ইয়েমেনে কি শেষপর্যন্ত প্রাণভিক্ষা পাবেন ভারতীয় নিমিশা
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪২০১৭ সালে দোষী সাব্যস্ত হন কেরালার নার্স ৩৬ বছরের নিমিশা প্রিয়া। অভিযোগ, ইয়েমেনে থাকাকালীন মাহাদি বলে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার আলাপ হয়। এই মাহাদির সঙ্গেই সানায় নিজের ক্লিনিক তৈরি করেন নিমাশা। কিন্তু এরপরেই মাহাদির সঙ্গে তার সমস্যা হতে শুরু করে এবং শেষপর্যন্ত মাহাদিকে হত্যা করে নিমিশা।
২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে মাহাদিকে হত্যা করেন নিমিশা। পরে গ্রেপ্তার হন। ২০১৮ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ইয়েমেনের আদালত এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। উচ্চ আদালতে আপিল করেন নিমিশা। তার বক্তব্য, মাহাদি তার উপর অত্যাচার চালাতেন। তার পাসপোর্ট পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ফলে আত্মরক্ষার তাগিদেই মাহাদিকে হত্যe করতে হয়েছিল। কিন্তু ইয়েমেনের সুপ্রিম কোর্টে সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়।
সোমবার ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি মৃত্যুদণ্ডে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছেন। ফলে এক মাসের মধ্যেই নিমিশার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা।
এই পরিস্থিতিতে নিমিশার প্রাণ বাঁচানোর একমাত্র উপায় 'ব্লাড মানি'। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী যাকে হত্যা করা হয়েছে, তার পরিবারের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে বা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে হত্যাকারীকে প্রাণভিক্ষা দিতে পারে। নিমিশার পরিবার এখন সেই চেষ্টাই শুরু করেছে।
মুশকিল হলো, গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইয়েমেন থেকে ভারত কূটনৈতিক মিশন তুলে নিয়েছে। ফলে সেখানে ভারতের কোনো প্রতিনিধি নেই। ভারতীয়দের ইয়েমেনে যেতেও দেওয়া হয় না। নিমাশার মা-কে ইয়েমেনে যাওয়ার জন্য ভারতীয় আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। আদালত প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়, তাকে ইয়েমেন পাঠানোর ব্যবস্থা করার জন্য। সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, নিমাশা এবং তার পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হবে। প্রয়োজনে ইয়েমেনের সরকারের সঙ্গেও কথা বলতে প্রস্তুত ভারত।
ইতিমধ্যেই প্রায় ২০ হাজার ডলার নিমাশার পরিবারকে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই টাকা দিয়ে নিমাশার আইনজীবী ঠিক করা হয়েছে। সেই আইনজীবী আরো ২০ হাজার ডলার চেয়েছেন মাহাদির পরিবারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার জন্য। নিমাশার পরিবার এই পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিকেই তাকিয়ে আছে।
২০০৮ সালে কেরালার বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনের হাসপাতালে নার্সের কাজ করতে যান। স্বামী এবং কন্যাকে নিয়ে সেখানে থাকতেন তিনি। গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০১৪ সালে তার স্বামী এবং কন্যা দেশে ফিরে আসেন। তারা আর ইয়েমেনে যেতে পারেননি কারণ, তাদের আর ভিসা দেওয়া হয়নি গৃহযুদ্ধের কারণে। ওই বছরই মাহাদির সঙ্গে যোগাযোগ হয় নিমিশার। দুজনে মিলে সানায় একটি ক্লিনিক তৈরি করেন। ইয়েমেনের আইন অনুযায়ী কোনো বিদেশি সেখানে ব্যবসা করতে পারবেন না। সে কারণেই মাহাদির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ক্লিনিক তৈরি করেন নিমিশা। অভিযোগ, এরপরেই মাহাদির সঙ্গে লড়াই শুরু হয় তার। মাহাদি তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করতেন বলে অভিযোগ। নিমিশার সমস্ত কাগজপত্র, এমনকি পাসপোর্টও কেড়ে নেন মাহাদি। এই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতেই ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে মাহাদিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন নিমিশা। এমনটাই জানিয়েছে তার পরিবার। এবং শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালে মাহাদিকে হত্যা করেন নিমিশা। মাহাদির পরিবার প্রাণভিক্ষা দিলে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি পাবেন নিমিশা। কিন্তু তাকে সাজা ভোগ করতে হবে।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)