ইরানে ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’ প্রতিবাদের তিন মাস
গত সেপ্টেম্বরে মাহসা আমিনির মৃত্যু ইরানে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের সূচনা করেছিল৷ সেই প্রতিবাদ দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে দেশটির শাসকগোষ্ঠী৷ তবুও থামেনি প্রতিবাদ৷
বিপ্লবের প্রতীক
চুল হিজাবে ঠিকভাবে ঢাকা না হওয়ার অভিযোগে আমিনিকে ১৩ সেপ্টেম্বর আটক করেছিল ইরানের নীতি পুলিশ৷ এর কদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুর ঘোষণা আসে৷ তার আগে আমিনি হাসপাতালে কোমায় ছিলেন৷ আমিনির এই অস্বাভাবিক মৃত্যু গোটা ইরানে প্রতিবাদের সূচনা করে৷
‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’
আমিনির কুর্দি জন্মস্থান সাক্কাজে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবাদের শুরু হয়৷ নারীরা তাদের হিজাব খুলে বাতাসে উড়িয়ে ইরানি ভাষায় ‘‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’’ বলে শ্লোগান দিয়েছেন৷ ২৬ অক্টোবর আমিনির কবরস্থানে হাজির হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ৷ ছবিটি সেখানে তোলা৷
আয়াতুল্লাহদের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক বিদ্রোহ
আমিনির মৃত্যু ঐতিহাসিক এক আন্দোলনের শুরু করেছে৷ উৎপীড়নকারী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে কেঁপে উঠেছে গোটা ইরান৷ ছবিটি সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তেহরানে তোলা৷ শুধু নারীরা নয়, সব বয়সের, জাতের মানুষ এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন৷
হিজাব এবং ভয় ছাড়া
গত তিনমাসে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তায় হিজাব ছাড়া নারীর সংখ্যা বেড়েছে৷ ইরানের আইন অনুযায়ী, হিজাব ছাড়া বাইরে গেলে বেত্রাঘাত এবং কারাদণ্ড হতে পারে৷ কিন্তু নারীরা তাসত্ত্বেও সাহস দেখাচ্ছেন৷
শাসক গোষ্ঠীর সহিংস প্রতিরোধ
প্রতিবাদকারীদের দমনে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷ এজন্য পুলিশ এবং কুখ্যাত এক আধাসামরিক বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে৷ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসেব অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারশোর বেশি মানুষ, যাদের মধ্যে অনেক শিশু এবং তরুণ রয়েছে৷
নির্মম আক্রমণ
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্রতিবাদকারীদের নির্মমভাবে পেটানোর পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে৷ তেহরানের পুলিশ ভ্যানে আটক এই নারীর মতো ১৪ হাজার মানুষকে কারাবন্দি করেছে ইরানের শাসকগোষ্ঠী৷
চুল কেটে প্রতিবাদ
ইরানের শাসকগোষ্ঠীর পতনের দাবিতে প্যারিস থেকে সান ফ্রান্সিসকো অবধি সারা বিশ্বে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ৷ ইস্তাম্বুলে ইরানি কনস্যুলেটের সামনে এক নারী চুল কেটে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷
প্রতীকী সমর্থন
গত ১৩ ডিসেম্বর বার্লিনের ব্রান্ডেনবুর্গ গেটের উপর আলো ফেলে কুর্দি ভাষায় লেখা হয় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা!’৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন ইরানি নারীদের ‘হিরোস অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে৷
দুই বন্দিকে ফাঁসি
ইরানে সরকারবিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেয়া দুই প্রতিবাদকারী ব়্যাপার মোহসিন শেখারি এবং মজিদরেজা রাহনাভার্দকে ইতোমধ্যে মৃত্যদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ অন্তত ৩৮ জনকে কথিত ‘সৃষ্টিকর্তার বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরান৷ দেশটিতে শিশুদেরও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান রয়েছে৷