1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইন্দো-জার্মান যৌথ উদ্যোগের ৫০ বছর

১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

গত ৫০ বছর ধরে ভারত ও জার্মানি যৌথ উদ্যোগে বহু ক্ষেত্রে কাজ করেছে৷ সেই হিসেবে ২০২৪ সাল ভারত এবং জার্মানির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং যৌথ উদ্যোগের ৫০তম বছর৷

https://p.dw.com/p/4o9ZH
নরেন্দ্র মোদী ও ওলাফ শলৎস
২০২৪ সাল ভারত এবং জার্মানির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং যৌথ উদ্যোগের ৫০তম বছরছবি: Christian Bruna/Getty Images

তাই এই বছর কৃষি, চিকিৎসা বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন স্তরে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে যাতে দুই দেশ যৌথভাবে কাজ করতে পারে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং জার্মানির চ্যান্সেলর আলোচনা করেছেনএই বিষয়ে৷

প্রাণী চিকিৎসাবিজ্ঞানের (ভেটেরিনারি) ক্ষেত্রে দুই দেশ যৌথ উদ্যোগে আগে কখনো কাজ করেনি৷ সে ব্যাপারে তাই কাজ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান উভয়ের সমন্বয়ে উন্নতি হয় শিক্ষা ব্যবস্থার৷ তাই সেই লক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় সহ ভারতের আরো দুটি প্রাণী চিকিৎসাবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় এবং জার্মানির তিনটি ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় একযোগে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেলগাছিয়া ক্যাম্পাসের কমিটি রুমে ভারত ও জার্মানি দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক বা এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গের প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাড়া অন্য দুটি ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় হল দক্ষিণ ভারতে তামিলনাড়ু ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি এবং উত্তর ভারতে পাঞ্জাবের গুরু অঙ্গদদেব ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি৷

দুই দেশেই কিছু কিছু একই ধরনের রোগ -জীবাণু আছে: জোয়ারদার

এই তিনটি ভারতীয় প্রাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জার্মানির লাইপজিশ ইউনিভার্সিটি, ফ্রাই ইউনিভার্সিটি এবং হানোফার

ইউনিভার্সিটি অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন একযোগে কাজ করবে৷ ছাত্র-শিক্ষক আদানপ্রদান, পাঠ্যসূচি পরিমার্জন, যৌথ গবেষণা, সেমিনার, কর্মশালা, বিশেষ প্রশিক্ষণ ইত্যাদি হল এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷

প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব

আমাদের দেশের জিডিপির চার শতাংশ প্রাণিসম্পদ থেকে আসে৷ মোট কৃষি সংক্রান্ত জিডিপির ২৫ শতাংশ প্রাণিসম্পদের অবদান৷ দেশের জিডিপির এক শতাংশ আসে মাছ চাষ থেকে৷ অর্থাৎ প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ দেশীয় অর্থনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে৷

দুধ উৎপাদনে ভারত এখন বিশ্বে প্রথম৷ দেশের গড় দুধ উৎপাদন বর্তমানে প্রায় ২২ কোটি টন৷ পাশাপাশি ডিম ও মাংস উৎপাদন মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বেড়েছে৷ প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১২ কোটি মুরগির ডিম, প্রায় ৯২ লক্ষ টন মাংস এবং ৩৩ হাজার টন উল উৎপাদিত হচ্ছে৷ অর্থাৎ দেশের এই বিপুল প্রাণিসম্পদের পুষ্টি, রোগ নিরাময়কে নিশ্চিত করতে প্রয়োজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ৷ তাই প্রাণিবিজ্ঞান সংক্রান্ত পঠনপাঠন ও গবেষণার উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে দেশে৷

পশ্চিমবঙ্গের বেলগাছিয়ায় প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে ১৯৯৫ সালে৷ এদেশের দ্বিতীয় প্রাণী চিকিৎসা সংক্রান্ত ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্থাপিত হয়েছে এই উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷

১৯৯০ সালে তামিলনাড়ু চেন্নাইতে প্রথম প্রাণীচিকিৎসা সংক্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়৷ বিভিন্ন রাজ্যে এখন ২৬টির মত ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷

দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে সুবিধাজনকভাবে ত্বরান্বিত করতে প্রাণিসম্পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এই অগ্রগতির নেপথ্যে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রাণী পালন অন্যতম শর্ত৷ সে জন্য দরকার প্রাণী উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ঝকঝকে, আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ৷ পঠনপাঠন এবং গবেষণায় বেশি গুরুত্ব দিলেই এমন ঝকঝকে প্রযুক্তিবিদ পাওয়া যাবে৷

তাই দুই দেশের অধ্যাপক, গবেষক, ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ কাজ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে৷

ভেটেরিনারিতে ইন্দো-জার্মান যৌথ উদ্যোগের গুরুত্ব

ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ৷ কৃষি এবং কৃষি সংক্রান্ত বিষয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণী চিকিৎসা বিজ্ঞান ও মৎস্য চাষ৷ গত ৫০ বছরে এই বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা হয়নি৷ কিন্তু এই বছর ভারত জার্মানির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০তম বছর বলে এই নতুন বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসছে৷

ইন্দো-জার্মান যৌথ উদ্যোগের ভারতীয় কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক সিদ্ধার্থ জোয়ারদার ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমাদেরই উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি ছিল৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জার্মানির লাইপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলছিল৷ আমরা গবেষণা এবং শিক্ষার প্রয়োজনে ফান্ডিং আরো কীভাবে পেতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা করেছি৷''

পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শ্যামসুন্দর দানার বক্তব্য, ‘‘আগামী জানুয়ারিতে ৩১ বছরে পা দেবে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয়৷ গত ৩০ বছরে এত বড় প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে নেওয়া হয়নি৷ এটা গর্বের ব্যাপার যে অন্য দুইটি ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথা পাঞ্জাব ও তামিলনাড়ুর ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় এখানে এসে মউ স্বাক্ষর করেছে৷ আমরাই এর কো-অর্ডিনেটর৷''

এই উদ্যোগের জার্মান কো-অর্ডিনেটর ও বিজ্ঞানী ড. আহমেদ আব এল ওহায়েদ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এই যৌথ উদ্যোগের ফোকাসের মূল ক্ষেত্রগুলির মধ্যে রয়েছে একাডেমিক বিনিময়, ক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া এবং যৌথ গবেষণা প্রকল্প৷ এই বোঝাপড়ার ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ছাত্র ও গবেষকদের সামনে সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে৷ আধুনিক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত পরিকাঠামো পাবেন তারা৷ এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা, ভারতীয় পশুচিকিৎসা শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা৷ একইসঙ্গে পশুচিকিৎসা বিজ্ঞানে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা৷''

বৃহত্তর স্বার্থে এই যৌথ উদ্যোগ কীভাবে কাজ করবে? অধ্যাপক শ্যামসুন্দর দানা ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এই মউ স্বাক্ষরের ফলে আমরা একসঙ্গে গবেষণা করতে পারব৷ রোগ প্রতিরোধের জন্য ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ রাখতে হবে৷ আমরা মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, পরিবেশ এই সমস্ত কিছুকে একসঙ্গে যদি স্টাডি করতে না পারি, তাহলে রোগ প্রতিরোধ করতে পারব না৷ জুনাটিক, ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাল ডিজিজ ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে আমরা দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে গবেষণা করব৷''

অধ্যাপক জোয়ারদার বলেন, ‘‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের 'এক স্বাস্থ্য ভাবনা' নিয়ে আমরা উদ্যোগ নেব অর্থাৎ কৃষি, প্রাণিসম্পদ এবং পরিবেশের স্বাস্থ্যের খেয়াল একই সঙ্গে রাখা হবে৷ দুই দেশেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই ধরনের রোগ -জীবাণু আছে৷ বিশেষ করে প্রাণী বাহিত মানুষের রোগের ক্ষেত্রে৷ এছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের যে সমস্যা চলছে, সেটা নিয়েও আমরা যৌথভাবে কাজ করব৷''

বাস্তবিকই এই মুহূর্তে সারা পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ৷ ডাক্তাররাও এ নিয়ে চিন্তিত৷ আমাদের দেশে ব্যাপক ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার কতটা ভয়ানক হতে পারে, সে নিয়ে অনেক দিনই চর্চা চলছিল৷ প্রথম সারির এই সমস্যা শুধু আমাদের দেশের নয়, সারা ইউরোপের সমস্যা, জার্মানির সমস্যা৷ এই বিষয়ে দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে গবেষণা করলে অনেক নতুন তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷ অধ্যাপক দানা বলেন, ‘‘জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি একটা ব্যাপারে প্রসিদ্ধ, সেটা হচ্ছে এম্বুলেটারি সুটকেস ব্যাগ৷ ফিল্ডে গিয়ে রোগ নির্ণয় করার জন্য যে সমস্ত কিট দরকার হয়, এই ব্যাগে থাকে৷ এই সমস্ত কিট দিয়ে ফিল্ডে রোগনির্ণয় করা হয়৷ এই সুবিধা আমরা ওদের থেকে নিতে চাই, যাতে চাষিদের বাড়ির দুয়ারে গিয়েই আমরা রোগনির্ণয় করতে পারি৷''

গবাদি পশুপাখিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ বা মাছের খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি অনেক সমস্যা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে রয়েছে৷ অসাধু ব্যবসায়ীদের এইসব কাজের ফলে রোগব্যাধি তৈরি হচ্ছে সাধারণ মানুষের শরীরে৷ বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নতুন দিগন্ত এনে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে৷ সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করা যেতে পারে ভেটেরিনারি এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে৷ এই নিয়ে দুই দেশের ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ওয়ার্কশপ করার পরিকল্পনা চলছে৷ বৃহত্তর মানবসমাজে বিশেষ করে চাষি ভাইদের কাছে যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পৌঁছে যায়, সে লক্ষ্য রয়েছে।

সেজন্য  আগামী মার্চ মাসে ভারত সরকার আয়োজিত ওয়ার্কশপে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আগামী দিনে অতিমারিকে যাতে আগেই চিহ্নিত করা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সেই ভাবে কাজে লাগানো নিয়ে আশাবাদী অধ্যাপক জোয়ারদার। প্রাণী বাহিত মানুষের রোগগুলির ক্ষেত্রে আগাম সর্তকতা যাতে নেওয়া যায় সেটা দেখা হবে।

অর্থাৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে একটা নয়া দিগন্ত খুলে যাবে। তিনি আশা করেন, আগামীদিনে প্রাণী সম্পদের ক্ষেত্রে আরো বিকাশ ঘটবে এই মউ চুক্তির ফলে অধ্যাপক বলেন, ‘‘ভেটেরিনারিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ভারত সরকার এটাকে আলাদা মন্ত্রকের হাতে তুলে দিয়েছে। আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্য অনেক বেশি, তাই রোগ-জীবাণুর নমুনাও অনেক বেশি। এবার জার্মান অধ্যাপক বা স্কলাররা এসব নিয়ে গবেষণা করবেন। নতুন কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে৷''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য