1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্টারনেট মৌলিক অধিকার: ভারতের আদালত

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
১০ জানুয়ারি ২০২০

পাঁচ মাস ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ। শুক্রবার সে বিষয়ে ঐতিহাসিক নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। জানানো হল, ইন্টারনেট পরিষেবা মানুষের মৌলিক অধিকার।

https://p.dw.com/p/3Vyox
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Mattoo

কাশ্মীর নিয়ে ঐতিহাসিক নির্দেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের বক্তব্য, ৫ মাস ধরে যে ভাবে কাশ্মীরেইন্টারনেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে, তা সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানের ১৯ নম্বর ধারায় যেখানে মৌলিক অধিকার এবং বাক স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, সেখানে ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকারের কথাও বলা হয়েছে। যে ভাবে এত দিন ধরে সরকার কাশ্মীরে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে, তা মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ। সর্বোচ্চ আদালত এর পাশাপাশি বলেছে, স্বাধীন ভারতে ১৪৪ ধারার অপব্যবহার করা উচিত নয়৷ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার লোকের আছে৷

গত বছর ৫ অগস্ট সংসদে দাঁড়িয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছিলেন কাশ্মীর থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া হবে। অর্থাৎ, এতদিন কাশ্মীর যে বিশেষ সুবিধা পেত, তা আর পাবে না। শুধু তাই নয়, জম্মু এবং কাশ্মীরকে ভেঙে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত রাজ্য তৈরির ঘোষণাও একই সঙ্গে করা হয়। এই ঘোষণার পরেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় কাশ্মীর উপত্যকায়। যার জেরে গোটা কাশ্মীর জুড়ে ১৪৪ ধারা ঘোষণা করে সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। সংবাদপত্র থেকে শুরু করে বিবিধ গণমাধ্যমের উপরেও আংশিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, উপত্যকার নিরাপত্তার কথা ভেবেই এই সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইন্টারনেটহীন কাশ্মীরে ফিরছে পর্যটক

মাঝে কেটে গিয়েছে ৫ মাস। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইন্টারনেট ফেরেনি কাশ্মীরে। সেখানকার মানুষ চরম অসুবিধায় বলে অভিযোগ। ব্যবসা বাণিজ্য থেকে হাসপাতাল পরিষেবা, বিঘ্ন ঘটছে সবেতেই। এমন পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। চার্লস ডিকেন্সের 'টেল অফ টু সিটিস' উদ্ধৃত করে ৩ বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন বলে, পরাধীন সময়ে ব্রিটিশ সরকার ১৪৪ ধারা ব্যবহার করে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দমন করার চেষ্টা করত। কিন্তু স্বাধীন দেশে সেই ধারার অপব্যবহার করা উচিত নয়। যে ভাবে ওই ধারা ব্যবহৃত হচ্ছে, তা ঠিক নয়। শুধু তাই নয়, সুপ্রিম কোর্টের আরও বক্তব্য, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার সকলের আছে। আন্দোলনের স্বাধীনতাও আছে। ১৪৪ ধারা দিয়ে, ইন্টারনেট বন্ধ করে তা দমন করা ঠিক নয়। বস্তুত, নিরাপত্তার কারণে পাঁচ মাস ধরে কাশ্মীরের ৩ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেও আটক করে রেখেছে সরকার।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, এই মুহূর্তে কাশ্মীরের জরুরি ক্ষেত্রগুলিতে ইন্টারনেট ফিরিয়ে আনতে হবে। বাকি ক্ষেত্রের জন্য প্রশাসনকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে সুপ্রিম কোর্টকে রিপোর্ট দিতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি কাশ্মীরবাসী। তবে সংশয়ও আছে। অনেকেই বলছেন, ইন্টারনেট ব্যবহার যদি মৌলিক অধিকার হয়, তাহলে সরকার ফের এক সপ্তাহ পর্যালোচনার সুযোগ পেল কেন?

কাশ্মীর নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এবং কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ডয়চে ভেলেকে অনুরাধা জানান, ''সংবিধানকে সামনে রেখে সুপ্রিম কোর্ট এ দিন যা নির্দেশ দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। তবে আমাদের যে মূল বক্তব্য ছিল, তার সুরাহা এখনও হয়নি। এক সপ্তাহ পর সরকারের পর্যালোচনা বিবেচনা করে আদালত কী রায় দেয়, তার দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি।''

সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো আমরা আমাদের বক্তব্য সর্বোচ্চ আদালতকেই জানিয়ে দেব।  

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো