি৷''

সাবেক রাষ্ট্রদূত এস এম রাশেদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘‘অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের এত সমর্থন বাংলাদেশ কখনো পায়নি৷ জো বাইডেনের যে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ড. ইউনূসের সঙ্গে, তা অনবদ্য৷ এটা বলে দেয় তার এগিয়ে যাওয়ার পথে সব ধরনের সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র৷''

ইউনূস-মোদী প্রসঙ্গ

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন ড. ইউনূস৷ সেটি হয়নি৷ এটাকে রাশেদ আহমেদ চৌধুরী দেখছেন মোদীর হীনমন্যতা হিসাবে৷ তিনি বলেন, ‘‘মোদী সরকার পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ন্যাক্কারজনকভাবে সমর্থন দিয়েছিল৷ এখন আবার আশ্রয় দিয়েছে৷ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করলে এই বিষয়গুলো উঠতো ভেবেই হয়তো মোদী ইউনূসকে সাক্ষাতের সময় দেননি৷ আবার এও হতে পারে যে, ভারত এখনো চাইছে তার দাদাগিরি ধরে রাখতে৷ কিন্তু তাতে ভারত আর সফল হবে বলে মনে হয় না৷''

তবে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘‘ভারত এই বৈঠক না করার একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে৷ তারা বলেছে ড. ইউনূস যখন পৌঁছাবেন মোদী তখন চলে আসবেন৷ ফলে দুইজনের মধ্যে সাক্ষাতের সুযোগ নেই৷ তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকরের মধ্যে তো বৈঠক হয়েছে৷ আমার মনে হয় মোদী ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেননি৷ তবে এটাও ঠিক, তাদের মুখে এক কথা এবং অন্তরে আরেক৷''

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশ এবার হাইলাইটেড৷ ড. ইউনূস নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব৷ যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে৷ সেই কারণে কেউ হীনমন্যতায় ভুগলেও ভুগতে পারেন৷''

‘ভারতের চিন্তার কারণ নেই'

এদিকে, ভারতের ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত ডয়চে ভেলে বাংলার নতুনদিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়কে বলেছেন, ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে ভারতের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ বরং ভারত অত্যন্ত ইতিবাচক দিক থেকে বিষয়টি দেখছে বলেও মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘ড. ইউনূসের একটা আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে৷ যুক্তরাষ্ট্র তাকে সমর্থন করছে৷ তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে চিন্তিত ছিল বলে আগে জানিয়েছিল৷ ইউনূস ও বাইডেনের মধ্যে আলোচনায় সংস্কারের বিষয়টি ছিল৷ এটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক৷ ড. ইউনূস যদি ইতিবাচক সংস্কার করেন, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন করবে৷ তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে অর্থসাহায্য করতে পারে৷ বাংলাদেশ তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ এরপর যদি ড. ইউনূস অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে পারেন, সেদিকেও যুক্তরাষ্ট্রের নজর থাকবে বলে মনে হয়৷''