‘ইসলাম বিতর্ক’ বইয়ের লেখকের বিরুদ্ধে চার্জশিট
২২ অক্টোবর ২০১৬ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো লেখা আছে অভিযোগে অমর একুশে বইমেলা চলাকালে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী রাতে ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর স্টল থেকে ‘ইসলাম বিতর্ক' নামের বইটির সব কপি জব্দ করে পুলিশ৷ আটক করে বই-এর লেখক ও ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর মালিক শামসুজ্জোহা মানিক, ছাপাখানা শব্দকলি প্রিন্টার্সের মালিক তসলিম উদ্দিন কাজল ও ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর বিপণন শাখার প্রধান শামসুল আলমকে৷ তাদের বিরুদ্ধে তখন তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় মামলা করা হয়৷
এছাড়া ওই সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো লেখা আছে কি না তা অনুসন্ধানে ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর আরো পাঁচটি বইয়ের সব কপি জব্দ করা হয়৷ সেগুলো হলো, আর্যজন ও সিন্ধু সভ্যতা, জিহাদ: জবরদস্তিমূলক ধর্মান্তরকরণ, সাম্রাজ্যবাদ ও দাসত্বের উত্তরাধিকার, ইসলামের ভূমিকা ও সমাজ উন্নয়নের সমস্যা, ইসলামে নারীর অবস্থা এবং নারী ও ধর্ম৷
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাফর আলী বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এক মাস আগে আদালতে আইসিটি আইনের ৫৭(২) ধারায় চার্জশিট দিয়েছি৷ আদালত এখনো আমাদের ডাকেনি৷ চার্জশিটের ওপর শুনানি শেষে এই মামলার বিচার শুরু হবে বলে আশা করছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমরা তার লেখায়, বইয়ে মহানবী ও ধর্মীয় অবমাননার প্রমাণ পেয়েছি৷ বাকি দু'জন তার অপরাধের সহযোগী৷'
আসামিরা কে কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘শামসুজ্জোহা মানিক ছাড়া বাকি দু'জন জামিনে আছেন৷ মানিক জামিন পেয়েছেন কিনা আমার জানা নেই৷ আদালতে খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব৷''
শামসুজ্জোহা মানিকের মামলা দেখাশোনা করেন আখতারুজ্জামান আজাদ নামে একজন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মানিক এখনো জেলে আছেন৷ আমরা হাইকোর্ট থেকে জামিনের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু হয়নি৷ আবারো জামিনের চেষ্টা করবো৷ চার্জশিট হয়েছে বলে শুনেছি৷ আমরা আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব৷''
এদিকে, যে দু'জন জামিনে আছেন তাদের মধ্যে একজন শামসুল আলম ব-দ্বীপ প্রকাশন-এর মালিকের ছোট ভাই৷ তিনিই ছিলেন প্রকাশনীর বিপণন কর্মকর্তা৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি এবং প্রিন্টার্সের মালিক এক দেড় মাসের মধ্যে জামিন পেলেও ভাই এখনো জামিন পাননি৷ মামলাটির চার্জশিটও দিয়েছে৷ আসলে আমরা বইমেলার সময় হুমকি পেয়ে শাহবাগ থানায় জিডি করতে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু পুলিশ আমাদের উল্টো গ্রেপ্তার করে মামলা দেয়৷ জানিনা কবে এই মামলা থেকে মুক্তি পাব৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘পুলিশ ওই সময়ই প্রকাশনার অফিস সিলগালা করে দেয়, এখনো সিলগালা করা আছে৷''
প্রসঙ্গত, শামসুজ্জোহা মানিকের মুক্তির জন্য সম্প্রতি কিছু কর্মসূচি পালিত হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মুক্তির দাবিতে সেচ্চার কেউ কেউ৷ তাদেরই একজন শ্রাবণ প্রকাশনীর রবিন আহসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তাঁর মুক্তির জন্য কয়েকদিন আগেও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছি৷ তিনি সৃজনশীল প্রকাশ সমিতির সদস্য৷ তারা তাঁর মুক্তির জন্য তেমন কিছু করছেনা৷ এজন্য তাদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে৷ সরকারের সঙ্গে তার মুক্তির জন্য যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাইনি৷''
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে ৫৭(১) ধারায় অপরাধের ধরণ এবং ৫৭(২) ধারায় শাস্তির বিধান দেয়া আছে৷ ৫৭-এর ১ উপধারায় বলা হয়, ‘‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সমপ্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসত্ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ৷''
আইসিটি এক্টের ৫৭ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়, ‘‘কোনো ব্যক্তি উপধারা (১) এর অধীনে অপরাধ করিলে তিনি অনধিক চৌদ্দ বছর এবং ন্যূনতম সাত বত্সর কারাদণ্ডে এবং অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন৷''